
ইরান ও ইজরায়েল-মার্কিন জোটের যুদ্ধে বিরতি ঘোষিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দু-পক্ষই তাতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাতে সত্যিই কি যুদ্ধ শেষ হল? নাকি আপাতত ধামাচাপা দেওয়া থাকল ভবিষ্যতে আরও কোনও যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য?
যুদ্ধে কি কেউ জেতে?
যুদ্ধে জড়ানো তিনটি দেশই এই যুদ্ধে নিজেদের জয়ী বলে প্রচার করছে। ইজরায়েলের দাবি তারা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিতে পেরেছে। এ নাকি তাদের এক ‘ঐতিহাসিক বিজয়’। যুদ্ধে ইরান বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তার পরমাণু কেন্দ্রগুলির ক্ষতি হয়েছে। মারণাস্তে্রর আঘাতে শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীদের এবং সেনাবাহিনীর শীর্ষকর্তাদের মৃত্যু হয়েছে এবং তার মিসাইল প্রতিরোধী ব্যবস্থাটি ব্যর্থ প্রতিপন্ন হয়েছে। ছশোর বেশি নাগরিকের মৃত্যু এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। যদিও যুদ্ধে জয় বা পরাজয় শুধু বস্তুগত ক্ষতি দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। এত ক্ষতি সত্তে্বও ইরান আত্মসমর্পণে রাজি হয়নি। উল্টো দিকে, ইরানের মিসাইল আক্রমণ ইজরায়েলের বহুখ্যাত প্রতিরোধী ব্যবস্থার ‘অপ্রতিরোধ্য’ মিথকে ভেঙে দিতে এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, যিনি ইরানে শাসক বদলের লক্ষ্য ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। আর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যিনি ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চেয়েছিলেন, কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের মিসাইল হামলার পর বাধ্য হয়েছেন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে।
এই যুদ্ধ ইজরায়েলের মার্কিন-নির্ভরতা প্রকট করে দিয়েছে। বাস্তবে যুদ্ধে মার্কিন অংশগ্রহণ ইজরায়েলকে ইরানি প্রতিরোধের সামনে থেকে বেরিয়ে আসারই রাস্তা করে দিয়েছে। ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে আমেরিকার জনগণ আর একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়ানো থেকে সরকারকে বিরত হওয়ার জন্য দাবি তুলেছে, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো স্বৈরাচারীও অমান্য করতে পারেননি। নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের দেওয়া দেশের বাইরে যুদ্ধে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিয়ে আমেরিকা জুড়ে প্রবল গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিরোধী ডেমোক্র্যাট, এমনকি নিজের দল কনজারভেটিভদের মধ্যেও ট্রাম্পের ইরান আক্রমণের তীব্র বিরোধিতা উঠেছে। ইজরায়েলের অভ্যন্তরে প্যালেস্টাইন এবং ইরানে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ চলছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ইজরায়েল-আমেরিকা– কারও পক্ষেই যুদ্ধের খুব অনুকূলে ছিল না।
আমেরিকাই ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে ঠেলে দিল
যুদ্ধের পর ইরান পরমাণু অস্ত্র অ-সম্প্রসারণ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সে দেশের পার্লামেন্ট সেই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। ইরান জানিয়ে দিয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তি উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে তারা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র সঙ্গে আর কোনও রকম সহযোগিতা করবে না। ইরানের এই সিদ্ধান্তকে অজুহাত করেই হয়তো ভবিষ্যতে আবার ইজরায়েল এবং আমেরিকা ইরানকে আক্রমণ করে বসবে।
যুদ্ধ বহু প্রশ্নকে সামনে এনে দিল
ইজরায়েলের ইরান আক্রমণের ঘটনা এবং ইরানের পাল্টা প্রতিরোধ আক্রমণ এবং তাতে আমেরিকার জড়িয়ে পড়ার ঘটনা অনেকগুলি প্রশ্নকে সামনে এনে দিয়েছে, যেগুলি বিচার করে দেখা দরকার।
যে বিষয়টিকে সামনে রেখে ইজরায়েল ইরানের উপর হামলা শুরু করেছিল যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে, সেটা কি নিশ্চিত ছিল? আইএইএ-র রিপোর্টে ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির কথা বলা হয়নি। আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের অধিকর্তা তুলসী গ্যাবার্ডও গত মার্চেই স্পষ্ট বলেছিলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। তা হলে কীসের ভিত্তিতে ইজরায়েল এবং আমেরিকা ইরানে হামলা চালাল?
এর আগে কি কোনও দেশ পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেনি? বিশ্বের বহু দেশই তো শত শত পরমাণু বোমার মালিক। ইজরায়েল নিজেই যে পরমাণু শক্তিধর দেশ তা কারও অজানা নয়। শুধু তাই নয়, ইরান শুরু থেকে পারমাণবিক অ-সম্প্রসারণ চুক্তির (এনপিটি) সদস্য। ইজরায়েল সেই চুক্তিতে অংশই নেয়নি এবং আইএইএ বা অন্য কোনও আন্তর্জাতিক নজরদারিতে রাজি হয়নি। আমেরিকা বৃহৎ পারমাণবিক শক্তির অধিকারী এবং বিশ্বে একমাত্র পারমাণবিক হামলার নায়ক সে নিজে। ইরান, এখনও পর্যন্ত যার পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রমাণ নেই, তা হলে সে দেশটির মানুষ কিংবা সেখানকার নেতারা পরমাণু অস্তে্রর অধিকারী দেশগুলির থেকে বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠল কী করে? এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যে-কোনও অভিযোগ তুলে ইরানের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাকে নতিস্বীকার করানোটাই এই পরিকল্পনার মূলে। ঠিক এই জিনিসই বিশ্বের মানুষ দেখেছিল ইরাক, লিবিয়া এবং আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে। আসলে পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার একমাত্র প্রতিরোধী শক্তি হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে ইরান। ইরানকে নতিস্বীকার করাতে পারলে তেল-সমৃদ্ধ সমগ্র এলাকাটি আমেরিকার দখলে আসবে, ইরানের কর্তৃত্বে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং এই অঞ্চলে রাশিয়া-চিনের প্রভাবও আটকানো যাবে– যা আমেরিকা এবং পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির প্রভাবকে এই অঞ্চলে নিশ্চিত করবে।
বাস্তবিক ইজরায়েল এবং আমেরিকার এই স্বৈরতান্ত্রিক কার্যকলাপই ইরানকে এনপিটি থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করল। তাদের পরমাণু কার্যক্রমে আর কোনও নজরদারিই থাকবে না। ফলে ইরান যদি এ বার আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা ভাবে, তবে তা তৈরির রাস্তা তার কাছে আরও সহজ হয়ে গেল। আর তা যদি সত্যিই ঘটে তবে ইজরায়েল এবং আমেরিকাই তার জন্য দায়ী থাকবে।
ইজরায়েল বলেছে, ইরানের পরমাণু শক্তি তাদের অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক। তাই তারা তা রোধ করতে ইরানের উপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ইরান পরমাণু শক্তি অর্জন না করা সত্তে্বও পরমাণু শক্তিধর ইজরায়েল যে ভাবে তার উপর আক্রমণ চালাল তাতে কি ইজরায়েলই ইরানের পক্ষে বেশি বিপজ্জনক বলে প্রমাণ হল না? প্যালেস্টাইন, লেবানন, সিরিয়া জুড়ে ইজরায়েলের কার্যকলাপ ইতিমধ্যেই এই এলাকার জনগণের কাছে ইজরায়েলকে বিপজ্জনক শক্তি বলে প্রমাণ করেছে।
আন্তর্জাতিক সমস্ত রীতি এবং আইনকে লঙ্ঘন করল আমেরিকা
অন্য দিকে ইরানের পরমাণু পরিকল্পনা আটকানোর নামে আমেরিকা যা করল, তা গায়ের জোরে আন্তর্জাতিক আইন, সিদ্ধান্ত এবং রীতিনীতিকে দু-পায়ে মাড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্রকে নির্মূল করে দেওয়ার কথা বিশ্বের সামনে সগর্বে ঘোষণা করেছেন। অথচ যারা আইএইএ-র বেঁধে দেওয়া নিয়মের থেকে ইরানের এতটুকু বিচ্যুতি হয়েছে কি হয়নি তাই নিয়ে হইচই বাধিয়ে দিয়েছিল তারা কেউ পরমাণু কেন্দে্র আমেরিকার এই হামলা নিয়ে টুঁ-শব্দটিও করল না। এতে কি সেই সব দেশগুলির রাজনৈতিক দ্বিচারিতা স্পষ্ট হয়ে গেল না? অথচ আমেরিকার