সরকারি গোশালায় শত শত গরুর মৃত্যু

কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর পুলিশ সম্প্রতি গরু পাচারের অভিযোগে বজরং দলের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে৷ অভিযোগ, ওই ব্যক্তি দিনের বেলায় গোরক্ষা বাহিনীর সক্রিয় কর্মী, রাতের বেলায় গো–পাচারকারী৷ গরু পাচার নিয়ে এমন টুকরো টুকরো খবর সংবাদপত্রে নানা সময়ে বেরিয়েছে৷ সেগুলিকে পর পর সাজালে বিজেপি মদতপুষ্ট গোরক্ষকদের ‘গোভক্তি’ নিয়ে প্রশ্ণ উঠবেই৷

১৷ ত্রিপুরার সিপাহিজলা জেলার বিশালগড় মহকুমায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে গোশালা চালাত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা৷ ওই রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর পরই এই ধরনের গোশালার রমরমা শুরু হয়৷ ওই গোশালায় ছিল প্রায় ১২০০ গরু৷ সংবাদে প্রকাশ, অর্ধাহারে, অনাহারে এবং পরিচর্যার অভাবে মাত্র ৪৫ দিনে মারা গেছে প্রায় ৩০০ গরু৷ সংবাদে এও প্রকাশ, দু’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যুক্ত রয়েছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে (সূত্র : আনন্দ বাজার পত্রিকা, ১৬–০৭–’১৯)৷

২৷ রাজস্থানে পূর্বতন বিজেপি সরকারের ৫ বছরের  শাসনকালে  হিঙ্গোনিয়া গোশালায় মারা গিয়েছে ৭৪,০১৬ টি গরু (সূত্র : পিটিআই, জানুয়ারি–’১৯)৷ অর্থাৎ প্রতিদিন মারা গেছে গড়ে ৪০টি গরু৷

৩৷ ছত্তিশগড়ে পূর্বতন বিজেপি সরকারের আমলে ‘শাগুন’ নামে একটি গোশালায় অল্প কয়েকদিনে ২০০ টি গরু মারা যায়৷ ওই গোশালাটি চালাতেন স্থানীয় বিজেপি নেতা হরিশ ভার্মা৷

৪৷ রাজস্থানের জালোরে একটি গোশালায় ২০১৭ সালের জুলাই মাসে মারা যায় ৭০০ টি গরু৷

৫৷ উত্তরপ্রদেশের কানপুরে দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি গোশালায় ২৮ শতাংশ গরু মারা যায়৷

সরকারি টাকায় চলা ওই সমস্ত গোশালার শত শত গো–মৃত্যুর কারণ সবক্ষেত্রেই উপযুক্ত খাদ্য, ওষুধ ও পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাব৷ গো–কেন্দ্রিক আরেকটি ঘটনার দিকে চোখ ফেরানো যাক৷ গরু–মোষের মাংস রপ্তানিতে নরেন্দ্র মোদি শাসিত ভারত বিশ্বে প্রথম স্থানাধিকারী৷ কংগ্রেস আমলের তুলনায় গো–মাংস রপ্তানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ৷ সারা বিশ্বের রপ্তানি করা গো–মাংসের প্রায় ২০ শতাংশই হয় ভারত থেকে৷ আরও খবর হল, এ দেশ থেকে গো–মাংস রপ্তানিকারীদের প্রথম ৬ জনের মধ্যে ৪ জনই হিন্দু৷

গো–রক্ষার স্লোগানের আসল উদ্দেশ্য কী? গো–রক্ষকদের উদ্দেশ্য কি সত্যিই গরুদের রক্ষা করা? বাস্তবে গো–রক্ষার নামে গণপিটুনি চালিয়ে, মানুষকে হত্যা করে দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা, অস্থিরতা, ধর্মীয় মেরুকরণ, সংখ্যালঘু জনগণের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে, হিন্দু–মুসলিম মেরুকরণ ঘটিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী হাওয়া তুলে ভোটে জেতাই হল এদের হীন উদ্দেশ্য৷ একটি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গো–রক্ষকদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক, মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫০ জনের (সূত্র : ব্লুমবার্গ, ফেব্রুয়ারি ২০১৯)৷

স্বামী বিবেকানন্দের কাছে গোরক্ষিণী সভার সদস্যরা এসেছেন গরুর ছবি হাতে৷ দাবি কসাইয়ের হাত থেকে দেশের সব ‘গো–মাতা’কে রক্ষা করাই তাদের ব্রত৷ বিবেকানন্দ বললেন–দুর্ভিক্ষে দেশের ন’লক্ষ মানুষ মারা গেছেন, তাদের জন্য কী করছেন? উত্তরে সেই গো–রক্ষক বলেন– মানুষ নয়, গো–মাতার সেবা করাই তাদের লক্ষ্য৷ মানুষ মরে কর্মফলে…৷ বিবেকানন্দ সহাস্যে বললেন, ‘এমন মাতা না হলে এমন সব কৃতী সন্তান প্রসব করল কে?’ বিজেপিকে দেখলে তিনি কী বলতেন?

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ৩ সংখ্যা)