‘আজ বুর্জোয়া স্বাধীনতা ও দেশাত্মবোধের ধারণা সুবিধার অস্ত্রে পরিণত হয়েছে’ – শিবদাস ঘোষ

সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা থেকে

২৪ এপ্রিল ভারতের যথার্থ সাম্যবাদী দল এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এ দলের প্রতিষ্ঠাতা মহান মার্কসবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের একটি আলোচনা (যুব সমাজের প্রতি) থেকে কিছু অংশ এখানে প্রকাশ করা হল।

যুব আন্দোলন যদি সৃষ্টি করতে হয় তা হলে যুবকদের মধ্যে,শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে, ছাত্রদের মধ্যে এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানসিকতা হটাতে হবে। তা না হলে যুব আন্দোলনে জোয়ার আসতে পারে না। আগেই বলেছি,এ শুধু নিছক আলোচনা,তত্ত্ব ও আদর্শ প্রচারেই আসবে না। আন্দোলনকে এর সঙ্গে মেলাতে হবে,সমস্ত প্রকার অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামই হবে তার বুনিয়াদ। কিন্তু একটা সুস্পষ্ট আদর্শ যদি তার সামনে না থাকে,দেশের সমস্ত পরিস্থিতির একটা সঠিক বিশ্লেষণ যদি তার পিছনে না থাকে,‘অ্যানালিসিস’যদি তার পিছনে না থাকে, প্রতিটি সমস্যার কারণ যদি সে সঠিকভাবে ধরতে না পারে– তবে সে আন্দোলন হবে ভুল পথে, সে আন্দোলন জয়যুক্ত হবে না। এ সমস্যার একটি দিক আমি আপনাদের সামনে বলব, আপনারা ভেবে দেখবেন। সমাজে মানুষ যে উদ্বুদ্ধ হয়,ক্রিয়া করে,এই যেমন স্বাধীনতা আন্দোলনে যুবকরা এগিয়ে এসেছিল– কেন? গোটা সমাজের পুরনো যে মানসিকতা সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল তা গোষ্ঠীবদ্ধ,পরিবারকেন্দ্রিক, বিচ্ছিন্ন, স্থানীয় মানসিকতা ছিল। পুরনো সেই মনোভাবের সাথে আজ ‘দেশ’বলতে যে ব্যাপক মনোভাবকে বোঝায় তার কোনও মিল নেই। দেশে যখন রেনেসাঁসের জাগরণ শুরু হল– রামমোহন থেকে শুরু করে বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল পর্যন্ত এই যে ধারাবাহিকতা– এতে দেশের যুবকদের সামনে একটা নতুন নৈতিকতা, একটা নতুন আদর্শবাদ, ‘দেশ’ সম্বন্ধে একটা নতুন ধারণা ও চেতনা, সমাজ সম্বন্ধে একটা নতুন চেতনা– এককথায় একটা নতুন আদর্শ, নৈতিকতার ধারণা সমাজের উপর প্রতিষ্ঠা লাভ করল। পুরনো প্রচলিত আদর্শ ও নৈতিকতা, নীতিবোধের ধ্যানধারণাকে লড়াই করে পরাস্ত করে দিয়ে যুব মনে যে নতুন আদর্শ ও নীতিবোধ প্রভাব বিস্তার করতে, দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হল– তা ভারতবর্ষে একটি নতুন জাগ্রত মানবতাবোধের উপর ভিত্তি করে গণতান্ত্রিকতা বা স্বাধীনতা বা দেশাত্মবোধের চেতনা। তা হলে, আদর্শই সেদিন এই চেতনা, এই নৈতিকতা, এই মূল্যবোধ সমাজের মধ্যে এনেছিল। পুরনো আদর্শ ও মূল্যবোধের সঙ্গে নিয়ত সংগ্রাম করে তা যখন সমাজের মানসিকতাকে অধিকার করতে, তার উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে তখনই তার আবর্তে আবর্তিত হয়ে দেশের যুবসম্প্রদায় পাগলের মতো ছুটেছে নতুনের সন্ধানে। মানুষের দৃষ্টিকোণ পাল্টে গেছে, কূপমণ্ডুকতা কেটে গেছে, মানুষ স্বাধীনতার কথা ভাবতে শিখেছে, জাতির ‘কনসেপশন’ (ধারণা) পাল্টে গেছে, দেশ সম্বন্ধে ‘লোকালাইজড’ (অঞ্চলভিত্তিক) ধারণা পাল্টে গেছে, পরিবার সম্বন্ধে কূপমণ্ডুক ধারণা পাল্টে গেছে। এগুলো পাল্টে গিয়ে মানুষ সামাজিক হয়েছে, বৃহত্তর ক্ষেত্রে এবং সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে শিখেছে। কিন্তু, আপনাদের মনে রাখতে হবে, সেই আদর্শবাদ ছিল মূলত বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ, বুর্জোয়া মানবতাবাদ এবং তারই ভিত্তিতে তার গণতান্ত্রিক চেতনা– বুর্জোয়া গণতন্ত্রের শ্রেণিচেতনা। এই বুর্জোয়াশ্রেণির গণতন্ত্রের চেতনা এবং স্বাধীনতার ধ্যানধারণা,দেশাত্মবোধের ধ্যানধারণার উপরই মূলত সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠিত ছিল। বুর্জোয়াশ্রেণীর ধ্যানধারণা হলেও সেদিন তা ছিল বিপ্লবাত্মক, তা ছিল প্রগতিশীল। তাই সেদিন সেই আদর্শবাদের ঝান্ডা নিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যাঁরা লড়তে গিয়েছেন, ‘দেশের স্বাধীনতায় আমার জন্মগত অধিকার’– এই কথাটুকু যাঁরা সাহিত্যের মধ্য দিয়ে হোক, কাব্যের মধ্য দিয়ে হোক, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হোক, যেভাবেই হোক বলেছেন– তার জন্য তাঁদের কঠিন মূল্য দিতে হয়েছে, তার জন্য তাঁদের কঠিন শাস্তি পেতে হয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে অপরিসীম। সে পথ ছিল দুঃখের পথ, কষ্টের পথ, সংগ্রামের পথ। সে কষ্টের মধ্যে, সে সংগ্রামের মধ্যেই ছিল আনন্দের রূপ। তা নির্জীব, নির্বীর্য, জড় পদার্থের ও ক্লীবের আনন্দ ছিল না।

কিন্তু, স্বাধীনতার পর বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থা, পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বুর্জোয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হল। তার ফলে সমাজের মৌলিক সমস্যা, অর্থাৎ গণমুক্তি আন্দোলন সফল হতে পারল না, গণমুক্তির মূল প্রশ্নটির সমাধান হতে পারল না। এমনকী রাজনৈতিকভাবে ভারতবর্ষ ‘ন্যাশনালিটি’গুলোকে (খণ্ড-জাতিগুলোকে) নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ হলেও বিভিন্ন অংশের জনগণের মধ্যে একটা গণতান্ত্রিক ঐক্যবদ্ধতা, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক অর্থেই, বুর্জোয়া জাতীয়তার অর্থেই যে ঐক্যবদ্ধতা, তা পর্যন্ত এদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে পারল না। দেশের জনসাধারণ ‘রেস’কে (জাতিকে) ভিত্তি করে, ধর্মকে ভিত্তি করে, ‘কাস্ট’কে (বর্ণকে) ভিত্তি করে বিভক্ত হয়ে রইল। …

এর কারণ এ দেশের মূল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্তর্নিহিত ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং দুর্বলতা, যে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ভারতবর্ষের পুঁজিপতিশ্রেণির রাজনৈতিক প্রতিভূরা। যেহেতু ভারতবর্ষের পুঁজিবাদ বা পুঁজিপতিশ্রেণি বিশ্বপুঁজিবাদের প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণিগোষ্ঠীরই অংশীদার, সেহেতু এ যুগে তার মধ্যে আগের সেই পুরনো বিপ্লবী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য আর ছিল না। স্বাধীনতা তাদের দরকার ছিল, কিন্তু বিপ্লব তাদের প্রয়োজন ছিল না। স্বাধীনতা বলতে তাদের প্রয়োজন ছিল ব্রিটিশের হাত থেকে শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রটা কেড়ে নেওয়া। বিপ্লবের আঘাতে গোটা সমাজটাকে পাল্টে সমাজের আধুনিকীকরণ করা– এ তাদের প্রয়োজন ছিল না। …

