নিঃস্বার্থ দরদবোধ, অসীম সাহস ও বীরত্বের সাথে আমৃত্যু সংগঠনকে রক্ষার সংগ্রাম করেছেন কমরেড সুধাংশু জানা–কমরেড সৌমেন বসু

তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতী বাহিনীর নৃশংস আক্রমণে নিহত হন দলের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড সুধাংশু জানা, গত ৪ জুলাই। প্রয়াত কমরেডের স্মরণে ২৯ আগস্ট জয়নগর জেলা অফিসে এক সভার আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন বিধায়ক, রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড জয়কৃষ্ণ হালদার। উপস্থিত ছিলেন পলিটবুরো সদস্য, জেলা সম্পাদক কমরেড দেবপ্রসাদ সরকার। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নিহত কমরেডের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য। প্রধান বক্তা পলিটবুরো সদস্য কমরেড সৌমেন বসুর সম্পূর্ণ ভাষণটি প্রকাশ করা হল। সমগ্র সভাটি অনলাইনে সম্প্রচার করা হয়।

শহিদ কমরেড সুধাংশু জানার মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। অর্থাৎ আমার থেকে উনি সাত বছরের ছোট। জুনিয়ার ও সম্ভাবনাপূর্ণ কমরেডের মৃত্যুতে বয়সে বড় যে কোনও কর্মীরই যে মানসিক আঘাত লাগে, সেই বেদনা ভারাক্রান্ত মন নিয়েই তাঁর স্মরণে আমাকে বলতে হবে।

আমি কমরেড সুধাংশু জানার ঘরে বেশ কিছু বার থেকেছি। ওঁকে কিছু ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছি এবং বুঝেছি যে, তিনি অত্যন্ত মূল্যবান ও সম্ভাবনাপূর্ণ কমরেড। কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়ে পার্টির তৃতীয় কংগ্রেসের আগে অনুষ্ঠিত জেলা সম্মেলনে তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। আমার প্রত্যাশা এবং আমাদের নেতৃত্বের স্বপ্ন ছিল, কমরেড সুধাংশু জানা আরও বিকশিত হবেন এবং আরও দায়িত্বপালনের উপযুক্ত হয়ে নিজেকে গড়ে তুলবেন। সে ক্ষমতা ও সম্ভাবনা তাঁর মধ্যে ছিল। তাই এই মৃত্যু আমাদের পক্ষে এক বড় আঘাত ও ক্ষতি।

শহিদ কমরেড সুধাংশু জানাকে স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা একই সঙ্গে স্মরণ করব এই জেলার আরও ১৬৫ জনের বেশি শহিদ কমরেডকে। যাঁদের মধ্যে আছেন শহিদ কমরেড আমির আলি হালদারের মতো উঁচু মানের কমিউনিস্ট নেতা। আর আছেন কমরেড হাকিম শেখ, কমরেড সুজাউদ্দিন আখন্দ, কমরেড মোকাররম খাঁ, কমরেড অশোক হালদার, কমরেড সুষেণ মাইতির মতো অত্যন্ত মূল্যবান ও সম্ভাবনাপূর্ণ বিপ্লবী কর্মী। এই সমস্ত শহিদেরাই কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তায় গরিব চাষি-মজুর-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষের নানা সমস্যা নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে গিয়ে এবং সংগঠনকে সংহত ও বিস্তৃত করতে গিয়ে শোষক শ্রেণির বিষনজরে পড়েছিলেন।

আমি শুধু কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূল কংগ্রেসের কথা বলছি না, আমি বলছি শোষক শ্রেণি, দেশের পুঁজিপতি শ্রেণির কথাও। তাদের মুনাফা লুঠের রাজত্ব রক্ষার স্বার্থে যখন যে দলকে, এ দেশে কেন্দ্রে হোক বা রাজ্যে, তারা শাসনক্ষমতায় বসায়, সেই দলই এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-কে চরম শত্রু বলে মনে করে। কেন তারা এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-কে এত বিষনজরে দেখে? শাসনক্ষমতায় বসলেই, সে কংগ্রেস হোক, বিজেপি হোক, তৃণমূল হোক আর সিপিএম হোক, কেন এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-কে তাদের চরম শত্রু বলে গণ্য করে? তাদের ক্ষমতা বাঁটোয়ারার যে রাজনীতি, গদি দখলের যে রাজনীতি, পুঁজিপতিদের সেবা করার এবং জনগণকে ঠকানোর ও লুণ্ঠন করার যে রাজনীতি, এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) পার্টি কি তাদের সেই লুঠের চৌকিদারির রাজনীতিতে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী? না, আমরা ওই রাজনীতির ঠিক উল্টো– ওদের চরম বাধা। আমরা তো এখনই বিপ্লবের উপযোগী শক্তি অর্জন করে ফেলিনি, তবুও তাদের এত রাগ কেন? কারণ শোষক শ্রেণি ও তাদের পাহারাদার শাসক দলগুলি এই একই চিন্তায় ঐক্যবদ্ধ যে, এই দলটির জাত আলাদা, এ তাদের গোত্রের নয়। একে বাড়তে দিলে এই শোষণ ব্যবস্থার আর করে-খাওয়ার রাজনীতির সর্বনাশ। তাই ওদের সকলের আতঙ্ক, একে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে হবে। আমরা যে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি এবং যে বিপ্লব বিজ্ঞানভিত্তিক পথে একদিন হবেই, সেই বিপ্লবের পথেই রাশিয়া, চিন, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে একদিন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদকে উৎখাত করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়াতে সত্তর বছরে কোনও ভিখারি ছিল না, বেকার ছিল না, পতিতাবৃত্তি ছিল না, কোনও মূল্যবৃদ্ধি ছিল না। অন্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতেও অবস্থা এমনই হয়ে উঠছিল, শ্রমজীবীদের সমৃদ্ধি বাড়ছিল। কিন্তু মহান লেনিন-স্ট্যালিনের শিক্ষা নিয়ে কমরেড শিবদাস ঘোষ দেখিয়েছিলেন, আদর্শগত চর্চা ও মননজগতে উন্নত সংস্কৃতির চর্চা না বাড়ালে বিপদ হবে। এইসব দেশগুলোতে বাইরের সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী শক্তির প্ররোচনা আর দেশের ভিতরে বিপ্লব বিরোধী চিন্তায় বিভ্রান্ত ও আবিষ্ট শক্তির চক্রান্তের ফলে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটে। আমরা বিজ্ঞান দিয়ে বুঝেছি এই বিপর্যয় সাময়িক। অতীতেও যখন বিশ্বের ইতিহাসে পরিবর্তন এসেছে, তখনও এই ধরনের সাময়িক বিপর্যয় ঘটেছে। কিন্তু সমাজের অগ্রযাত্রা থামেনি। তাই আবার সেখানে বিপ্লব হবে। পৃথিবীর সমস্ত দেশে পুঁজিবাদের লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে রিক্ত-নিঃস্ব মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। তারা বিচার চাইছে, বাঁচার তীব্র বাসনায় তারা লড়াইয়ের পথ খুঁজছে। মানুষ লড়াইয়ের ময়দানে আসবেই এবং ইতিহাসের গতির বিজ্ঞান মেনে সমস্ত দেশে বিপ্লব হবেই। ভারতবর্ষেও বিপ্লব হবে। বিপ্লবের জন্য দরকার, যথার্থ একটি বিপ্লবী আদর্শ এবং যথার্থ বিপ্লবী আদর্শের ভিত্তিতে যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টি। সেই পার্টিই এ দেশে গড়ে তুলেছেন কমরেড শিবদাস ঘোষ। সেই দলের রীতি, নীতি-নৈতিকতা, সংস্কৃতি সম্পূর্ণ আলাদা, সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতের। তাই শোষক-শাসকদের এত আতঙ্ক।

আমরা গণআন্দোলনের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই জনগণকে প্রভাবিত করার লক্ষ্য নিয়ে এবং সম্ভব হলে বিধানসভা ও লোকসভায় আমাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে গরিব মানুষের আন্দোলনের কথাগুলি বিধানসভা, লোকসভার অভ্যন্তরে পৌছে দিতে চাই। এ দেশের মানুষও জানেন, আজকের যে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলগুলি পুঁজিপতিদের সেবা করে, তাদের থেকে আমরা সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের। কংগ্রেস আমলে যেমন এই জেলাতে এবং অন্য অনেক জেলাতেও আমাদের কর্মীরা খুন হয়েছেন, শহিদ হয়েছেন, একইভাবে সিপিএমের আমলে এই জেলাতেই দেড়শোরও বেশি কমরেড শহিদ হয়েছেন। আবার আজকে তৃণমূল আমলেও শহিদ হচ্ছেন। আজ শহিদ কমরেড সুধাংশু জানার স্মরণসভায় তাঁর মৃত্যুকালীন যন্ত্রণাকে উপলব্ধি করে এর কারণ এবং কর্তব্য আপনাদের নির্ধারণ করতে হবে।

