হুল দিবসে সোচ্চার দাবি আদিবাসীদের অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না

জামশেদপুর

পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার মূলত পাহাড় ও জঙ্গল এলাকায় দীর্ঘকাল ধরে সাঁওতালদের বসবাস৷ শিকার এবং চাষ, এই ছিল তাঁদের মুখ্য পেশা৷ বাইরের জগতের বিশেষ প্রভাব বহুকাল পর্যন্ত পৌঁছয়নি তাঁদের জীবনযাত্রায়৷ ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা–বিহার–ওড়িশায় আধিপত্য স্থাপন করে৷ সেই প্রথম সাঁওতালরা ব্রিটিশে শাসনের অধীন হয়৷ কোম্পানি জঙ্গল কেটে কৃষিজমি তৈরি করা শুরু করে, মূলত পাট, পোস্ত এবং নীল উৎপাদনের জন্য৷ তখন দীর্ঘকালের বাসস্থানের অধিকার থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা শুরু হয়৷ তাঁদের উপর দেশীয় জমিদার–মহাজন–ঠ এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অকথ্য অত্যাচার শুরু হয়৷ এর বিরুদ্ধে লাগাতার বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম করেছে সাঁওতাল–সহ আদিবাসী জনগণ৷

এক্ষেত্রে ছোটনাগপুরে সিদো, কানহুর নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫০–’৫৭) ‘হুল’ নামে প্রসিদ্ধ৷ ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছিল৷ তাঁরা তাঁদের দাবিদাওয়া গভর্নরের কাছে জানাবার জন্য কলকাতা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু পথেই ব্রিটিশ সেনাবাহিনী পাশবিক আক্রমণ চালিয়ে অগণিত মানুষকে হত্যা করে৷ আন্দোলনের নেতা সিদো ও কানহুকেও গ্রেপ্তার করে হত্যা করা হয়৷ রাজ্যে রাজ্যে ৩০ জুন হুল দিবস পালিত হয় মর্যাদা সহকারে৷

দিল্লি

কলকাতার সিদো কানহু ডহরে ‘হুল’ দিবস পালিত হয় সিদো কানহু মেমোরিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সহ সভাপতি জগদীশচন্দ্র সিং৷ সম্পাদক পরিমল হাঁসদা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন৷ বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নেপাল সিং, আশুতোষ রায়, বিভীষণ সোরেন, মদনমোহন বাস্কে, সুবোধ হাঁসদা প্রমুখ৷ বক্তারা বর্তমান আর্থ–সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘হুল’ উদযাপনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন৷ সভা থেকে দাবি ওঠে আদিবাসীদের ‘জল–জমি–জঙ্গলের’ অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না, আদিবাসী সহ সমস্ত সাধারণের মানুষের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে৷ সাঁওতালি মাধ্যম বিদ্যালয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পুস্তক প্রণয়ন ও ভাষা সহ নানা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে৷

মধ্যপ্রদেশ

এদিন বাঁকুড়া জেলার ঝাঁটিপাহাড়ি রেলস্টেশনের কাছে শালতোড়া, চাঁদড়া, তিলাবনী, খড়বন সহ নানা জায়গায় হুল দিবস উদযাপিত হয়৷ বিভিন্ন আদিবাসী এবং অ–আদিবাসীদের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচিতে এস ইউ সি আই (সি) দলের কর্মী–সংগঠকরাও উপস্থিত ছিলেন৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা)

 

Check Also

দেশে বামপন্থী দলগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে লড়ছে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)

১৫ এপ্রিল কলকাতায় দলের কেন্দ্রীয় দফতরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য বলেন, …