বিদ্যুৎ বিল–২০২০ :  গ্রাহকদের উপর চাপবে আরও বর্ধিত দামের বোঝা

 

 

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিদ্যুৎ আইন ২০০৩–এর উপর সংশোধনী এনে যে জনবিরোধী বিল সম্প্রতি উত্থাপন করেছে, তার তীব্র নিন্দা করে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ৫ জুন এক বিবৃতিতে বলেছেন, দেশ জুড়ে করোনা অতিমারির দ্রুত সংক্রমণ এবং দু’মাসেরও বেশি দীর্ঘ লকডাউনের ফলে সৃষ্ট এক গভীর সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার জনস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কর্পোরেট মালিকদের মুনাফার স্বার্থে বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ সংশোধনের উদ্দেশ্যে একটি বিল নিয়ে এসেছে৷ সাধারণ গ্রাহকদের উপর যা চাপিয়ে দেবে বর্ধিত দামের বোঝা৷

ইতিপূর্বে, অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে বেসরকারি মালিকদের সামনে খুলে দিতে এবং তার মধ্য দিয়ে জনস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এরকম একটি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ক্ষেত্রে ব্যাপক বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের লক্ষ্যে অনুমোদনের সিলমোহর লাগাতে বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ গোটা দেশে চালু করেছিল৷ নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বর্তমান বিজেপি সরকার ‘বিদ্যুৎ (সংশোধনী) বিল ২০২০’–র মাধ্যমে নানা সংশোধনী প্রস্তাব এনে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে দেশি–বিদেশি একচেটিয়া মালিকদের উর্বর মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত করতে প্রচলিত আইনের ধারাগুলিকে আরও উদার করেছে৷ ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ ক্ষেত্র ত্রিধাবিভক্ত৷ উৎপাদন, পরিবহণ ও বণ্ঢন– এই তিন ভাগে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে ভাগ করে প্রতি ভাগে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ মুনাফা লোটার ব্যবস্থা সেখানে পাকা করা হয়েছে– যা স্বভাবতই সাধারণ গ্রাহকদের পকেট কেটেই করা হচ্ছে৷ বর্তমান সংশোধনীতে পুরনো বিভাগগুলিকে আরও বাড়িয়ে তার সঙ্গে ডিস্ট্রিবিউশন সাব–লাইসেন্স এবং ফ্র্যানচাইজি ব্যবস্থা যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এছাড়া ক্রম–ভরতুকি ব্যবস্থা তুলে দেওয়ারও প্রস্তাব সেখানে আছে৷ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে একচেটিয়া মালিকদের কর্তৃত্ব ইতিমধ্যেই অনেকখানি প্রতিষ্ঠিত৷ এই ব্যবস্থায় একচেটিয়া মালিকদের দেয় কর বা দায়ের বোঝা স্বাভাবিক ভাবেই কমবে৷ সাধারণ গ্রাহকদের উপর চাপবে আরও বর্ধিত দামের বোঝা৷

উপরন্তু, এই সংশোধনীতে ইলেকট্রিসিটি কন্ট্র্যাক্ট এনফোর্সমেন্ট অথরিটি (ইসিইএ) নামে একটি নতুন কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এই কেন্দ্রীয় সংস্থা রাজ্যে বিদ্যুৎ বন্টনকারী বিভিন্ন সংস্থা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহণ, বণ্ঢন বা সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত নানা সংগঠনের মধ্যে চুক্তি সংক্রান্ত নানা বিরোধের মীমাংসা করবে৷ এইভাবে সাংবিধানিক ধারা অনুসারে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের যে অধিকার বা ক্ষমতা এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলির হাতে ন্যস্ত ছিল, তা চলে যাবে সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি সরকার–বহির্ভূত সংস্থার হাতে৷ যাদের সংসদের কাছে জবাবদিহির কোনও দায় থাকবে না৷ এতে সংবিধানের ধারা পরিষ্কার লঙিঘত হবে৷

বিদ্যুৎ আইন ২০০৩–এর এই অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক সংশোধনীর (সংশোধনী বিল ২০২০) আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি এবং আজ গোটা দেশে জনস্বার্থকে পদদলিত করে সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের যে বন্যা বইছে, তারই অংশ হিসাবে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রেও বেসরকারিকরণের এই সর্বাত্মক প্রয়াস অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি৷

জনসাধারণের কাছে আমাদের আবেদন, এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে আপনারা সোচ্চার হন এবং তা বাতিল করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে বাধ্য করুন৷