এই সভার বক্তব্য এই দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় আমাদের পার্টির লক্ষাধিক মানুষ এবং এর বাইরেও যাঁরা পার্টিকে ভালোবাসেন তাঁরা শুনছেন, তাঁদেরও সবাইকে আমি ভেবে দেখতে বলব। আমরা আমাদের দলের শিক্ষা অনুযায়ী প্রয়াত বা শত্রুর আক্রমণে নিহত কোনও কমরেডের স্মরণসভায় তাঁর সংগ্রাম ও গুণগুলি স্মরণ করি এবং নিজেরা সেই গুণ অর্জন করার জন্য সংগ্রাম করতে চাই, উন্নত চরিত্রের সন্ধান পেতে চাই। আমাদের পার্টির পলিটবুরো সদস্য ছিলেন আপনাদের এই জেলার কমরেড সুবোধ ব্যানার্জী। তিনি ক্যান্সারে মারা যান আপনারা সবাই জানেন। তাঁর মৃত্যুর পরে সর্বহারা শ্রেণির মহান পথপ্রদর্শক কমরেড শিবদাস ঘোষ স্মরণসভায় বলেছিলেন, মানুষ মাত্রেই দোষে গুণে মানুষ। কমরেড সুবোধ ব্যানার্জীর যেমন অনেক গুণ ছিল, মহৎ গুণ ছিল, তেমনই স্বাভাবিক নিয়মেই তাঁর কিছু দোষও তো ছিল। কিন্তু মৃত্যুর পরে আমরা দোষ নিয়ে আলোচনা করি না। পলিটবুরোর একজন সদস্যের স্তরে দোষটা কোথায়? ওইরকম একজন বড় নেতার দোষ কোথায়? কমরেড শিবদাস ঘোষ বলছেন, একটা স্তরের একজন কমরেডের ক্ষেত্রে যে গুণ থাকা উচিত, সেই গুণের অভাবই তাঁর দোষ। আপনারা যাঁরা এই বক্তব্য শুনছেন সকলেই এটা ভাববেন। আমাকে যেমন এটা ভাবায়, আমার স্তরে আমার যে গুণ থাকা উচিত, তা আমাকে অর্জন করতে হবে। যদি আমার তা না থাকে, সেটা আমার দোষ। তাই কমরেড সুধাংশু জানার কাছ থেকে যদি কিছু গুণ অর্জন করতে পারি, অসহায় মানুষের প্রতি তাঁর সেই নিঃস্বার্থ দরদবোধ, সেই সাহস, অপ্রতিরোধ্য বীরত্বের বহু নিদর্শন, নিজেকে সম্পূর্ণ উজাড় করে দিয়ে গরিব কমরেডদের পাশে থাকার জন্য যে উদারতা ও গভীর ভালবাসা, সমস্ত প্রলোভনকে তুচ্ছ করে, চোখরাঙানি তুচ্ছ করে, তিনি যেভাবে সংগঠনকে রক্ষা করেছেন এবং যেভাবে তিনি চরম আক্রমণের মুখে মৃত্যুবরণ করেছেন– আমরা সকলে যদি তাঁর থেকে এগুলি শিখতে পারি, তবেই তাঁকে স্মরণ করা সার্থক হবে। তা হলেই আমরা মহান শিক্ষকের এই শিক্ষাটিকেও যথার্থ ভাবে উপলব্ধি করতে পারব।

কমরেড সুধাংশু জানা কি প্রথমে যেভাবে যুক্ত হয়েছিলেন, যেসব গুণ ও দোষ নিয়ে দলে এসেছিলেন, বরাবর তেমনই ছিলেন? বাস্তবে তা নয়। ত্রুটিমুক্ত হওয়ার সংগ্রামের মাধ্যমে বিকাশের পথেই তিনি ক্রমে ক্রমে উন্নত ও বিকশিত হয়ে যে স্তরে উঠেছিলেন, তা বোঝা এবং তাঁর থেকে কী কী গুণ আমাদের নেওয়ার আছে, সেটা চর্চা করার জন্য আমরা স্মরণসভার আয়োজন করি।

দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুন্দরবন এলাকার খেতমজুর ভাগচাষি, গরিব চাষিদের ওপর জোতদারেরা কী ধরনের অত্যাচার চালাত, সেই মর্মান্তিক বিবরণ পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে আপনারা জানেন। আমি কিছুদিন দেবীপুরে ছিলাম। দেবীপুরের সেই জোতদার দেবী রায়ের অত্যাচারের কাহিনি আমি শুনেছি। ওখানে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড প্রীতীশ চন্দকে পাঠানো হয়েছিল সংগঠনের কাজ করতে, গরিব চাষিদের ঐক্যবদ্ধ করতে। দেবী রায় বন্দুক ধরেছিল তাঁর বুকে। কমরেড চন্দ বলেছিলেন, মারুন, তার আগে আমার কথাগুলোর জবাবটুকু দিন। জবাব দেয়নি। এই অবস্থায় সেখানে সংগঠন গড়ে উঠেছিল। এইসব এলাকায় আগেকার জমিদারেরা, জোতদারেরা ভাগচাষিদের, খেতমজুরদের, গরিব চাষিদের মানুষই মনে করত না, পোকামাকড়ের মতো মনে করত। এই মানুষদের শ্রম লুঠ করার ঈশ্বর-প্রদত্ত অধিকার তাদের আছে বলে মনে করত। গরিব মানুষের জীবন এবং মৃত্যুকে মনে করত তাদের ইচ্ছারই অধীন। কত খেতমজুর, ভাগচাষি, গরিব চাষিকে মারতে মারতে তারা মাটিতে পুঁতে দিয়েছে, সমুদ্রের জলে তাদের লাশ ভাসিয়ে দিয়েছে, মা-বোনেদের লুঠ করে নিয়ে এসে তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে, তার করুণ কাহিনি এখানকার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে আছে। সেই জোতদারদের অনেকের বাড়ি ছিল জয়নগর শহরেও। সেখানেও প্রায়ই শোনা যেত এই গরিব মানুষদের ঘর থেকে ছিনিয়ে আনা অসংখ্য নারীর আর্তনাদ। তাদের একমাত্র পরিণতি ছিল মৃত্যু। এসব কাহিনি আপনারা জানেন। তখন কলকাতার কয়েকজন যুবক কমরেড শিবদাস ঘোষের মহান চিন্তা এবং চরিত্রের সংস্পর্শ পেয়েছিল, সারা ভারতবর্ষ তখনও তাঁকে জানত না, চিনতও না। কমরেড শিবদাস ঘোষ তখন তরুণ বয়সের কমরেড শচীন ব্যানার্জীকে পাঠিয়েছিলেন সুন্দরবনের প্রান্তে প্রত্যন্তে। তিনিই কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তার আলোকে প্রথম জাগিয়েছিলেন সুন্দরবনের নির্যাতিত মানুষকে, জাগিয়েছিলেন উন্নত মর্যাদাবোধে, মনুষ্যত্ববোধে। গড়ে তুলেছিলেন প্রথম সংগঠন।

এই জয়নগরেই রূপ-অরূপ মঞ্চে পার্টির প্রথম প্রতিষ্ঠা কনভেনশন হল ১৯৪৮ সালের ২৪ এপ্রিল। কমরেড শিবদাস ঘোষ পুঁজিপতি ও জোতদার শ্রেণির চাপানো সমস্ত শোষণ-অত্যাচারের সম্পূর্ণ অবসানের পথের দিশা দেখিয়েছিলেন। কমরেড শিবদাস ঘোষ, কমরেড শচীন ব্যানার্জী, পরবর্তীকালে কমরেড নীহার মুখার্জী, কমরেড সুবোধ ব্যানার্জী, কমরেড প্রীতীশ চন্দ, কমরেড তাপস দত্ত গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় গিয়ে এ জেলার মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন। কমরেড শিবদাস ঘোষের বিশ্লেষণ ও তাঁর আহ্বান এই জেলার মানুষের বুকে গভীরভাবে দাগ কেটেছিল। এতদিনের লাঞ্ছনা, অপমান, এত প্রাণহানি, শত শত নারীর সম্ভ্রমহানি, ফসল লুঠ করে নেওয়া, মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া, সমুদ্রে ফেলে দেওয়া, গরু-বাছুর লুঠ করে নেওয়া– এর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হতে শিখিয়েছিল। ভাবতে শিখিয়েছিল, আমরাও মানুষ। মানুষ হিসাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে, আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ, সম্ভ্রমবোধ, আমাদের শ্রমের মর্যাদা, আমাদের বাঁচার অধিকারকে নিয়ে চোখের মণির মতো এই সংগঠনটিকে শক্তিশালী করে গড়তে হবে, একে রক্ষা করতে হবে।

