Breaking News

সমাজতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী কমরেড জোসেফ স্ট্যালিনের শিক্ষা থেকে

(৫ মার্চ বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনের মহান নেতা কমরেড স্ট্যালিনের ৭০তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর অমূল্য শিক্ষার একটি অংশ প্রকাশ করা হল)

‘‘সঠিক রাজনৈতিক লাইনের সফল রূপায়ণের জন্য এমন যোগ্য কর্মী আমাদের অবশ্যই চাই– যাঁরা পার্টির সঠিক রাজনৈতিক লাইনটি বোঝেন, এই লাইনকে তাঁদের নিজেদের লাইন বলে মনে করেন, এই লাইনকে যাঁরা রূপায়িত করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত, এই রাজনৈতিক লাইনকে বাস্তবে প্রয়োগ করার যোগ্যতা যাঁরা রাখেন, যাঁরা এর যৌক্তিকতা তুলে ধরতে পারেন এবং এই লাইনের পক্ষে দাঁড়িয়ে তাকে রক্ষা করার জন্যে লড়াই করতে পারেন। এমন জাতের কর্মী আমাদের অবশ্যই চাই। …

পার্টি ও রাষ্ট্রের যে বিভাগে যাঁরা কাজ করুন না কেন, কর্মীদের রাজনৈতিক চেতনার মান এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদের উপলব্ধি যত ভাল, যত উন্নত হবে, তাদের কাজও তত সুন্দর তত ফলপ্রদ হতে বাধ্য। বিপরীত দিকে, কর্মীদের রাজনৈতিক চেতনার মান যত নিচু হবে, মার্কসবাদের উপলব্ধি যত কম হবে, কাজের ক্ষেত্রে ক্ষতি ও ব্যর্থতার সম্ভাবনাও ততই বাড়বে। ততই কর্মীদের চিন্তা ও চরিত্রের গভীরতা নষ্ট হবে। তারা নিছক হুকুম তামিল করার যন্ত্রে পরিণত হবে। এক কথায়, তাদের সামগ্রিক অধঃপতনের সম্ভাবনাও ততই বাড়বে। এ কথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে, নানা ধরনের কাজে নিযুক্ত সমস্ত কর্মীদের যদি আমরা আদর্শগত দিক থেকে এমনভাবে শিক্ষিত করে তুলতে পারি, রাজনৈতিক শিক্ষায় এমনভাবে তৈরি করতে পারি যাতে তাঁরা অতি সহজেই আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী যোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন, তাঁদের মার্কসবাদ-লেনিনবাদের উপলব্ধি যদি এমন প্রখর করে গড়ে তুলতে পারি যাতে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, গুরুতর কোনও ভুল না করে তাঁরা সে সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন, তা হলে অত্যন্ত সঙ্গতভাবেই আমরা বলতে পারব যে, আমাদের সমস্যার দশ ভাগের নয় ভাগেরই সমাধান হয়ে গিয়েছে। আর এ কাজ আমরা অবশ্যই করতে পারি। কারণ, এগুলো করার জন্য যা যা দরকার তার সকল উপায় ও সুযোগ আমাদের আছে।

সাধারণত আমাদের তরুণ কর্মীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দেখা হয় তারা যাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার বিশেষ একটা শাখায় বিশেষ দক্ষতা (স্পেশালাইজেশন) অর্জন করতে পারেন। এটা প্রয়োজন এবং এরকম হওয়াই উচিত। যিনি চিকিৎসাবিদ্যায় বিশেষভাবে শিক্ষিত হয়েছেন তাঁকে উদ্ভিদবিদ্যা বা পদার্থবিজ্ঞানও বিশেষ ভাবে জানতে হবে। অথবা পদার্থবিজ্ঞান বা উদ্ভিদবিদ্যায় বিশেষভাবে শিক্ষিত কাউকে চিকিৎসাবিদ্যাও জানতে হবে– বাস্তবে সত্যিই এ কথার কোনও যুক্তি নেই। কিন্তু এমন একটা বিজ্ঞান আছে যা সমাজবিকাশের নিয়ম, সর্বহারা বিপ্লবের জয়যাত্রার নিয়ম, সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্যের অগ্রগতি এবং সাম্যবাদের চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষে্য পৌঁছনোর পথনির্দেশক বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞান হল মাক্সর্বাদী-লেনিনবাদী বিজ্ঞান, যা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিযুক্ত সকল বলশেভিকেরই জানা অবশ্যকর্তব্য। কারণ, কেউ যদি শুধুমাত্র একটা বিশেষ বিষয়ের মধ্যে, বিশেষ ক্ষেত্রের জ্ঞানের মধ্যে নিজেকে আটকে ফেলেন– যেমন ধরুন গণিত, উদ্ভিদবিদ্যা বা রসায়নশাস্ত্র– এর বাইরে তিনি যদি আর কিছু দেখতে না পান, তা হলে তিনি নিজেকে লেনিনবাদী বলে দাবি করলেও আসলে তিনি লেনিনবাদী নন। প্রকৃত লেনিনবাদী হতে হলে শুধু নিজের পছন্দসই কোনও একটা বিজ্ঞানের শাখায় স্পেশালিস্ট হলেই চলে না, সাথে সাথে তাঁকে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী হতে হবে, দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রবল আগ্রহী হতে হবে, সমাজবিকাশের নিয়মগুলি জানতে হবে ও তা বাস্তবে প্রয়োগ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং দেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। যে স্পেশালিস্টরা বলশেভিক হতে চান তাঁদের এই অতিরিক্ত দায়িত্বভার নিতে হবে। এর ফলাফল থেকে যা পাওয়া যাবে, সেটা অতিরিক্ত পরিশ্রমের চেয়ে অনেক বেশি।”

(সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ কংগ্রেসের রিপোর্ট-১০ মার্চ ১৯৩৯)