বন্দিমুক্তি : মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি রাখেননি

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ১৯ ফেব্রুয়ারি নিম্নলিখিত খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন।

মহাশয়া,

আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা নাগাদ শ্রী হরিসাধন মালি (৮৫) এসএসকেএম হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি ২০০৬ সাল থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কারাগারে বন্দি ছিলেন। প্রেসিডেন্সি জেল থেকেই তাঁকে এসএসকেএম-এ ভর্তি করা হয়েছিল। এই প্রবীণ মানুষটি এর আগেও বারবার অসুস্থ হওয়ায় কারাগার থেকেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। এমনকি প্যারোলে মুক্ত হওয়ার পর এক সময় তাঁর পরিজনদের উদ্যোগে তাঁকে একটানা ২ বছরের বেশি সময় হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয়েছিল। প্যারোলের সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও তাঁর শারীরিক অবস্থার কারণে কারাগার কর্তৃপক্ষ ফেরত নেওয়ার উপযুক্ত মনে করেনি। কোভিড পরিপ্রেক্ষিতে যখন সরকার অন্য বন্দিদের মতো তাঁকে দীর্ঘ প্যারোলে মুক্তি দেয় তখনও প্যারোলের সময়সীমার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা এত খারাপ ছিল যে তিনি জেলে ফিরে যেতে পারছিলেন না। পরিজনদের কোনও অনুরোধেই তখন জেল কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি, তাঁকে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। জেলে ফিরে যাওয়ার পরেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল এবং তাতেই তাঁর মৃত্যু হল। সরকারের এই আচরণ কি খুব মানবিক বলে আপনি মনে করেন? আপনি সর্বদা যে মানবদরদের কথা বলেন, হরিসাধন মালির মতো অসুস্থ বৃদ্ধ রাজনৈতিক বন্দির প্রতি আপনার আচরণে কিন্তু তার প্রতিফলন পাওয়া গেল না।

আমরা আপনাকে জানিয়েছিলাম, বিগত জমানায় রাজনৈতিক কারণে সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগ করে সিপিএম মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বহু এসইউসিআই(সি) নেতা-কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করেছিল। হরিসাধনবাবু ছিলেন তাঁদের অন্যতম। আজ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে কোনও প্রতিবাদী কন্ঠের বিরুদ্ধে এমন অগণতান্ত্রিক আচরণই করে চলেছে, যার বিরোধিতা আপনারাও করছেন। যাই হোক, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এমন রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে আপনি প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন। আমরা সে কথা স্মরণ করিয়ে হরিসাধনবাবু সমেত অন্যদের মুক্তির দাবিতে কারামন্ত্রী, আইনমন্ত্রী সমেত আপনার দপ্তরে বারবার দরবার করি। রাজ্যপালের কাছে একই দাবিতে দরবার করলে তিনি সুপারিশ করে আপনাকে চিঠি লেখেন। কিন্তু কোনও অনুরোধেই কাজ হয়নি।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, যে সমস্ত বন্দি ১৪ বছরের বেশি জেলে আছেন সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও জেল প্রশাসন যেন তাঁদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি মামলা করে এবং যে সব দণ্ডিত বন্দি ১৪ বছরের বেশি জেলে আছেন তাঁদের মুক্তির বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার জন্য নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশেও আপনার সরকার যদি কাজ করত তাহলে কি এমন ঘটনা ঘটত?

হরিসাধনবাবুর সাম্প্রতিক অসুস্থতা ও হাসপাতালে স্থানান্তরের পরে আমরা জেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম, জীবনের শেষ কটা দিন যাতে তিনি আত্মীয়-পরিজনের কাছে থাকতে পারেন তার ব্যবস্থা করুন। সে কথায়ও কর্ণপাত করা হল না। আপনার সরকার এত নির্দয়, এত অমানবিক হতে পারে?

এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অনুরোধ, অমানবিকতার এই প্রদর্শন বন্ধ করুন এবং আর কালক্ষেপ না করে অবিলম্বে অবশিষ্ট রাজবন্দিদের মুক্তি দিন।

(ডিজিটাল গণদাবী-৭৩ বর্ষ ২৩ সংখ্যা_২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)