এই আহ্বান গ্রামে গ্রামে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায়। মৈপীঠে প্রয়াত কমরেড কুঞ্জ পণ্ডিত তখন যুবক। তিনি আরও কয়েকজন যুবককে নিয়ে সেখানে প্রথম এই দলের সংগঠন গড়ে তোলেন। কমরেড কুঞ্জ পণ্ডিতের সন্তান এখন আমাদের পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড মনোরঞ্জন পণ্ডিত। সে এবং কমরেড সুধাংশু জানা একই স্কুলের সহপাঠী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। কমরেড কুঞ্জ পণ্ডিতের উপর তখন একের পর এক জোতদারের অত্যাচার চলছে– তাঁকে খুন করে দিতে পারে, এমনকি তাঁর ছেলেকেও খুন করে দিতে পারে। কমরেড মনোরঞ্জন তখন ক্লাস টেনে পড়ে। এই সময় একদিন কমরেড কুঞ্জ পণ্ডিত মনোরঞ্জনকে বলেন, তোকে যদি বাঁচতে হয়, তুই অন্য কোথাও গিয়ে থাক, তোর কোনও বন্ধুর বাড়িতে। কমরেড সুধাংশু জানার বাবা ছিলেন কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি। এই বাড়িতেই মনোরঞ্জন দু’বেলা খেত এবং পাশের একটা বাড়িতে রাতে ঘুমোত। তাদের দুজনের এই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই পার্টির সঙ্গে কমরেড সুধাংশু জানার যোগসূত্র। তখন কংগ্রেসের শাসন। জোতদারেরা সব কংগ্রেসী। সেই সময়ে মণিরতট অঞ্চলে কমরেড হাকিম শেখ কমরেড শিবদাস ঘোষের আহ্বানে পার্টি গড়ে তুলেছেন। একদিন তাঁকে পুলিশের ক্যাম্প ইনচার্জ সমর মজুমদার রাত্রিতে আলোচনা আছে বলে বাড়ি থেকে ডেকে এনে মণি নদীর ধারে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে। কংগ্রেস শাসনে জোতদারদের নির্দেশে এভাবেই পুলিশকে সেদিনও কাজে লাগানো হয়েছে। সেই কমরেড হাকিম শেখের বড় ছেলে, অন্য ছেলেরাও, বিশেষ করে তাঁর ছোট ছেলে কমরেড আনসার, এখন যে ওখানে দলের দায়িত্বে আছে– এঁরা সবাই বাবার এই শহিদের মৃত্যুবরণকে বুকের ভেতরে বিবেক করে রেখেছে, এই দলই করছে। তারা জানে, এর মধ্যেই আছে গরিবের বাঁচার শক্তি, এর মধ্যেই আছে জীবনের সত্যিকারের মূল্য। মৈপীঠের কংগ্রেসী জোতদারেরা এই সমর মজুমদারকে মৈপীঠে নিয়ে যায় কমরেড কুঞ্জ পণ্ডিতকে খুন করার জন্য। এই সময়ে ওই এলাকায় পার্টির আর এক জনপ্রিয় নেতা ছিলেন কমরেড জিতেন পাল। সমর মজুমদার মৈপীঠে এসেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে কমরেড কুঞ্জ পণ্ডিত সহ আমাদের নেতাদের, সক্রিয় কর্মীদের ধরে ধরে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে, এমনকী কমরেড জিতেন পালকে গাছের ডালে পা বেঁধে ঝুলিয়ে সারাদিন ধরে অত্যাচার চালিয়েছে। মনোরঞ্জনের তখন মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা। পুলিশ হেডমাস্টারকে বলে ওর পরীক্ষা বন্ধ করে দিল। হেডমাস্টার তাকে বলেন, যেখানে পারিস তুই চলে যা, না হলে তোকে খুন করে ফেলবে। তিনি কিছু টাকা দিয়ে বলেন জয়নগরের দিকে চলে যা। মনোরঞ্জন পণ্ডিতকে চলে আসতে হয়। ইতিমধ্যে একদিন সুধাংশু জানা কুঞ্জ পণ্ডিতের বাড়ি গিয়ে দেখে তিনি খুদ ভাজা খাচ্ছেন। এই দারিদ্র্য দেখে কিশোর সুধাংশু খুব অবাক হয়ে যায়। কারণ সুধাংশু জানার পরিবার ছিল সচ্ছল। খাওয়া পরার অভাব ছিল না। এটা দেখে তার আরও বেশি আকর্ষণ জাগে এই দলের প্রতি। যে মানুষটা ভাল করে খেতে পায় না, সে কিসের জোরে এইরকম একটা দল করে– এটাই কিশোর সুধাংশু জানাকে ভাবায়। এ দিকে তার বন্ধু মনোরঞ্জন তখন কলকাতায় রিক্সা চালায়। মনোরঞ্জনের এই অবস্থা জেনে সুধাংশু ঠিক করে সে-ও পরীক্ষা দেবে না। মনোরঞ্জন ওকে বোঝায় তুমি পরীক্ষা দাও। রাজি করায়। এই ছিল তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা। এরপরে মনোরঞ্জন সহ কমরেড কুঞ্জ পণ্ডিত, কমরেড জিতেন পালকে নিয়ে কমরেড সুবোধ ব্যানার্জী যান ডিএম, এসপির কাছে, অত্যাচারের চিহ্ন দেখান। এই চাপের ফলে সমর মজুমদার বদলি হয়, পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। এই সময় সুধাংশু ও মনোরঞ্জন বন্ধুদের নিয়ে কী করে দলকে গড়ে তোলা যাবে ভাবতে থাকে। দুজন মিলে ফুটবল ক্লাব তৈরি করে, কবাডি খেলা শুরু করে এবং এই এলাকায় কয়েকটা থানা জুড়ে খুব শক্তিশালী একটা টিম গড়ে তোলে। এলাকার যুবকদের যুক্ত করে নাটক, গান, মনীষী চর্চা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে থাকে। এর মাধ্যমেই তাদের বন্ধুদের মধ্যে মহান চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তার প্রতি আকর্ষণ জাগাতে থাকে।

কমরেড সুধাংশু জানার রাজনৈতিক জীবনের এই হল সূচনাপর্ব। কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষাকে যেভাবে বহু নেতার জীবনসংগ্রাম থেকে তিনি বুঝেছেন, সেইভাবেই এগিয়ে গিয়েছেন। ১৯৮৪ সালে কমরেড জিতেন পালের উদ্যোগে মৈপীঠ সহ আশপাশের আরও কয়েকটি অঞ্চলের ছাত্র-যুবকদের নিয়ে মৈপীঠেই একটি রাজনৈতিক শিক্ষাশিবির হয়। কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তা বা শিক্ষা কী, কমরেড শিবদাস ঘোষের পথ কী করতে বলে, কমরেড শিবদাস ঘোষের নীতি-আদর্শ ও উন্নত চরিত্রকে ভিত্তি করে নিজের সংগ্রাম কেমন হওয়া দরকার, সেইসব বিষয়ে এই শিক্ষাশিবিরে আলোচনা করেন তৎকালীন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড প্রভাস ঘোষ, বর্তমানে তিনি আমাদের সর্বোচ্চ নেতা, দলের সাধারণ সম্পাদক। এই ক্লাসে কমরেড সুধাংশু জানা, কমরেড মনোরঞ্জন পণ্ডিত ও তাঁদের যুব-বন্ধুরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই উপস্থিত ছিল এবং তাঁরা এই ক্লাসের আলোচনা শুনে মুগ্ধ ও খুবই অনুপ্রাণিত হয়। মহান নেতা শিবদাস ঘোষের শিক্ষার মর্মবস্তুকে আয়ত্ত করতে হলে কী ভাবে নিজেদের সংগ্রাম করতে হবে কমরেড সুধাংশু জানা তা গভীরভাবে বুঝতে পারেন এবং কমরেড শিবদাস ঘোষের আদর্শের প্রতি আকর্ষণ তাঁর গভীর ও দৃঢ় হয় এবং তারপর থেকেই তিনি আদর্শগত চর্চাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কমরেড শিবদাস ঘোষের বই, অন্যান্য রাজনৈতিক বই এবং শরৎ সাহিত্যও নিয়মিত পড়তে শুরু করেন। শরৎ সাহিত্য পড়তে পড়তে প্রায়ই তাঁর চোখ জলে ভরে যেত– এটা তাঁকে ঘনিষ্ঠভাবে যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা সকলেই জানেন। অত্যন্ত সংবেদনশীল মনের, উচ্চ হৃদয়বৃত্তির অধিকারী হতে থাকেন কমরেড সুধাংশু। এই সময়ে তিনি নিজেকে ভেঙে গড়তে শুরু করেন। আমাদের জীবনে যেমন অনেকেই, ছোটবেলায় যেমন হওয়া উচিত তেমন কাজ করতে পারিনি। তেমন কিছু দোষের দিক আমার নিজেরও যেমন ছিল, আপনাদের অনেকেরই যেমন হয়ত ছিল, তেমন তাঁরও ছিল। মনোরঞ্জন পণ্ডিতেরও হয়ত ছিল। কিন্তু মানুষ তো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। হয় পিছিয়ে যায়, না হলে বিকশিত হয়, এগোয়। একটা সাধারণ বন্ধুত্ব কীভাবে একটা সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে একজনকে দলের কাছে নিয়ে এল এবং বিকশিত হতে হতে কোথায় উন্নীত হল, আমি সেই কথা কয়েকটি ঘটনা দিয়ে বলব।

