Breaking News

৫টি জুট মিল ৮–৯ মাস ধরে বন্ধ রেখেছে মালিকরা খোলার ব্যাপারে সরকার উদ্যোগহীন

শ্রমিক সংগঠনগুলি ১ দিনের বনধ ডাকলে রাজ্য সরকার বনধ ভাঙার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে৷ কিন্তু মালিকরা যদি মাসের পর মাস মিল বন্ধ রেখে শ্রমিকের পরিবারে অনাহার ডেকে আনে তা হলে সরকার কী ভূমিকা নেয়? মিল খোলার জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরকার মালিকদের উপর কোনও চাপ তো দেয়ই না, শ্রমিকসংগঠনগুলি দাবি জানালেও সরকার তৎপর হতে গড়িমসি করে৷ সরকারের এই ভূমিকাই দেখা যাচ্ছে রাজ্যের ৬টি বন্ধ চটকল খোলার প্রশ্নে৷

এই মুহূর্তে হুগলি জেলার হেস্টিংস, ইন্ডিয়া এবং গোন্দলপাড়া জুট মিল বন্ধ৷ উত্তর ২৪ পরগণার নদীয়া জুটমিল এবং ডেডিকো বন্ধ৷ বন্ধ কলকাতার খিদিরপুরের হুগলি জুটমিল৷ এর মধ্যে ডেডিকো বাদ দিলে বাকি পাঁচটি মিল ৮/৯ মাস ধরে বন্ধ৷ কোনও শ্রমিক আন্দোলন–মিছিল–মিটিং ইত্যাদির জন্য এই মিলগুলি বন্ধ হয়নি৷ অথবা চটের বা পাটজাত দ্রব্যের বাজারের অভাবে বন্ধ হয়নি৷ এই জুটমিলের মালিকরা নিজেদের আরও বেশি মুনাফার স্বার্থে শ্রমিকদের উপর কিছু কালা শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার জন্যই মিলগুলি বন্ধ রেখেছে৷ শ্রমিকদের অনাহারের মধ্যে ঠেলে দিয়ে কালাশর্ত মেনে নিতে বাধ্য করার জন্য এই যে মারাত্মক ষড়যন্ত্র তার বিরুদ্ধে সরকার উদাসীন৷ শ্রমিকরা একদিনের বনধ ডাকলে যারা শ্রমিক দরদে বিগলিত হয়ে বনধের বিরুদ্ধে যুক্তি সাজায় এই তাদের আসল চেহারা!

৬টি জুটমিলের ২৫ হাজার শ্রমিক পরিবারের লক্ষাধিক মানুষের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় বিপর্যয় এবং সংকট৷ অনাহার–অর্ধাহার আজ তাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী৷ অভাবে এই সব পরিবারের সন্তান স্কুল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে৷ রোগ হলে চিকিৎসার কোনও উপায় নেই৷ বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের ‘কন্ট্রিবিউশন’ জমা পড়ে না বলে মালিকরা ইএসআই এবং পিএফ দপ্তরে মিল বন্ধের খবর দিয়ে দেয়৷ ফলে শ্রমিকরা অসুস্থতা জনিত ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়৷ পায় না ‘সুপার স্পেশালিটি  চিকিৎসা’৷ রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী ইএসআই দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হলেও তিনি এই সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগহীন৷

এই অবস্থায় এআইইউটিইউসি অনুমোদিত বেঙ্গল জুট মিলস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ২২ জানুয়ারি বন্ধ জুট মিল খোলা সহ পাঁচ দফা দাবিতে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দেয়৷ সংগঠনের দাবি– অবিলম্বে সমস্ত বন্ধ চটকল নিঃশর্তে খুলতে হবে, বন্ধ কারখানার অভুক্ত অনাহারী শ্রমিকদের জন্য সস্তাদরে রেশনের মাধ্যমে চাল, ডাল, চিনি ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনে সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসা এবং অসুস্থতা জনিত ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের সন্তানদের বিনাব্যয়ে শিক্ষার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা এবং ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে৷

এদিনের ডেপুটেশনে নেতৃত্ব দেন এ আই ইউ টি ইউ সি রাজ্য সম্পাদক কমরেড দিলীপ ভট্টাচার্য, ইউনিয়নের  সাধারণ সম্পাদক কমরেড অমল সেন এবং অন্যতম সম্পাদক কমরেড মিলন রক্ষিত৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ২৫ সংখ্যা)