লন্ডনে মহান মার্কসের স্মৃতিস্তম্ভে ভাঙচুর, ধিক্কার জানাল এসইউসিআই(সি)

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ৯ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, ইউরোপ–আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে (৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯–এর গার্ডিয়ান, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট) প্রকাশিত হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে লন্ডনের হাইগেট সমাধিক্ষেত্রে মহান নেতা ও চিন্তানায়ক কার্ল মার্কসের স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর করেছে কিছু অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী৷ দুনিয়ার বিপ্লবী সর্বহারা শ্রেণি এবং সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রগতিশীল মানুষের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরা সর্বপ্রকার শোষণ–নিপীড়ন থেকে মানবসমাজের মুক্তির দিশারি এই মহান মানুষটির স্মৃতিস্তম্ভে এই জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা করছি৷ লক্ষণীয়, ওই সমাধিক্ষেত্রের আর কোনও কবরের কোনওরকম ক্ষতি করা হয়নি৷ এ থেকেই বোঝা যায় এই আক্রমণ আকস্মিক কোনও ঘটনা নয়৷ এই ভাঙচুর আসলে মার্কসের নাম মুছে দেওয়ার লক্ষ্যেই করা হয়েছে৷ পুঁজিবাদ–সাম্রাজ্যবাদের লাগামছাড়া শোষণের নিষ্ঠুর ছবি যত বেশি বেশি করে স্পষ্ট হচ্ছে, মার্কসবাদী আন্দোলন এবং তার চর্চা ততই নতুন করে ব্যাপক হারে বাড়ছে৷ এতে আতঙ্কিত প্রতিক্রিয়ার দালালরা৷ এই আক্রমণ তাদের মস্তিষ্কলালিত মূর্খামির পরিচয়৷ উল্লেখ্য যে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও সে দেশে যতটুকু গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য অবশিষ্ট ছিল তার প্রভাবে এতদিন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ মার্কসের স্মৃতিস্তম্ভের রক্ষণাবেক্ষণ করে এসেছে৷ কিন্তু ১৮৮৩ সালে স্থাপিত মার্কসের সমাধির মূল স্মৃতিফলকটিকে ১৯৫৪ সালে যে মার্বেল ফলকে স্থাপন করা হয়েছিল তার ক্ষতি করার মতো জঘন্য কাপুরুষোচিত কাজ প্রমাণ করে, পরমত সহিষ্ণুতা এবং গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডলের অবশেষটুকুও ব্রিটেনের মাটি থেকে লুপ্ত হয়ে গেছে৷ কায়েমী স্বার্থের প্রচ্ছন্ন মদত ছাড়া এই হামলা ঘটতে পারত না৷

ইতিহাস একথা বারবার প্রমাণ করেছে, এই ধরনের বুদ্ধিহীন গুণ্ডামি এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ সাধারণ মানুষের হৃদয়ে আসীন মহান মনীষীদের গভীর প্রভাবকে ক্ষুণ্ণ করা দূরে থাক, তাতে এতটুকু আঁচড়ও কাটতে পারে না৷ তাই দীর্ঘদিন ধরে মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণের শৃঙ্খলকে ভেঙে পুঁজিবাদের মৃত্যুঘন্টা শোনার অপেক্ষায় আছে যে কোটি কোটি শোষিত জনগণ, হতাশা থেকে উদ্ভূত এই রকম দুষ্কর্ম তাদের মনে মার্কসের শ্রদ্ধার আসনকেই আরও দৃঢ় করে তুলবে৷ দুনিয়ার সকল গণতান্ত্রিক চিন্তাসম্পন্ন বিবেকবান মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, এই দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানান৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ২৭ সংখ্যা)