Breaking News

অঙ্গীকারনামায় পরিবর্তন না হওয়ায় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি বাসদ (মার্ক্সবাদী)

 বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া রক্তস্নাত ২০২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থান সারা বিশ্বকে, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের ভূ-রাজনীতিকে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছে।

ছাত্র যুবক মেহনতি মানুষের প্রাণদান, আত্মত্যাগ ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম– ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙক্ষাকে ধারণ করেছিল। অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদ রচনা প্রক্রিয়ায় এবং দৃষ্টিভঙ্গিগত দিক থেকে অভ্যুত্থানের আকাঙক্ষাকেই অস্বীকার করেছে। শুধু তাই নয়, অভ্যুত্থানের অংশীদার মহিলা, চাষি, শ্রমিক এবং তামাম দেশবাসীর প্রত্যাশা এই সনদে প্রতিফলিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সংগ্রামী বামপন্থী দল বাসদ (মার্ক্সবাদী)-র কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা ১৭ অক্টোবর বলেন,

জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়াটি আমাদের কাছে পৌঁছেছে। বিভিন্ন দলের নোট অব ডিসেন্ট সহ রচিত জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়াটির প্রথম অংশ সম্পর্কে আমাদের বড় কোনও প্রশ্ন নেই। আমাদের প্রশ্ন সনদের দ্বিতীয় অংশ, অর্থাৎ এর অঙ্গীকারনামা নিয়ে। এই অংশের প্রথম তিনটি অনুচ্ছেদ সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য আমরা গত ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে প্রেরিত লিখিত চিঠিতে দিয়েছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় এ ব্যাপারে কোনও পরিবর্তন আমরা দেখিনি। তাই এ বিষয়ে আমরা আমাদের বক্তব্যটি পুনরায় তুলে ধরছি।

বিভিন্ন দল সনদের বহু পয়েন্টে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। কিন্তু এই অঙ্গীকারনামার প্রথম পয়েন্টে বলা হয়েছে, ‘এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব’। স্বাভাবিক ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া বেশিরভাগ দলের পক্ষেই এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা সম্ভব নয়।

একই ভাবে দ্বিতীয় পয়েন্টে ‘পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসাবে অথবা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করব’– এই কথার উল্লেখ আছে। সনদকে সংবিধানে যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন মত সহ লিখিত একটা দলিল কী ভাবে সংবিধানে যুক্ত হতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা স্পষ্ট হতে পারছি না।

তৃতীয় পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমরা জুলাই সনদ ২০২৫ এর বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনও আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করব না…’। কোনও দল যদি দেখে, যে বিষয়গুলোতে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিল, সেগুলোই অনুমোদিত ও কার্যকর হতে যাচ্ছে, তবে তার পক্ষে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। কোনও গণতান্ত্রিক সনদে এই ধরনের অঙ্গীকার থাকাটা অনভিপ্রেত।

এ ছাড়াও এই সনদ কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সে ব্যাপারে কোনও বক্তব্য চূড়ান্ত সনদে নেই। এই বিষয়টি নিয়েই শেষ পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে ও দলগুলোর মধ্যে প্রবল মতানৈক্য আছে। এই বিষয়টি স্পষ্ট না করে কীভাবে দলগুলো সনদ স্বাক্ষর করবে সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।

আমরা বলেছিলাম, আমরা রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষে্য আলোচনার জন্য এখানে মিলিত হয়েছি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে রাষ্ট্র সংস্কারের যে দাবিটি উঠেছে, এর মূল নির্যাস ছিল এই যে, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে যে ভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা ও সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর যে একচ্ছত্র ক্ষমতা সেটাকে কমিয়ে একটা ভারসাম্যে নিয়ে আসা। সংবিধানের মূলনীতির আলোচনাটি এই উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। আদর্শিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে আলোচনার বাইরে রাখা উচিত। কারণ এ ব্যাপারে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সম্ভব নয়। তাই এই অংশে আলোচনার সময়ে আমরা সহ চারটি দল ওয়াক আউট করেছিলাম। এর বাইরেও দুটি দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম এই বিষয়টি বাদ দিয়ে সনদ রচিত হবে। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় সেটার প্রতিফলন আমরা দেখলাম না। আমাদের জাতি গঠনের ইতিহাসও সনদে ভুল ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

আমরা দীর্ঘদিন আলোচনা করেছি এই বিষয়গুলো নিয়ে। এর একটা সুন্দর পরিণতি আমরা সকলেই চাই। আমরা আবারও কমিশনকে অনুরোধ করব সার্বিক দিক বিবেচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। এর কোনও পরিবর্তন না হলে এই সনদে স্বাক্ষর করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।