কয়েক দিন আগে ডিওয়াইও-র সম্মেলনে যাওয়ার পথে একটা মোটরভ্যান অ্যাক্সিডেন্ট হয়। কয়েকজন কর্মী মারাত্মক আহত হয়। চিকিৎসায় প্রচুর টাকা খরচ হয়ে যায়। সুধাংশু জানার যা টাকা ছিল সব নিঃশেষ হয়ে যায়। তারপর তিনি একটা জমি বন্ধক দেন ৯০ হাজার টাকায়। ৭০ হাজার টাকা দিয়ে সেই চিকিৎসার বিল পরিশোধ করেন। এ ছাড়া মৈপীঠের কমরেড লাল্টু সরদারকে অনেকে চেনেন, খুবই গরিব তার পরিবার– সে মহারাষ্ট্রে গিয়েছিল ডিওয়াইও-র সর্বভারতীয় সম্মেলন হবে বলে। করোনার কারণে সেখানে চার মাস আটকে পড়েছিল। এই সময় তার সংসার চালানোর সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছিলেন কমরেড সুধাংশু। এ ধরনের ঘটনা ওঁর ক্ষেত্রে একটি দুটি নয়। এ ছাড়াও অনেক দিন আগে থেকেই লাল্টুর একটি সন্তানকে তিনি নিজের বাড়িতে রেখে পড়িয়ে বড় করেছেন। সে এবার মাধ্যমিক পাশ করল। এখানে কমরেড সুধাংশু জানার স্ত্রী কমরেড গীতা জানা উপস্থিত রয়েছেন। কমরেড সুধাংশু একটা একটা করে তাঁর কিছু গয়নাও বিক্রি করে দিয়েছেন কোনও দুঃস্থ কমরেডের চিকিৎসা বা অন্য কোনও সাহায্যের জন্য। সব কথা তিনি হয়ত পার্টির কাছে রাখতেও পারেননি। কমরেড সুধাংশু জানা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন। তার জন্য সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে দু’টাকা করে নিতেন। কিন্তু কোনও গরিব কমরেডের থেকে নিতেন না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বুঝতে পারলে তার খাবারের টাকাটাও দিতেন।

কেমন করে কমরেড সুধাংশু জানার মন বিকশিত হয়েছে দেখুন। অনেকেই জানেন, আগে সুধাংশু অল্পেতেই রেগে যেতেন, রুক্ষ্ম-কর্কশ মনে হত তাঁকে। রেগে গেলে ধৈর্য হারাতেন, চিৎকার করে কথা বলতেন। আবার সেই সুধাংশুরই গল্প উপন্যাস পড়তে পড়তে চোখ ভিজে যেত। কোনও গরিব মানুষ, সে পার্টি কমরেড না হলেও বিপদে পড়েছে জানলেই তিনি সাহায্য করার জন্য ছুটে যেতেন। জমি বিক্রি করে হোক, স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে হোক, টাকা জোগাড় করে তাদের সাহায্য করতেন। নিজের সন্তানদের মধ্যে ছোট মনের সামান্য পরিচয় পেলে বা তারা কোনও অনৈতিক কথা বলে ফেলেছে জানলে তিনি প্রচণ্ড রেগে যেতেন। ধীরে ধীরে কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাকে যেমন যেমন ভাবে তিনি উপলব্ধি করেছেন, কমরেড নীহার মুখার্জী, কমরেড শচীন ব্যানার্জী, কমরেড সুকোমল দাশগুপ্ত, কমরেড প্রভাস ঘোষের মাধ্যমে কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষাকে তিনি যেমন করে বুঝেছেন, তেমন করে নিজেকে পরিবর্তন করেছেন, ক্রমেই বিকশিত হয়েছেন। কোথাও সাফল্য, কোথাও ব্যর্থতার পথ বেয়ে, সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুনরায় যোগ্যতা, ক্ষমতা, অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি এগোতে থাকেন এবং ক্রমেই সকলের মনে মর্যাদা ও শ্রদ্ধার স্থান করে নেন।

আগে তাঁর মতের সঙ্গে কারওর ভিন্নমত হলে রাগারাগি করতেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যৌথ সিদ্ধান্ত মানতেন। কিন্তু গত ৪-৫ বছর অন্যদের কথা তিনি শুধু বেশি শুনতেন তাই নয়, অন্যদের কথা শুনে বুঝতে পারলে নিজের ভুল স্বীকার করতেন। এমনকী হয়ত কোনও ক্ষেত্রে সমর্থন করতে পারছেন না, কিন্তু অন্যরা সমর্থন করছেন– এ কথা জেনে তিনি সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতেন। যদি মনেও করতেন– এটা ঠিক হচ্ছে না, তা সত্ত্বেও বলতেন এটা যৌথ সিদ্ধান্ত বলেই আমি মানব। এমনকি জুনিয়ার কর্মীদের ক্ষেত্রেও এটা করতেন। এটা তো কম বড় সংগ্রাম নয়। নিজের মিথ্যা মর্যাদাবোধকে, ব্যক্তিবাদকে পরাস্ত করার কঠিন সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে ক্রমেই জয়ী হচ্ছিলেন, এগোচ্ছিলেন তিনি।

এই এলাকায় কংগ্রেস আমলে এবং পরবর্তীকালে সিপিএম আমলে আমাদের দলের ওপরে বহু হামলা হয়েছে। চরম পর্বে অনেক সময়েই কমরেডরা তাঁকে সরে যেতে চাপ দিয়েছে। বলেছে, তুমি ওদের টার্গেট, চলে যাও। তিনি সরেননি। একটা কথাই শুধু বলেছেন, ‘মাটি ছাড়া যাবে না, কমরেড’।

তাঁর চরিত্রের আর একটা বৈশিষ্ট্য আমি দেখেছি। কমরেড প্রদীপ হালদার তাঁর থেকে বয়সে অনেক ছোট। পার্টি পরিবার থেকে কলকাতায় পড়তে গিয়ে ডিএসও-র মাধ্যমে পার্টির সান্নিধ্য পেয়ে কমরেড প্রদীপ দ্রুত বিকশিত হয়ে এলাকায় সংগঠকের ভূমিকা পালন করতে থাকে এবং সকলের কাছেই অত্যন্ত স্নেহ ও শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে যায়। আপনারা জানেন, ক্যান্সারে এই কমরেডটির অকালে মৃত্যু হয়। পার্টির এবং এই এলাকায় সংগঠন ও আন্দোলনের বিরাট ক্ষতি হয়। গত ১০-১২ বছর কমরেড সুধাংশু ও কমরেড মনোরঞ্জন উভয়েই বুঝতে পারতেন, পার্টির আদর্শভিত্তিক চরিত্রের দিক থেকে কমরেড প্রদীপ হালদার তাঁদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে গেছে। দুজনেরই গভীর শ্রদ্ধা ছিল কমরেড প্রদীপের প্রতি। শুরুতে কমরেড মনোরঞ্জনই সংগঠক হিসাবে কমরেড সুধাংশুর থেকে এগিয়ে তাঁকেও এগিয়ে এনেছেন, নেতার ভূমিকা পালন করেছেন। শেষ দিকে কমরেড মনোরঞ্জন বুঝতেন, তাঁর অনুগামী বন্ধু কমরেড সুধাংশু জীবন সংগ্রামের গভীরতায়, ব্যাপকতায় আর পিছিয়ে নেই, কখন যেন দলের সকলের মনেই শ্রদ্ধার আসন পেয়েছেন। এই উপলব্ধি তো তাঁরও বিপ্লবী সৎ মনেরই প্রকাশ।

