Breaking News

সঞ্চয় কমছে, দেনা বাড়ছে, সংকট তীব্রতর হচ্ছে (পাঠকের মতামত)

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, একদিকে গৃহস্থের ব্যাপক হারে সঞ্চয় কমছে, অন্য দিকে ঋণ নেওয়ার হার বাড়ছে। দেশের অর্থমন্ত্রক তা নিয়ে নাকি বেশ উদ্বিগ্ন। তার দুশ্চিন্তা, ব্যাঙ্কের পুঁজি কমলে বৃহৎ ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের কী হবে, তারা মূলধন কোত্থেকে পাবে। লক্ষণীয়, অর্থমন্ত্রক এ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় যে, যাদের সঞ্চয় শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে।

প্রায় দেড় বছর ধরে চলা লকডাউনে কোটি কোটি সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের রোজগার ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার তাদের পাশে দাঁড়ায়নি, বিকল্প রোজগারের বন্দোবস্ত করেনি, বেঁচে থাকার নূ্যনতম রসদ সরবরাহের চেষ্টা করেনি, রোজগারহীন অসংখ্য মানুষ কী করে সংসার চালাচ্ছে তার খোঁজ রাখেনি। অতিমারী কালে বাস্তবে কোটি কোটি সাধারণ মানুষ আজও অর্ধাহারে অনাহারে ধুঁকছে। দুটো রোজগারের আশায় কাজ-হারানো কেউ সবজি-ফল ইত্যাদি নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে, কেউ মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়ে ঘুরছে। রিক্সা অটো ট্যাক্সি চালকেরা অনেকেই তাদের গাড়িতে চা-বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করছে। সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টায় কত মা-বোন অপমানকর কাজে নামতে বাধ্য হচ্ছে তারও সাক্ষী থাকছে এই দুঃসময়। যে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে ব্যয়সংকোচ করে হলেও ব্যাঙ্কে কিছু সঞ্চয় করেছিল এবং যা ভাঙিয়ে এখনও চলছে, তারাও আসন্ন দুর্দশার আতঙ্কে ভুগছেন। অন্য দিকে, এহেন মর্মান্তিক পরিস্থিতিতেও, সরকারের প্রত্যক্ষ মদত এবং অতি সক্রিয় সহযোগিতায় দেশের কতিপয় ধনকুবেরের মুনাফা বৃদ্ধি হয়ে যাচ্ছে বহু গুণ হারে।

এখন আর এই প্রশ্নের কোনও অবকাশ নেই যে, তাহলে সরকারটা কাদের। সরকারটা যে মালিকশ্রেণির একান্তই সেবাদাস তা আর গোপন নেই। এই অবস্থায় জনগণের একটা অংশের যেমন হতাশা আরও বেড়েছে তেমনি অন্য অংশের মধ্যে ক্ষোভও নতুন মাত্রায় বেড়েছে। পুঁজিবাদী শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ তাদের আন্দোলনের পথে ঠেলছে। সংকটের সামনে এটাই আশার কথা।

সুব্রত দাস, দমদম

গণদাবী ৭৩ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা