সরকারি আক্রমণের বিরুদ্ধে গ্রিসের শ্রমিকরা ধর্মঘটে

দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের স্বার্থে এ দেশের মতো গ্রিসের সরকারও একের পর এক আক্রমণ চালাচ্ছে খেটে-খাওয়া মানুষের ওপর। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সেখানকার ‘অল ওয়ার্কার্স মিলিট্যান্ট ফ্রন্ট’-এর আহ্বানে ২৬ নভেম্বর দেশজোড়া ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন গ্রিসের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এথেন্স, প্যাট্রাস সহ দেশের বড়-ছোট শহরে করোনাজনিত নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে হাজার হাজার মানুষ সেদিন পথে নেমেছিলেন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায়। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মানুষ-মারা নয়া আইনগুলির প্রতিবাদে শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটে ওইদিন গোটা ভারতও ছিল স্তব্ধ।

বৃহৎ পুঁজিপতিদের মুনাফার স্বার্থে গ্রিস সরকার সম্প্রতি সংসদে নতুন বিল এনেছে। সেখানে ৮ ঘন্টার মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের ওপর দৈনিক ১০ ঘন্টার কাজ চাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বলা হয়েছে, রবিবারেও ছুটি থাকবে না। পরিবহণ ব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থাগুলি ব্যবসা করার জন্য তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি মালিকদের হাতে।

দীর্ঘদিন ধরেই আইএমএফ সহ সাম্রাজ্যবাদী আর্থিক সংস্থাগুলির নির্দেশে বিপুল ঋণগ্রস্ত গ্রিসের সরকার ব্যয়সঙ্কোচের পথে হাঁটছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। তার ওপর এসে পড়েছে করোনা অতিমারির ধাক্কা। এই অবস্থায় মুনাফা লুটেরা পুঁজিমালিকরা শ্রমিকদের শেষ রক্তবিন্দুটুকু নিংড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। গ্রিসের সরকার সেই কাজে তাদের সহায়তা করতেই এই শ্রমিকবিরোধী আইন আনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সেখানকার শ্রমিক সমাজ। এদিনের ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের শ্রমিক-কর্মচারীরা। সামিল ছিল হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ফেডারেশনগুলি। ছিলেন নির্মাণকর্মী, ওষুধ কারখানার কর্মচারী, দ্বীপবহুল এই দেশের নৌবিভাগে কর্মরত মানুষজন।

অল ওয়ার্কার্স মিলিট্যান্ট ফ্রন্টের দাবি, দেশের সমস্ত কর্মহীন মানুষের জন্য উপযুক্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা, অতিমারিতে যাদের কাজ চলে গেছে, তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া এবং সমস্ত শ্রম-অধিকারগুলি বজায় রাখা। এছাড়া কোয়ারান্টাইনে থাকা কর্মচারীদের জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস, জল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিনামূল্যে দেওয়ারও দাবি করেছে তারা সরকারের কাছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা বৃদ্ধি করে ডাক্তার ও নার্সদের জন্য ব্যাপক হারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

(সূত্র : ওয়ার্কার্স ওয়ার্ল্ড, ১১ ডিসেম্বর, ‘২০)

(ডিজিটাল গণদাবী-৭৩ বর্ষ ১৩ সংখ্যা_১৮ ডিসেম্বর, ২০২০)