কমরেড সুধাংশুর আপাত রুক্ষতার আবরণের ভিতরে অত্যন্ত কোমল সংবেদনশীল হৃদয়টা সর্বদাই দুঃস্থ কর্মীদের প্রতি উদ্বেল হয়ে থাকত। আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, তাঁর নিজের জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত সাধারণ মানের। তাঁর হাতে কোনও দিনই ঘড়ি ছিল না। তাঁর ছেলে সম্প্রতি একটা ভাল টাইটান ঘড়ি কিনে দিয়েছিল। কয়েকদিন পরে এক সমর্থক এসে ঘড়িটা নেড়ে চেড়ে বলছে, বাঃ বেশ সুন্দর তো ঘড়িটা। সুধাংশু বললেন, তোর ভাল লেগেছে? নিবি ওটা? নিয়ে নে। সে তো খুব সঙ্কোচে পড়ে গেল। কিন্তু নিতেই হল। ওঁর মেয়ে সুতপা ও জামাই প্রায়ই আসত শহর থেকে, এলে মিষ্টি আনত। সুতপা বাবার বৈশিষ্ট্য জানত, বিলি না করে একটাও খাবে না– সেইভাবেই আনত। আর আনত বাক্স ভর্তি হোমিওপ্যাথি ওষুধ। গরিবদের জন্য লাগবে যে। একবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মহিলা প্রার্থী কাউকেই রাজি করানো যাচ্ছে না। প্রার্থী হলেই সিপিএম প্রচণ্ড অত্যাচার করবে আগের মতো। সুধাংশু প্রস্তাব দিল, গীতাকে প্রার্থী করা হোক। সুধাংশুর স্ত্রী কমরেড গীতা তখন খুবই অসুস্থ। সবাই আপত্তি করল, ওই অসুস্থ শরীরে, মারা যাবে তো! সুধাংশু বললেন, মরতে তো সবাইকেই হবে কমরেড, কাউকে তো দাঁড়াতেই হবে। ও-ই প্রার্থী হোক।

এ যেমন একটা ঘটনা, ঠিক বিপরীত ঘটনা শুনুন। গত পঞ্চায়েতে মহিলা প্রধান করতে হবে। পার্টি মিটিংয়ে অনেকেই বলল, কমরেড গীতাকেই প্রধান হিসাবে মনোনীত করা হোক। সুধাংশুর প্রবল আপত্তি। বললেন, আমি অঞ্চলের পার্টি নেতা, আমার স্ত্রীকে প্রধান করা হলে আমার সম্মান, পার্টির সম্মান দুই-ই নেমে যাবে। এটা করা যায় না। কমরেডস, এইজন্যই বলছিলাম, ক্রমবিকাশের সংগ্রাম কমরেড সুধাংশুকে এ পার্টির সকলের কাছে মর্যাদার আসন দিয়েছে। এমন কত যে ছোট ছোট ঘটনা আছে তা একটা সভায় বলে শেষ করা যাবে না। এই সংগ্রামের পথ চেয়েই কমরেড সুধাংশু ক্রমশ বিকশিত হয়ে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল উনি আরও কঠিন ও বড় দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য হয়ে উঠবেন।

১৯৯২ সালের ঘটনা আপনাদের অনেকেরই স্মরণে আছে। মৈপীঠে সিপিএম তখন প্রচণ্ড তাণ্ডব চালাচ্ছে। সেই সময় পার্টির কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য এবং জেলা সম্পাদক, জেলার আপামর জনগণের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় কমরেড ইয়াকুব পৈলান এসেছিলেন মৈপীঠে। সিপিএম-এর দুষ্কৃতীবাহিনী এই বৃদ্ধ নেতাকে ঘিরে ধরে অকথ্য গালাগাল করে মারতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে কমরেড সুধাংশু ঝাঁপিয়ে পড়ে কমরেড ইয়াকুব পৈলানকে জড়িয়ে ধরে সমস্ত আঘাত নিজের গায়ে নেন। এই দৃশ্য দেখে আরও একজন কমরেড অন্য দিক থেকে কমরেড ইয়াকুব পৈলানকে জড়িয়ে ধরে আড়াল করে রাখেন। কমরেড সুধাংশু জানা দ্রুত এইভাবে এগিয়ে না এলে কমরেড ইয়াকুব পৈলানকে সে-দিনই সিপিএম ঘাতকবাহিনী মেরে ফেলত। এই আক্রমণের পর থেকেই কমরেড ইয়াকুব পৈলানকে খুবই অসুস্থ হয়ে আমৃত্যু অবর্ণনীয় দৈহিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে।

কমরেডস ও বন্ধুগণ, কমরেড সুধাংশু জানা তো গরিব মজুর-চাষি-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষের বাঁচার স্বার্থে সংগ্রাম করেছেন। সেটা কি অপরাধ? সুন্দরবনে আপনারা কী দেখছেন? কংগ্রেস আমলের জোতদাররা পরবর্তীকালে সিপিএম-এর আমলে সব সিপিএম হয়ে গেল, অনেকে সিপিএমের নেতাও হয়ে গেল। আপনারা জানেন, সিপিএম সরকারের একজন মন্ত্রী ছিল যে আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে খুন করিয়েছে। এই জেলায় আমাদের যে ১৬৫ জনের বেশি খুন হয়েছেন, তার মধ্যে সিপিএম শাসনকালে হয়েছে ১৫০ জনের বেশি। এই সমস্ত নেতা-কর্মীদের খুনের পিছনে নেপথ্য কারিগর হিসাবে ছিল এই মন্ত্রী। এমনকী হাসতে হাসতে সে নিজের পার্টির কমরেডদেরও খুন করিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে তাকে মনে হবে ভদ্র, শান্ত– তেমনই ছবি বেরোয় কাগজে। কারণ কাগজের মালিকরাও চায় এই ধরনের নেতা, যে ভোটে জিতলে বড়লোকদের, পুঁজিপতিদের লুণ্ঠনের শক্তিকে বাড়িয়ে তুলবে, অন্য দিকে গরিবদের বোঝাবে লাল ঝাণ্ডা তো আছে, লাল ঝাণ্ডা একদিন তোদের ভাল করবে। দেবীপুরে ১৯৯৭ সালে ১৪ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে সহ পাঁচজনকে সারা রাত পিটিয়ে খুন করে বস্তায় পাথর দিয়ে ভরে ঢাকির মুখে নদীতে ফেলে দিল। কমরেডরা সারারাত নৌকা নিয়ে খুঁজছে, কেউ নদীতে নেমে খুঁজছে। সকালে নদীর পাড়ে সেই মন্ত্রী এসে পুলিশ অফিসারকে হাজার হাজার মানুষের সামনে বলল, এস ইউ সি-ই ওদের কোথাও লুকিয়ে রেখেছে, আপনাদের ধোঁকা দিচ্ছে, আপনারা চলে যান। ভিড় সরিয়ে দিন। সেই সময় নদীগর্ভ থেকে ৫টি বস্তা পাওয়া গেল। বস্তার ভেতরে ৫ জন কমরেডের লাশ আর ইট-পাথর ভর্তি। পঞ্চশহিদের সেই মর্মান্তিক ঘটনার আজও কোনও বিচার হয়েছে? এই যে তৃণমূল কংগ্রেস মৈপীঠে ১০৮টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ভেঙে দিয়েছে, সমস্ত কিছু লুঠ করে নিয়েছে, কতজনের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে– কত জন অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে? কোনও ক্ষতিপূরণ দিয়েছে সরকার? অথচ আমরা জানি এই যে যুব তৃণমূল বলে যারা গুণ্ডামি করল, মৈপীঠে আমাদের সর্বোচ্চ নেতাকে খুন করল, কত ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল, লুঠ করল, সেই ক্রিমিনালরাই সিপিএম আমলে সিপিএম-এর ঝাণ্ডা নিয়ে আমাদের কিশোর সংগঠন কমসোমল-এর সদস্য ১৪ বছরের কিশোরী কমরেড পূর্ণিমা ঘোড়ূইকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছিল। ১৯৮৯ সালের ৯ ডিসেম্বরের সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড আপনাদের সকলেরই স্মরণে আছে। এই মৈপীঠেই সিপিএম খুনিবাহিনী মজুর-চাষি আন্দোলনকে ও আমাদের দলের সংগঠনকে নিশ্চিহ্ন করতে এক বীভৎস তাণ্ডব চালিয়েছিল। আমাদের অত্যন্ত মূল্যবান ৭ জন কমরেডকে তারা সেই দিন হত্যা করেছিল। কমরেড উত্তম মুণ্ডা, কমরেড আওলাদ শেখ ও কমরেড পালান হালদারকে হত্যা করে নদীর চরে পুঁতে দেয়। কমরেড সুখময় পুরকাইত, কমরেড নিমাই পুরকাইত ও কমরেড দিলীপ গিরিকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে এবং কমরেড সুষেণ মাইতি গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯৪ সালে এই বাহিনীই কমরেড ভক্তি জানা ও তাঁর স্ত্রী কমরেড আরতি জানাকে মারধোর করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যা করেছে। তাঁদের দুই শিশুকন্যা সহ আত্মীয়দের তাড়িয়ে দেওয়ার পর দেহ পুড়িয়ে দিয়েছে। আপনারা জানেন এইসব কাহিনী।

