কুর্নিশ সেইসব সাংবাদিকদের (পাঠকের মতামত)

সমাজমাধ্যমে ১ অক্টোবর প্রচারিত একটি ভিডিও হইচই ফেলে দিয়েছিল। সেখানে উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট প্রবীণ কুমারকে বুলগাডি গ্রামের ধর্ষিতার পরিবারকে ধমকাতেদেখা যায়– ‘‘মিডিয়া আজ ইঁয়াহা হ্যায়, কালনেহি রহেগি। আপ সরকার কি বাত মান লো, বয়ান বদলো।”

এই একটি ঘটনাইচোখে আঙুল দিয়ে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের নির্যাতিতা- ধর্ষিতার বিচার চাওয়া মিডিয়ার প্রতি জঘন্য মানসিকতাকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে। সেখানে সাংবাদিকদের ভয় দেখানো হয়েছে, কয়েকজন সাংবাদিকের ফোন ট্যাপ করা হয়েছে, তাঁদের নির্যাতিতার গ্রামে ঢুকতে বাধাও দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি হাথরাসে যেতে চাওয়া চার সাংবাদিককে দেশদ্রোহিতার মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। অর্থাৎ এক কথায় হাথরাসের গণধর্ষণের ঘটনা মিডিয়া তথা সাংবাদিকদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একেবারে সামনের সারিতে এনে দিয়েছে।

মনে পড়ে সেই অসমসাহসী সাংবাদিকের কথা, যিনি গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে, প্রবল পুলিশি বাধা অগ্রাহ্য করে স্বৈরাচারী যোগী সরকারের পুলিশের হাথরাসের ধর্ষিতার মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ছবি তামাম বিশ্বের সামনে নিয়ে এসেছেন। মনে পড়ে অবরুদ্ধ হাথরাসে পুলিশের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়া সেই সাংবাদিকের কথা, যিনি নির্যাতিতার পরিবারের কাছে যাওয়ার ও সেখানকার আসল পরিস্থিতি মানুষের সামনে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন।

সংবাদমাধ্যমকে বলা হয় গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। যার কাজ দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরা। কিন্তু দুঃখের কথা হল, এই বুর্জোয়া গণতন্ত্রে মিডিয়া তথা সংবাদমাধ্যম কর্পোরেট পুঁজির কাছে বিকিয়ে গিয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু সংবাদমাধ্যম এবং ব্যক্তি সাংবাদিক আছেন যাঁরা সাহসিকতার সঙ্গে সত্য তুলে ধরতে পিছপা হন না। এক্ষেত্রেগৌরী লঙ্কেশ থেকে সুজাত বুখারীর নাম উল্লেখ না করে পারা যায় না। বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে বহু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা রুজু করা হয়েছে। এমনকি বহু ক্ষেত্রে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আধিপত্যবাদী যে রাজনীতির আমদানি করতে চাইছে কেন্দ্রের আরএসএস-বিজেপি পরিচালিত সরকার, তার একমাত্র লক্ষ্য এক দিকে পুঁজিমালিকের স্বার্থে জনসাধারণের উপর শাসন-শোষণের নির্মম স্টিমরোলার চালানো, অপর দিকে জাত-পাত-ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে প্রতিবাদী মানসিকতাকে ধ্বংস করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা করা এবং মিডিয়াকেও কর্পোরেট পুঁজির করায়ত্ত করে বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থে তাকে ব্যবহার করা।

হাথরাসের ঘটনা দেখাল, শত চেষ্টা করেও গণতান্ত্রিক চেতনা বিনষ্ট করতে বর্তমান বিজেপি সরকার ব্যর্থ। হাথরাস কাণ্ডে দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা জেগে উঠেছে এবং এক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা নেওয়া সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকরা বিজেপির এই ঘৃণ্য রাজনীতির মুখোশ টান মেরে খুলে দিয়েছে। সেইসব আদর্শনিষ্ঠ, সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকদের কুর্নিশ জানাই।

সাগর সাঁতরা

বেহালা, কলকাতা

(ডিজিটাল গণদাবী-৭৩ বর্ষ ৯ সংখ্যা_১৭ অক্টোবর, ২০২০)