এই আক্রমণ রাষ্ট্রপুঞ্জের রেজলিউশন এবং এনপিটিকেও চূড়ান্ত ভাবে লঙ্ঘন করল। খোদ আইএইএ পর্যন্ত আমেরিকার এই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজের কোনও প্রতিবাদ করল না। অথচ সত্যিই যদি পরমাণু কেন্দ্রগুলি এই আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হত তবে তা কি পরমাণু বোমা বর্ষণের থেকে কম মারাত্মক হত? তার মারাত্মক ক্ষতিকর তেজষ্ক্রিয় বিকিরণে কি কেবল ইরানের নাগরিকরাই ক্ষতির শিকার হত? বাস্তবে প্রতিবেশী বহু দেশই এই মারাত্মক বিকিরণের শিকার হত।
ইউরোপের দেশগুলির শাসকদের লজ্জাজনক ভূমিকা
সবচেয়ে বড় কথা, আন্তর্জাতিক আইনের কোনও তোয়াক্কা না করে আমেরিকা ও ইজরায়েলের এই হামলা রাষ্ট্রপুঞ্জের গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাকে তলানিতে ঠেলে দিল। এর জন্য ইউরোপের তথাকথিত শক্তিশালী দেশগুলির শাসকদের ভূমিকা কি কম? এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও দেখা গেছে, ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলির বেশিরভাগই যুদ্ধ থামানোর কোনও প্রয়াস না নিয়ে চেষ্টা করে গেছে কী ভাবে এই যুদ্ধ থেকে ফয়দা তোলা যায় তথা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ দেশের অস্ত্রশিল্পকে চাঙ্গা করে তোলা যায়। এই যুদ্ধেও তাদের ভূমিকা আলাদা কিছু নয়। এই সব দেশের শাসকদের সুবিধাবাদী ভূমিকাই ইজরায়েল-আমেরিকাকে এমন এক অন্যায় যুদ্ধে নিশ্চিন্তে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহায্য করেছে। ফ্রান্স এই ঝাঁকের মধ্যে একটা কেউকেটা দেশ। তার একটা দীর্ঘ সংগ্রামী ঐতিহ্য রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রতিক্রিয়াশীল পুঁজিবাদের ধারক এই সব দেশগুলিকে নীতিহীনতা, পুঁজিপতি শ্রেণির মুনাফার স্বার্থ এতই নিচে নামিয়ে এনেছে যে অন্যায়কে অন্যায় বলার সাহসটুকুও তারা হারিয়ে ফেলেছে। ইরান যখন আমেরিকা-ইজরায়েলের দ্বারা মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত তখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রঁ তাকেই উপদেশ দিচ্ছেন, সে যেন নিজেকে সংযত রেখে কূটনীতির রাস্তায় ফিরে আসে। ব্রিটেনে নাকি এখন প্রগতিশীল শ্রমিক দলের রাজত্ব। সেই দলের নেতা, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার একেবারে চড়া সাম্রাজ্যবাদী সুরে বলেছেন, ইরানকে কোনও ভাবেই নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া যায় না। আমেরিকা নাকি সেই বিপদ দূর করতেই ব্যবস্থা নিয়েছে। স্টার্মারও ইরানকে বোঝাপড়ার টেবিলে বসতে এবং কূটনীতির পথে চলতে উপদেশ দিয়েছেন। বাস্তবে এই সব শক্তিধর দেশগুলির শাসকদের নীতিহীন আচরণই পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধ কর্মসূচিকে ভণ্ডামির স্তরে নামিয়ে এনেছে। এই ভণ্ডামিরই আর একটি দিক হল আক্রান্তের উপরই বোঝাপড়ার দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া।
ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, আমরা শেষ দিন পর্যন্ত বোঝাপড়া করার চেষ্টা চালিয়েছি। বলেছেন, ইরান সেখানে কী করে ফিরে আসতে পারে যে জায়গাটা সে ছেড়েই যায়নি।
ভারত সরকারের ভূমিকা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ঐতিহ্যের বিরোধী
বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তির অধিকারী হওয়ার দাবিদার ভারতের ভূমিকা একেবারেই অন্য রকম কিছু নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, যিনি নিয়ত নিজেকে বিশ্বগুরু হিসাবে প্রচার করতে পছন্দ করেন এবং ভারতকে বিশ্বমঞ্চের একটি অন্যতম শক্তি বলে প্রচার করেন, তাঁকে কিন্তু এই ঘটনায় গোটা বিশ্ব চোখ-কান বুঁজে থাকতেই দেখল। অথচ ইরান ভারতের এক পুরনো বন্ধু দেশ, যে বহু কঠিন সময়ে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। অতীতে বহু বার কাশ্মীর প্রশ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই ভারত ইরানের উপর মার্কিনী ভয়ঙ্কর হামলার বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করল না। নিন্দা দূরের কথা, যুদ্ধ বিরতির কথাটিও প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতে ছিল না। বরং ইরানকেই উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। ভারতের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার যে দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এই আচরণে তাকেই নিচে নামানো হল। প্রধানমন্ত্রী যে শক্তিশালী ভারতের গর্ব করেন, তবে তা কীসের শক্তি? নৈতিক শক্তিকে বাদ দিয়ে কি কোনও শক্তি দাঁড়াতে পারে? প্রশ্নটি দেশের মানুষকেও আজ ভেবে দেখতে হবে। অবশ্য গাজায় হাজার হাজার নিরীহ শিশু-মহিলা সহ সাধারণ মানুষের গণহত্যা চালানোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের যুদ্ধবিরতি নিয়ে রেজলিউশনে যে স্বাক্ষর করেনি তার থেকে এর বেশি আর কী আশা করা যায়!
যুদ্ধ আটকাতে এগিয়ে আসতে হবে প্রতিটি দেশের জনগণকেই
পুঁজিবাদী দেশগুলি সকলেই আজ এই নীতিহীনতার নাম দিয়েছে নতুন বাস্তবতা। নীতি-নৈতিকতার কথা নাকি সেখানে অচল! সেখানে শুধুই নাকি এগিয়ে চলা! সবার আগে নাকি দেশের স্বার্থ! এই দেশ মানে তো পুঁজিপতি শ্রেণির ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির স্বার্থ! অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থ! কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে আর কোন ক্ষেত্রে করবে না সবই আজ নির্ধারিত পুঁজিপতি শ্রেণির ব্যবসার স্বার্থকে সামনে রেখেই। একেই তারা দেশের স্বার্থ বলে চালাতে চায়। আজ বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে ভেবে দেখতে হবে, এর নাম কি এগিয়ে চলা? এ কোন দিকে আমাদের রাষ্ট্রনায়করা বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন– যে বিশ্বে নীতি-নৈতিকতার স্থান নেই, বিবেক-মানবতার স্থান নেই, শুধুই হিংসা আর পুঁজিপতি শ্রেণির মুনাফা। মুনাফার স্বার্থের কাছে সভ্যতার স্বার্থকে এ ভাবে বিসর্জন দেওয়াকে আটকানো যাবে কী ভাবে? সাম্রাজ্যবাদ যত দিন থাকবে তত দিন তারা বাজার দখল এবং অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থে যুদ্ধ বাধিয়ে যাবে। তাই সত্যিকারের যুদ্ধ বিরোধিতা আসলে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা। যত দিন সমাজতন্ত্র ছিল তত দিন যুদ্ধের বিরুদ্ধে তা প্রধান প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করত। সমাজতন্তে্রর অনুপস্থিতিতে তাই দেশে দেশে জনগণের ঐক্যবদ্ধ জঙ্গি শান্তি আন্দোলনই যুদ্ধ ঠেকানোর একমাত্র রাস্তা। প্রবল শান্তি আন্দোলনই পারে দেশে দেশে যুদ্ধবাজ সরকারগুলিকে গণবিধ্বংসী যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার থেকে বিরত করতে।
এই লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা ৪ – ১০ জুলাই ২০২৫ এ প্রকাশিত