সিপিএম সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে লাখো কৃষকের জমি টাটা-সালিমের জন্য জবর দখল করতে গণহত্যা, গণধর্ষণ পর্যন্ত করিয়েছে এবং তা দেখেই সারা বাংলায় জনগণ এই শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। ৩৪ বছরের ক্ষমতাভোগ, দুর্নীতি, দলবাজি ও গণতন্ত্র ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে সিপিএম বামপন্থাকেই জনমনে অশ্রদ্ধার অতলে নামিয়েছে। আর কর্মীদের এমন রাজনীতি শিখিয়েছে যে, যেই তৃণমূল সরকারে গেল, দলকে দল ক্রিমিনাল বাহিনী ও সুবিধাভোগীরা তৃণমূল হয়ে গেল। মৈপীঠেও সেই একই কাণ্ড। গত ৪ জুলাই সকালে কমরেড সুধাংশুকে খুন করার আগের দিন ৩ জুলাই যারা তাণ্ডব চালাল, তারা সব আগে সিপিএমের ক্রিমিনাল বাহিনীতে ছিল। তারাই এখন তৃণমূলের জামা পরে নিয়েছে। এই হচ্ছে এদের রাজনীতি। কোথায় পার্থক্য তাদের? তৃণমূলের সেই সব প্রতিশ্রুতি– দুর্নীতি ও গুন্ডামি বন্ধ করার আর পুলিশ-প্রশাসনকে দলদাস বানানোর বিরুদ্ধে সেই ঘোষণা আজ কোথায়? এরাও যে পুঁজিপতিদের সেবা করতে গিয়ে একই পথে যাবে, আমাদের নেতৃত্ব তো সেই হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছিল। সিপিএম আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? পরিচিত মানুষদের থেকে খোঁজ নিলেই আপনারা জানতে পারবেন, পশ্চিমবাংলার সমস্ত জেলাতেই গত ভোটেও সিপিএম তার কর্মীদের বলেছে, যেখানে আমরা জিততে পারব না, সেখানে বিজেপিকে ভোট দাও। তারা বলেছে, বিজেপি জিতুক, তারপরেই আমাদের ক্ষমতায় আসার সুযোগ হবে। নেতারা স্লোগান তৈরি করে দিয়েছে– ‘আগে রাম পরে বাম’। রাম মানে বিজেপি। এ বারেও ইতিমধ্যেই গ্রামে গ্রামে সেই কথা বলছে। যদি কোনও দিন এ রাজ্যে  পুঁজিপতিরা নিজেদের স্বার্থে আবার সিপিএমকে ক্ষমতায় আনতে চায়, পুঁজিপতিদের টাকা আর মিডিয়ার প্রচারের জোরে, প্রশাসনের ব্যাকিংয়ের জোরে, দেখবেন হালের বিজেপি-তৃণমূল সব সিপিএম হয়ে গেছে।

তা হলে এই যে রাজনীতির নামে একটা খেলা চলছে, এই রাজনীতিতে গরিবের কী হবে? গরিব মানুষ ঠকে কেন? গরিব ঠকে কারণ সে তার শত্রুকে চিনতে পারে না। মজুর-চাষি তার শত্রুকে চিনতে পারে না। চিনতে পারে না বলেই এদের নাটকে সে বারবার বিভ্রান্ত হয়। তাদের ছলনায় সে ঠকে। যেমন কাহিনি আছে, সীতাকে রাবণ চুরি করতে পারত না যদি রাবণ নিজের চেহারা নিয়েই আসত। সে এসেছিল সাধুর বেশে। ভিক্ষা চেয়েছিল। সেই ছলনায় সীতা ভুলেছিল। এইভাবেই এদেশের মানুষও বারবার ঠকছে। এই যেমন এখন বিজেপি করোনা ত্রাসের সুযোগে দেশবাসীর টাকায় গড়া দেশের রেল, খনি, হাসপাতাল সহ সব সম্পত্তি আম্বানি-আদানি-টাটাদের দিয়ে দিচ্ছে। ছাঁটাই, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারির সীমা নেই। জাতপাত-ধর্ম নিয়ে বিরোধ বাড়িয়ে আর সীমান্ত বিপন্ন রব তুলে সব ধামাচাপা দিচ্ছে। সেই সুযোগে যে শ্যামাপ্রসাদ, সাভারকর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের শক্তি বাড়াতে ‘৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল আর বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের সৈন্য বাহিনীতে যুবকদের নাম লিখিয়ে তাদের সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার ডাক দিয়েছিল, তাদের বলছে দেশপ্রেমিক, সর্বত্যাগী, আর দেশের শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা যোদ্ধা সুভাষচন্দে্রর নামের সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদ-সাভারকরকে এক আসনে বসাতে চাইছে। সুভাষচন্দ্রকে ওরা এভাবে কালিমালিপ্ত করতে চায়। মেনে নেবেন? চৈতন্য, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতার যে হিন্দুত্বের কথা বলেছিলেন, ওরা তাকে ধ্বংস করতে চায়, এমএলএ কেনাবেচার দুর্নীতিতে শত শত কোটি টাকা ঢালে, ওরা যেসব রাজ্যে ক্ষমতায় আছে, সেখানে ওদের এমএলএ-রা নারীধর্ষণে, মদ খেয়ে গুণ্ডামিতে ধরা পড়ছে। ওরা সত্যিই কোন ধর্ম চায়? বিজেপি-আরএসএস তো যুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা, নারীশিক্ষা, সতীদাহ উচ্ছেদ ও বিধবাবিবাহ প্রবর্তন-এর চরম বিরোধী। তাই ওরা বিদ্যাসাগর-রামমোহনের বিরোধী। ওরা এমনকি বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে, আপনারা জানেন। মোদির সব কথাই চালাকি আর মিথ্যায় ভরা। বিজেপি যেখানে ক্ষমতায় আছে, সেখানেই কৃষকের আত্মহত্যা, বেকারদের হাহাকার, মায়েদের আর্তনাদ বাড়ছে। চাকরি দেওয়া দূরে থাক, ওরা যখন তখন ছাঁটাইয়ের আইন করছে। চাষবাস, মাছচাষ, খুচরো ব্যবসা– সব বড় বড় মালিকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এই বিজেপির চালাকিতে আবার আপনারা ঠকবেন কেন? গরিব মানুষকে তাদের বাঁচার স্বার্থেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বাঁচার এটাই একমাত্র রাস্তা। পুঁজিবাদের সমস্ত শোষণ থেকে শোষিত মানুষের মুক্ত হওয়ার সংগ্রাম কমরেড সুধাংশু জানা যেভাবে গ্রহণ করেছিলেন, তা তাঁর জীবনের শেষ দু’দিনের ঘটনা জানলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।

