বিশ্ববিদ্যালয়ই নেই, কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী ডিগ্রি পেয়ে গেছেন

দেশে শিক্ষামন্ত্রী নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সত্যি কথা বলবেন, এটুকু প্রত্যাশা তো করাই যায়৷ অথচ এ পোড়া দেশে সেটুকুরও জো নেই৷ বিজেপির বিগত মন্ত্রীসভায় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন স্মৃতি ইরানি৷ নির্বাচনী হলফনামায় বারবার বদলে গেছে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা৷ ২০০৪ সালের হলফনামা অনুসারে তিনি গ্র্যাজুয়েট৷ সেই তিনিই ২০১৯ সালের হলফনামা অনুসারে গ্র্যাজুয়েট নন৷ এ যেন হলফ করে মিথ্যে বলা যে দেশের শিক্ষামন্ত্রীরা মিথ্যে বলে, সে দেশের শিক্ষার হাল কী হতে পারে?

 মোদির দ্বিতীয় দফার শিক্ষামন্ত্রী সম্পর্কেও সেই একই অভিযোগ৷ নবগঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী (বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রকের এমনই গালভরা নাম) রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক৷ তিনি নিজের নামের আগে ডক্টর ব্যবহার করেন৷ উৎসুক জনতার কৌতূহল নিরসন করতে তিনি বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে কলম্বোর ওপেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সাহিত্যে অবদানের জন্য ডিলিট পেয়েছি৷’ সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা সরকার জানিয়ে দিয়েছে, এই নামে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দেশে নেই৷ সত্য সেলুকাস, বড় বিচিত্র এই দেশ নেই কিন্তু আছে বিশ্ববিদ্যালয় নেই, কিন্তু ডিগ্রি আছে!

থাকবে না কেন? এই বিজেপির শাসনে অস্তিত্বহীন বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘উৎকর্ষ প্রতিষ্ঠান’–এর মর্যাদা দেওয়ার নজির কি নেই? বিগত বিজেপি সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক, রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের জিও ইনস্টিটিউট নামক যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও দিনের আলো দেখেনি, সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই ‘উৎকর্ষ প্রতিষ্ঠান’ ঘোষণা করেছে৷ সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মন্ত্রীদের ডিগ্রি দেবে না তো কাকে দেবে?

বাস্তবে যোগ্যতার বিচারে ডক্টরেট কিংবা চতুর্থ শ্রেণি পাশ, সেটা বড় কথা নয়৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী আরএসএসের অনুগত সেবক– এটাই তাঁর যোগ্যতার প্রধান মাপকাঠি৷ এক্ষেত্রে অন্যান্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অতি তুচ্ছ৷ শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার অনেকদিন আগেই নিশঙ্ক বলেছিলেন, ‘জ্যোতিষ চর্চার কাছে বিজ্ঞান কিছুই না, তুচ্ছ ব্যাপার’৷ শিক্ষামন্ত্রীর এই যোগ্যতা কি বিজেপি নেতৃত্ব লক্ষ করেনি? এই যোগ্যতাই তাকে শিক্ষামন্ত্রী করেছে৷ আরএসএস–বিজেপি দেশ জুড়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় অন্ধতার প্রসার চায়৷ ধর্মনিরপেক্ষ–বৈজ্ঞা শিক্ষা তাদের মৃত্যুবাণ৷ তাই তারা যুক্তি–বিজ্ঞানের ধ্বংস চায়৷ ফলে যারাই আরএসএস–বিজেপির মানবতাবিরোধী, যুক্তিভিত্তিক মনন ধ্বংসকারী নীতি সবচেয়ে যোগ্যতার সাথে ছড়িয়ে দিতে পারবে, তারাই তো পাবে এমন দায়িত্ব৷ রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক বিজেপি–আরএসএসের বিচারে এ কাজে যোগ্য ব্যক্তি, তাই তিনি শিক্ষামন্ত্রী৷

শিক্ষাক্ষেত্রে যে গৈরিকীকরণ চাইছে হিন্দুত্ববাদীরা, ভারতীয় ইতিহাসকে বদলে দিয়ে নিজেদের প্রয়োজনে নতুন ইতিহাস লেখার চেষ্টা করছে, যুক্তি–বিজ্ঞানের বিপরীতে অন্ধ–কুসংস্কারাচ্ছন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, এর পরিণাম ভয়াবহ৷ যারা এই অন্ধতা চান না, ইতিহাস বিকৃতি চান না, শিক্ষার ধর্মীয়করণ চান না, তাঁদের এগিয়ে আসতে হবে ধর্মনিরপেক্ষ–বৈজ্ঞা শিক্ষার দাবিকে জোরালো করতে৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা)