স্কুল-কলেজে ড্রপ আউটের সংখ্যা বাড়বে (পাঠকের মতামত)

করোনা মহামারীর জন্য যে লকডাউন পর্ব চলছিল বর্তমানে তা শেষ হয়ে গেছে। আনলক পর্ব চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। সমস্ত কিছুই খুলে গিয়েছে, শুধুমাত্র স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। করোনার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা লকডাউন পর্ব থেকে এখনও পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।

যদিও এই করোনাকালে কিছু স্কুল অনলাইনে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এই শিক্ষা অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী গ্রহণ করতে পারেনি। কারণ অনেকের অত্যাধুনিক অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই, ল্যাপটপ নেই, কম্পিউটার নেই। সমস্ত জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ইন্টারনেট পাওয়া যায় না। আবার যাদের আছে তারা তার যথাযথ ব্যবহারিক প্রয়োগ জানে না। এর ফলে অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বহু ছাত্রছাত্রী।

স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও ভোটের প্রচারে সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলি প্রকাশ্য মিছিল, মিটিং, জনসভা থেকে বিরত হচ্ছে না। পরিবহণ, রেল, বিমান, বাস, সবই স্বাভাবিক। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানায় সবই খুলেছে।

স্কুল কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে ড্রপ-আউট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যাবে। পুনরায় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার মতো পরিস্থিতি থাকবে না। বহু অভিভাবকই পড়াশোনা সম্পর্কে সেভাবে সচেতন না হওয়ায় বহু ছাত্রছাত্রী স্কুলের শিক্ষকদের উপর নির্ভরশীল। তাই স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যেমন পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। পুনরায় ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করা কঠিন হবে। বর্তমানে করোনা ভ্যাকসিন চলে এসেছে। এছাড়া আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারগুলো প্রাইভেট টিউটরের মাধ্যমে তাদের সন্তানদের পড়িয়ে শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। কিন্তু ভারতবর্ষ তথা পিচমবঙ্গের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র, তারা মূলত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার উপর নির্ভরশীল। তাই কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে এই শিক্ষার বিষয়ে সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলতে হবে। কোনও টালবাহানা না করে অবিলম্বে স্কুল কলেজ খোলা দরকার।

কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা পালন করছে না। আসলে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০-র সুপারিশ অনুযায়ী দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে অনলাইন শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার বেসরকারিকরণ করার চক্রান্ত চলছে। অথচ ভারতবর্ষের মাত্র ১৫ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী অনলাইন পরিষেবা নিতে পারে। ফলে শিক্ষার সুযোগ ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে পড়ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা দাবি তুলেছিলেন সকলের জন্য শিক্ষা চাই, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, ধর্ম-বর্ণ শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনও বাধা হবে না। শিক্ষা হবে সম্পূর্ণ অবৈতনিক। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৪ বছর পর আজও তাঁদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন ‘সূর্য যেমন সকলকে সমান ভাবে কিরণ দেয় এবং বৃষ্টির ধারা যেমন সবার ওপর সমান ভাবে ঝরে পডে, শিক্ষাও তেমনি সকলের জন্য সহজলভ্য হবে।’ গান্ধীর সেই স্বপ্নের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বুর্জোয়া শাসকবর্গ শিক্ষাকে বেচাকেনার পণ্যে পরিণত করেছে। বর্তমানে করোনা মহামারীর সংক্রমণ ক্রমশ কমছে এবং জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে। তাই কোনও প্রকার বিলম্ব না করে অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হোক।

শ্যামল দত্ত, রায়গঞ্জ