…‘আদর্শের জন্য মানুষ’ নয়– সমাজের জন্য, মানুষের জন্য, প্রগতির জন্য আদর্শ। আদর্শের জন্ম হচ্ছে একদিকে মানুষের মননশীলতার সাথে প্রকৃতির প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব এবং অপরদিকে ব্যক্তিসত্তার সাথে তার সমাজ পরিবেশের দ্বন্দ্ব-সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে, এবং এই অর্থে আদর্শের স্রষ্টা হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্ক। হঠাৎ একটা আদর্শ কোথাও থেকে এসেছে,আর তারপর মানুষের মস্তিষ্ক সেটাকে নিয়ে চলেছে–এইভাবে আদর্শের জন্ম হয়নি। সমাজের অভ্যন্তরে প্রগতির জন্য, বাঁচার জন্য প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মানুষের মস্তিষ্ক ও প্রকৃতির সংঘাতের মধ্য দিয়ে যে মননশীলতার সৃষ্টি হয়েছে তারই ফলে ভাবজগতের জন্ম। এখানে আর একটা কথা মনে রাখতে হবে,মানুষের মস্তিষ্ক ও প্রকৃতির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে বাঁচার তাগিদে উৎপাদনের প্রয়োজনেই মানুষের মধ্যে প্রথম সমাজচেতনার উন্মেষ ঘটে এবং মানুষ সমাজবদ্ধ হয়। তাই মানুষের জীবনও যেমন পাল্টাচ্ছে, প্রকৃতি যেমন পাল্টাচ্ছে, সমাজ পাল্টাচ্ছে– তেমনি মানুষ এবং প্রকৃতির সংঘর্ষের রূপও পাল্টাচ্ছে, তার চরিত্র পাল্টাচ্ছে। আর তার সঙ্গে আবার সমাজের সমস্যাগুলির রূপও পাল্টাচ্ছে। ফলে,আদর্শ এক জায়গায় বসে থাকতে পারে না। আদর্শও পাল্টাতে বাধ্য। তাই সমস্ত আদর্শ বা আদর্শবাদেরই জন্ম-মৃত্যুর একটা ইতিহাস রচনা হয় এবং ইতিহাস আছে। শাশ্বত আদর্শ, শাশ্বত নীতি, অপরিবর্তনীয় শাশ্বত মূল্যবোধ–এসব মিষ্টি কথা, কিন্তু মিষ্টি বাজে কথা, কাজের কথা নয়। বড় মানুষের মুখ দিয়ে বেরোয় বলেই কোন আদর্শ শাশ্বত সত্য হয়ে যায় না। কারণ, বড় মানুষের চিন্তাও পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত। তিনি ব্রহ্মার বরপুত্র নন! তিনি সামাজিক জীব। সমাজের আভ্যন্তরীণ আলোড়নে, সমস্ত সংঘর্ষের আলোড়নে, মানুষ ও প্রকৃতির সংঘর্ষের আলোড়নেই তাঁর চিন্তা আবর্তিত। এই দুই সংঘর্ষের আবর্তে যে কোনও বড় মানুষ আবর্তিত। তার ঊর্ধ্বে ওঠার ক্ষমতা কারুর নেই। তাই মার্কস বলেছেন যে, মানুষে মানুষে সম্পর্ক ‘প্রোডাকশন-রিলেশন’ (উৎপাদন সম্পর্ক)। অনেকে মার্কসের এই উক্তিকে সংকীর্ণ অর্থকরী সম্পর্ক হিসাবে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু তা ভুল। ‘প্রোডাকশন’ (উৎপাদন) বলতে তিনি ‘স্পিরিচুয়াল প্রোডাকশন’ (ভাবগত উৎপাদন) এবং ‘মেটিরিয়াল প্রোডাকশন’ (বস্তুগত উৎপাদন)– দুটোই বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, এই যে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প, মূল্যবোধ, শিক্ষাব্যবস্থা, আইন-কানুন, ‘জুরিসপ্রুডেন্স’ (বিচারশাস্ত্র)– এগুলো হচ্ছে ‘স্পিরিচুয়াল প্রোডাকশন অব হিউম্যান বিয়িং’ (মানুষের ভাবগত উৎপাদন)। আর, মেটিরিয়াল প্রোডাকশন হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে যে উৎপাদন হয় এবং আমরা যা ভোগ করি। সাথে সাথে মার্কস বলেছেন, এই বস্তুগত উৎপাদনকে যে শ্রেণি ‘কন্ট্রোল’ (নিয়ন্ত্রণ) করে, ভাবগত উৎপাদনকে তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং সমাজের বস্তুগত উৎপাদনটা