২ জুলাই থেকে ওখানে লুঠতরাজ চলছে, কমরেড সুধাংশুকে সবাই বলেছে তুমি সরে যাও, তিনি কিন্তু সরেননি। ৩ জুলাই রাত্রিবেলায় জয়নগর থেকে ফোন করা হয়েছে তখন অন্য লোককে বলেছে, ফোনটা ধরো, লোকদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে, মারছে, পুলিশ আসছে না, আগে এদের রক্ষা করি। কমরেড নন্দ কুণ্ডু সহ অনেকেই তাঁকে বারবার বলেছেন, তুমি সরে যাও, তুমি ওদের টার্গেট। তখনও তিনি বলছেন, এই সময়ে এদের ফেলে আমি যেতে পারব না। সিপিএম আমলেও বারবার যখন আক্রমণ হয়েছে তখনও সবসময় বলেছেন, আমি সরব না। এখান থেকে সরলে, মাটি থেকে পা সরিয়ে নিলে সংগঠনের ক্ষতি হবে। গরিব মানুষের ঐক্যের ক্ষতি হবে। এবার যখন তাঁর ঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে, তাঁকে পেটাচ্ছে, তারা ঘরে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তেও, কমরেডরা যারা ওকে সরিয়ে নিতে এসেছিল, আর বাঁচা যাবে না বুঝে, সেই কমরেডদের সরিয়ে দিয়েছেন। সেই অবস্থাতেও তিনি কিন্তু আত্মসমর্পণ করার কথা ভাবতে পারেননি।

আপনারা সেই অবস্থার কথাটা একবার কল্পনা করুন। আমি ভাবছি সেই অবস্থায় পড়লে আমি কী করতাম? কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষাকে কেমনভাবে গ্রহণ করতে পারলে সেই অবস্থায় একজন এই কথা বলতে পারে! এর অর্থ কী, কমরেডস ও বন্ধুগণ? আপনাদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিতভাবে জেনেই তিনি শহিদের মৃত্যুবরণ করেছেন। খুনিরা পিটিয়ে পিটিয়ে আধমরা অবস্থায় আগুনে ফেলে তারপর গলায় শাড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছে, আর বাইরে প্রচার করছে এটা আত্মহত্যা। পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে, নানা স্তরে কারচুপি করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে। আপনারা কীভাবে এই ঘটনাকে নেবেন?

আপনাদের পূর্বপুরুষরা যাঁরা আপনাদের বাড়ির মানুষ, তাঁরা কমরেড শিবদাস ঘোষের আদর্শকে যখন বুকে নিয়েছিলেন, তখন সারা দেশে শুধুমাত্র কলকাতার গুটিকয়েক মানুষই সেই আদর্শকে চিনতে পেরেছিলেন। তখন এই দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুন্দরবনে কারা সেই পতাকাকে তুলে ধরেছিল নিজেদের জীবন বিপন্ন করে– আপনারা সেই নামগুলি স্মরণ করুন। তাদেরই আপনারা বংশধর। গৌরবময় সেই ঐতিহ্যের মানুষ হিসাবে আপনাদের কী করা উচিত তা ভাবুন। আপনারা জানেন কমরেড শিবদাস ঘোষের আদর্শ নিয়ে এই জেলায় প্রথমে কাজ করতে শুরু করেন কমরেড শচীন ব্যানার্জী। তিনিই শিবদাস ঘোষের কাছে নিয়ে যান কমরেড সুবোধ ব্যানার্জীকে। পরবর্তীকালে কমরেড শচীনদার কঠোর পরিশ্রমে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় পার্টির সংগঠন গড়ে ওঠে। সেই প্রচেষ্টা ও মহান নেতার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে সর্বস্ব পণ করা নেতা-কর্মী বাহিনী। তারই ফলে কমরেড ইয়াকুব পৈলান, কমরেড আমির আলি হালদার, কমরেড রেণুপদ হালদার, কমরেড রবীন মণ্ডল, কমরেড আমিনুদ্দিন আখন্দ, কমরেড নলিনী প্রামাণিক গড়ে উঠে নেতৃত্বের স্তরে দায়িত্ব নেন। তারপর আসেন কমরেডস ধীরেন ভাণ্ডারি, হাকিম শেখ, সহদেব মণ্ডল, মদন তাঁতি, কুঞ্জ পণ্ডিত, কৃষ্ণ গাঁতাইত, মহাদেব হালদার, মোকাররম খাঁ, সুজাউদ্দিন আখন্দ, সুবল সরদার, তরণী পুরকাইত, তরণী মণ্ডল, ধীরেন শিকারি, শরৎ তাঁতি, রাজারাম রায়মণ্ডলরা। এইরকম এক একটি এলাকার আদর্শবান নিঃস্বার্থ নেতাদের নেতৃত্বে তাঁদের প্রাণপাত পরিশ্রম ও আন্দোলনে খেতমজুর-গরিব চাষিদের নিয়ে এলাকায় এলাকায় এই দল গড়ে ওঠে। এঁদের মধ্যে অনেকেই প্রথাগত লেখাপড়ার কোনও সুযোগই পাননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমরেড শিবদাস ঘোষের অমূল্য শিক্ষার মর্ম বুঝে সেই শিক্ষাকে বুকের মধ্যে বহন করে তাঁরা এই দলটি গড়ে তুলেছেন, একে রক্ষা করার জন্য প্রাণপাত চেষ্টা করেছেন।

কমরেড ধীরেন ভাণ্ডারির কথা আপনারা অনেকেই জানেন। তিনি কমরেড শিবদাস ঘোষের সঙ্গে সারা রাত তর্ক করেছেন– মার্কসবাদ কী, মার্কসবাদ কীভাবে সত্য পথের সন্ধান দেয়, এই নিয়ে। তিনি ঢেঁকিতে ধান ভাঙিয়ে রায়দিঘি বাজারে বিক্রি করতেন। কমরেড শিবদাস ঘোষ এরকম নিরক্ষর কতজনকে মার্কসবাদী বিশ্লেষণ ও নৈতিকতার সন্ধান দিয়ে দলের সাথে যুক্ত করেছেন! এঁদের অনেককেই কংগ্রেস বা সিপিএম আমলে হত্যা করা হয়েছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ভরা হয়েছে। অনেকে বৃদ্ধ বয়সেও দলের ঝাণ্ডা তুলেই মৃত্যু বরণ করেছেন। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় প্রথম শহিদ হয়েছেন দেউলবাড়ির কমরেড সুধীর হালদার। এ ছাড়া দেবীপুরের কমরেড সুষেণ মাইতি, নলগোড়ার কমরেড অশোক হালদারের মতো সম্ভাবনাপূর্ণ অত্যন্ত মূল্যবান এবং বামুনগাছির ইয়াকুব মোল্লা, ধনঞ্জয় সরদার, সালাম শেখের মতো উদীয়মান কত কর্মীকে তারা খুন করেছে। ৯ বারের বিধায়ক কমরেড প্রবোধ পুরকাইত ও কমরেড অনিরুদ্ধ হালদার সহ কত প্রবীণ নেতাকে সিপিএম মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে রেখে দিয়েছে। যাঁদের কথা বললাম, তাঁদের পরিবারের সন্তান আপনারা। এই জেলা থেকেই পার্টির শুরু, আজ সারা দেশে পার্টি ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের ২২টি রাজ্যে কমরেড শিবদাস ঘোষের মহান আদর্শকে পাথেয় করে কমরেডরা সংগঠন গড়ে তুলছেন, গরিব মানুষের দাবি নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছেন। আজ শুধু বাংলার সব জেলাতেই নয়, সারা দেশের কয়েক লক্ষ শ্রমিক-কৃষক সহ হাজার হাজার ছাত্র-যুবক-মহিলা-চিকিৎসক-আইনজীবী-বিজ্ঞানী-শিক্ষক-অধ্যাপক দলের কাজ করছেন, অনেকেই এগিয়ে আসছেন। আমি কয়েকটি রাজ্যের কমরেডদের সাথে মিশেছি। তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় আমি তাদের কাছ খুবই থেকে প্রেরণা পেয়েছি। দেখেছি, দক্ষিণ ২৪ পরগণার নাম শুনলে তাদের কী গর্ববোধ! এখানকার মানুষই অত্যাচার লাঞ্ছনা সহ্য করেও কমরেড শিবদাস ঘোষকে প্রথম বুকে টেনে নিয়েছিল। এখানকার কমরেডদের সম্পর্কে তাদের অসীম শ্রদ্ধা। উত্তরাখণ্ডের সাথে একটি অনলাইন মিটিংয়ে আমি যখন মৈপীঠের এই ঘটনা তাদের জানাই, তখন তাদের কথায় যেন আত্মীয়বিয়োগের বেদনা ঝরে পড়েছে। মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের আদর্শ নিয়ে যেখানে প্রথম এই দল গড়ে ওঠে, সেখানে কমরেডরা এইভাবে প্রাণ দিয়ে লড়ছে। এখানকার কমরেডরা পুলিশের দেওয়া সাহায্য, খাদ্য, ত্রাণ নিতে চায়নি। এই কথায় তাদের গর্ববোধ আমি লক্ষ করেছি। এর আগেও কংগ্রেস ও সিপিএম আমলে কত কমরেডের প্রাণ গেছে, তাদের পরিবারের সন্তানরা এই দলকে চোখের মণির মতো আবার সংহত করেছে শুনে তাদের কী উৎসাহ!

