মিড–ডে মিল কর্মীর রাজ্য সম্মেলন

এ আই ইউ টি ইউ সি অনুমোদিত সারা বাংলা মিড–ডে মিল কর্মী ইউনিয়নের প্রথম রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৭ অক্টোবর কলকাতার ভারতসভা হলে৷ রাজ্যের সব জেলা থেকে প্রায় ৩৫০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন৷ সম্মেলনে মিড–ডে মিল কর্মীরা নিজেদের জীবন যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন৷ তাঁরা বলেন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের দুপুরে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার মিড–ডে মিল প্রকল্প চালু করে৷ এই প্রকল্পে রান্নার কাজে প্রচণ্ড আগুনের গরমে থেকে খাবার রান্না করা, পরিবেশন করা ও খাওয়া শেষে বাসন ধোয়া সহ সকল কাজই তাঁদের করতে হয়৷ বাজার করা, সব্জি কাটা, জল আনা সহ অন্য কাজও করতে হয়৷ খিদে পেলেও, ওখান থেকে খাওয়ার কোনও আইনসঙ্গত অধিকার তাঁদের নেই৷ গ্যাসে রান্নার সংস্থান থাকলেও, খরচ কমানোর জন্য এঁদের কাঠ দিয়ে রান্না করতে হয়৷

এত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও এঁরা পারিশ্রমিক পাই মাসে ১৫০০ টাকা৷ এই পারিশ্রমিকও পাওয়া যায় বছরে ১২ মাসের মধ্যে ১০ মাস, বাকি দু’মাসের টাকা দেওয়া হয় না৷ এই সামান্য টাকাও নিয়মিত দেওয়া হয় না৷ কিন্তু হরিয়ানাতে এই পারিশ্রমিক দেওয়া হয় মাসে ৩৫০০ টাকা ও কেরলে মাসিক ৬৫০০ টাকা৷ এই কর্মীরা পি এফ, পেনশন সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত৷

গত বছরে এবং এ বছরে আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সামান্য বেতন বৃদ্ধি করলেও মিড–ডে মিল কর্মীরদের ক্ষেত্রে কোনও সরকারই এক পয়সাও ভাতা বাড়ায়নি৷ এছাড়াও সংবাদে প্রকাশ যে, সমগ্র মিড–ডে মিল প্রকল্পকেই এনজিও–র হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ যার ফলস্বরূপ ত্রিপুরায় বহু বিদ্যালয়ে মিড–ডে মিলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে ‘ইসকন’ সংস্থার হাতে৷ যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক৷ শুধু তাই নয়, মিড–ডে মিল প্রকল্পকে বন্ধের চক্রান্তও চলছে৷

সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন এআইইউটিইউসি–র রাজ্য সম্পাদক কমরেড দিলীপ ভট্টাচার্য৷ তিনি বলেন, আন্দোলন জোরদার করেই জনস্বার্থবিরোধী এই সরকারগুলির কাছ থেকে দাবি আদায় করা সম্ভব৷ সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি কমরেড অশোক দাস৷ সম্মেলনে অশোক দাসকে উপদেষ্টা, সনাতন দাসকে সভাপতি, সুনন্দা পণ্ডাকে সম্পাদিকা, শ্যামল রামকে অফিস সম্পাদক করে ৪৩ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়৷ সম্মেলন থেকে আগামী ৩০ ডিসেম্বর’১৯ কলকাতায় হাজার হাজার মিড–ডে মিল কর্মীর বিক্ষোভ–সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ১১ সংখ্যা)