যে শ্রেণির হাতে, যার নিয়ন্ত্রণে, যার আধিপত্যে– সমাজে ভাবগত উৎপাদন, অর্থাৎ সমাজের গোটা মানসিকতাকেও তারাই মূলত প্রভাবিত করে। এখানে মনে রাখতে হবে, এ ব্যাপারে বিরুদ্ধ শক্তিরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তা সে যাই হোক, শিক্ষাব্যবস্থা, মূল্যবোধ, নৈতিকতা– যা কোনও একটা ‘গিভেন’ (বিশেষ) শ্রেণিবিভক্ত সমাজে প্রচলিত, তা যতদিন ধরেই প্রচলিত থাক না কেন, যেভাবেই মানুষের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করুক না কেন– তার সঠিকতা– তার চরিত্র প্রগতিশীল, না প্রতিক্রিয়াশীল– তা আমাদের উপকার করবে, না সমাজপ্রগতিতে আজ বাধা সৃষ্টি করবে– এ বিচার সবসময়ই করতে হয়। আর, এ বিচার করার সময় মনে রাখতে হয় যে, এই মূল্যবোধ কোন বিশেষ ধরনের ‘প্রোডাকশন সিস্টেম’ (উৎপাদন ব্যবস্থার) অর্থাৎ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ‘সুপারস্ট্রাকচার’ (উপরিকাঠামো)। সমাজ যখন শ্রেণিবিভক্ত হয়নি, সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা যখন ব্যক্তিগত বা শ্রেণির অধিকারে যায়নি, সমাজের সামগ্রিক প্রয়োজনেই যখন উৎপাদন হত, তখন সমাজচিন্তাও শ্রেণিবিভক্ত হয়নি। কিন্তু, যখন থেকে সমাজ শ্রেণিবিভক্ত হয়েছে তখন থেকে সমাজচিন্তাও শ্রেণিরূপ ধারণ করেছে। একদিকে মালিকশ্রেণি বা শোষকশ্রেণির চিন্তা, অপরদিকে শোষিতশ্রেণির চিন্তা। একদিকে প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা, অপরদিকে প্রগতিশীল চিন্তা– এ’দুটোই আছে। একটি বিশেষ সমাজের মধ্যে যেভাবে সমাজচিন্তা একটি ব্যক্তির মধ্য দিয়ে ‘পারসনিফিকেশন’ (ব্যক্তিকরণ) ঘটে– তাই হল ব্যক্তিচিন্তা। তাই, কী করে ব্যক্তি শ্রেণির ঊর্ধ্বে, সমাজের ঊর্ধ্বে উঠবেন? রবীন্দ্রনাথের চিন্তা বা বিবেকানন্দের চিন্তা হচ্ছে সমাজচিন্তার একটি বিশেষ ধরনের ব্যক্তিকরণ। এই চিন্তা আবার সমাজচিন্তাকে প্রভাবিত করছে– এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সমাজচিন্তা ও ব্যক্তিচিন্তার পারস্পরিক সম্বন্ধ ‘ডায়ালেকটিক্যাল’ (দ্বন্দ্বমূলক) অর্থাৎ দ্বন্দ্ব-সমন্বয়ের সম্বন্ধ– একে অপরকে প্রভাবিত করে। এখানে মূল যে কথাটা মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে, সমাজচিন্তাই ব্যক্তিচিন্তার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়, ব্যক্তিকৃত হয়, ব্যক্তিকরণ হয়– এরই নাম ব্যক্তিচিন্তা। ‘পারসনিফিকেশন অব সোস্যাল থিঙ্কিং ইজ ইন্ডিভিজুয়াল থিঙ্কিং’। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে সামাজিক চিন্তা যেখানে শ্রেণিচিন্তা সেখানে কোন ব্যক্তিই শ্রেণিস্বার্থ থেকে মুক্ত ব্যক্তি নয়। যিনি যত বড় মহামানবই হোন, তিনি এটা উপলব্ধি করতে পারুন আর না পারুন– কোনও না কোনও শ্রেণিস্বার্থের সাথে সবাইকে যুক্ত হয়ে পড়তে হয়, কোনও না কোনও শ্রেণির চিন্তাকেই তাকে প্রতিফলিত করতে হয়। ফলে, এরূপ অবস্থায় জেনে হোক বা না জেনে হোক, যখন কোনও না কোনও শ্রেণির চিন্তার সাথে সবাইকে যুক্ত হয়ে পড়তে হচ্ছে তখন বাস্তবে কোনও না কোনও শ্রেণিস্বার্থ নিয়েই চলব, অথচ নিজে ভাবতে থাকব– ‘আমি কোন শ্রেণির সাথেই যুক্ত নই, আমি গোটা সমাজের স্বার্থ নিয়েই ভাবছি’– এর চেয়ে অজ্ঞতা ও আত্মপ্রতারণা আর কিছু হতে পারে না।