আপনারা অনেকেই জানেন, অন্যান্য প্রদেশের মানুষের কাছেও শুনেছেন, সারা দেশে একটা কথাই আজ সর্বত্র শোনা যাচ্ছে– এই একটা মাত্র দল কারওর কাছে বিক্রি হয়নি, অন্যায়ের কাছে মাথা নিচু করেনি। এরা ভোটবাজ, ক্ষমতালোভী দল নয়। এদের মন্ত্রী করতে চাইলেও নীতিভ্রষ্ট হয়ে এরা মন্ত্রী হয় না। এরা গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষের স্বার্থ নিয়ে আন্দোলন করে। শুধু তাই নয়, মনুষ্যত্ব রক্ষার আন্দোলনও একমাত্র এরাই করে। এরা মদ-জুয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তা রুখে দেয়। একমাত্র এরাই নারীর সম্ভ্রমরক্ষা, নারী পাচার, নারীধর্ষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলন করে। আবার এরা উন্নত মনুষ্যত্ব, উন্নত চরিত্র রক্ষার জন্য রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল, প্রেমচন্দ, ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ, ভগৎ সিং, সূর্য সেন, নেতাজি, প্রীতিলতা– এইসব মনীষী ও বিপ্লবীদের জীবনসংগ্রাম, তাদের স্মরণদিবস উদযাপন করে, চর্চা করে। এরা পুরনো দিনের স্বদেশিদের মতো। অজানা অচেনা মানুষই বলেন, ওরা এসব কেন করে জানেন? কারণ তারা এ-রকম হতে চায়।

এই কথা আজ রাজ্যে রাজ্যে মানুষ বলছে, বাংলার জেলায় জেলায় মানুষ বলছে যে, যখন বেশির ভাগ মানুষ স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে, অনেকে বাবা-মাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, স্বামী স্ত্রীকে খুন করছে, স্ত্রী স্বামীকে খুন করছে, যখন নিজের স্বার্থ ছাড়া প্রায় কেডই কিছু ভাবছে না, তখন কী করে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর কর্মীরা সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্র নিয়ে এভাবে তৈরি হচ্ছে? যারা এমন নিঃস্বার্থ, যারা এমন করে নিজেদের উজাড় করে দিতে পারে সাধারণ মানুষের গরিব মানুষের স্বার্থ নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে, তাঁদের তৈরি করছে কোন আদর্শ? বহু মানুষই বুঝতে পারছেন, এ হল শিবদাস ঘোষের শিক্ষা আর তাঁর মহান চরিত্রের চর্চার ফল। এই আদর্শ ছাড়া এরা এমন হত না। জনমানসের এই কথাগুলি অত্যন্ত সত্য এবং এটা আমাদের সম্পদ, আমাদের গর্ব। এ আদর্শ যে বুঝেছে সে নতুন বিবেক মনুষ্যত্ব পেয়েছে, আর যার মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে বিবেক আছে সে নিজেকে বিক্রি করতে পারে না। কোটি কোটি মানুষের স্বার্থকে বিপন্ন করে নিজের জন্য কিছু জোগাড় করার চেষ্টাকে সে ঘৃণা করে। তাই দক্ষিণ ২৪ পরগণার ছাত্র-যুবকদের কাছে আমার আবেদন, পুরনো নেতাদের মধ্যে কমরেড রবীন মণ্ডল, কমরেড নলিনী প্রামাণিক ছাড়া কেউই আর বেঁচে নেই। যে যুবকরা এই স্মরণসভার বক্তব্য শুনছেন, তাদের কাছে আবেদন– দক্ষিণ ২৪ পরগণার এলাকায় এলাকায় ঘরে ঘরে একদিন কমরেড সুধাংশুর মতো সর্বস্ব বিসর্জন দিয়ে গরিব মানুষের বাঁচার একমাত্র হাতিয়ার এই দলটাকে গড়ে তোলার কাজে আপনারা এগিয়ে আসুন, আরও বড় দায়িত্ব নেওয়ার মতো করে নিজেদের গড়ে তুলুন। এটাও খুবই লক্ষণীয়, আপনারা সকলেই দেখছেন, প্রতি অঞ্চলেই দলে দলে নতুন যুবক ও ছাত্ররা আসছে। তারা জানে এখানে মহৎ আদর্শ ও চরিত্রের চর্চা হয়।

কমরেডস, আজ প্রয়োজন, পুঁজিবাদী মুনাফা লুণ্ঠনের এই ব্যবস্থাকে উচ্ছেদের ও নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার বিপ্লবী বাহিনী গঠনের জন্য তারই উপযুক্ত সংগঠন গড়ে তোলা। হ্যাঁ, এটা হতে পারে, কোথাও কোথাও সংগঠনে সাময়িক বিপর্যয় এল– এমন তো স্বাধীনতা আন্দোলনেও হয়েছে, চিন বিপ্লবের আগে হয়েছে। তিন লক্ষ বিপ্লবী সৈন্য নিয়ে মাও সে-তুং শুরু করেছিলেন। প্রায় আট হাজার কিলোমিটার পথে নানা বিপর্যয়, শোষক শ্রেণির সৈন্যদের আক্রমণ, দুরারোগ্য রোগ, খরস্রোতা নদী, ঝড়বৃষ্টি, হিংস্র জন্তুর আক্রমণ– তার মধ্যেও গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে গন্তব্যে পৌছলেন মাত্র কুড়ি হাজার। কিছু কমরেড বললেন, কুড়ি হাজার সৈন্য নিয়ে আমরা কীভাবে বিপ্লব সফল করব? মাও সে-তুং বলেছিলেন, আমরা যখন তিন লক্ষ নিয়ে শুরু করেছিলাম, তখন অনভিজ্ঞ ছিলাম। আমরা এ দেশের অনেক কিছু বুঝতে পারিনি, আমরা শত্রুর শক্তিকে বুঝতে পারিনি, আমরা তাদের যুদ্ধের আদবকায়দা বুঝতে পারিনি। আমরা পরাজিত হতে হতে হতে হতে ব্যর্থতার পর ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে এখন অভিজ্ঞ হয়েছি। এখন আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী এবং এখন আমরা বিপ্লব সমাধা করতে পারব। তার পাঁচ বছরের মধ্যে চিনে বিপ্লব জয়যুক্ত হল।

কমরেডস, আপনাদের সকলের কাছে আমাদের আবেদন, শহিদ কমরেড সুধাংশু জানার হত্যা থেকে যদি শিক্ষা নিতে হয়, তাঁর মতো সংবেদনশীল হৃদয়ের অধিকারী হোন, তাঁর মতো উন্নত তেজ, সাহস, সর্বস্ব সমর্পণ করার মতো মন, আত্মস্বার্থের বিরুদ্ধে, কাপুরুষতা, ভীরুতার বিরুদ্ধে উন্নত নৈতিক মানসিকতা অর্জন করুন। সাহসে, তেজে শুধু নয়, ধৈর্যের পরীক্ষাতেও তিনি বিকশিত হয়েছেন নতুন জায়গায়, নতুন স্তরে– তা অর্জন করুন। আমাকেও এগুলো অর্জন করতে হবে। আবার দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় সেই পুরনো দিনের মতো আন্দোলনের ঝড় তুলুন। আদর্শগত চর্চার আন্দোলন, নিজেকে বড় বিপ্লবী হিসাবে গড়ে তোলার আন্দোলন, নিজের ভিতরে পুঁজিবাদের ক্লেদাক্ত যে সমস্ত স্বার্থবাদী চিন্তা ঢুকছে তাদের চেনার এবং সমূলে উৎখাত করার আন্দোলনের ভিত্তিতে গরিব মানুষের লড়াইয়ের একমাত্র পার্টি এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-কে আরও শক্তিশালী করুন। এই কথা বলে কমরেড সুধাংশু জানার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে, তাঁকে লাল সেলাম জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।

(ডিজিটাল গণদাবী-৭৩ বর্ষ ৫ সংখ্যা_১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০)