মধ্যপ্রদেশের ৩০০০ জুনিয়র ডাক্তারের ইস্তফা

প্রতিশ্রুতি রাখেনি বিজেপি সরকারঃ একযোগে ইস্তফা দিলেন মধ্যপ্রদেশের ৩০০০ জুনিয়র ডাক্তার

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকারের কাছে তাঁরা দাবি জানিয়েছিলেন সংক্রমিত হলে তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। বাড়াতে হবে স্টাইপেন্ড। দাবি মানেনি সে রাজ্যের বিজেপি সরকার। প্রতিবাদে ৬ মে ধর্মঘট শুরু করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এরপর সরকার প্রতিশ্রুতি দিলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ধর্মঘট তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার। সরকার কোনও কার্যকরী ব্যবস্থাই নেয়নি। বাধ্য হয়ে ৩১ মে থেকে জুনিয়র ডাক্তাররা আবার ধর্মঘট শুরু করেন।

এরপরই বেরিয়ে আসে সে রাজ্যের বিজেপি সরকারের হিংস্র চেহারা। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হতে থাকে। পাঠানো হয় পুলিশ। ভয় পাননি ডাক্তাররা। কোনও মতেই আন্দোলনের ঐক্য ভাঙতে পারেনি বিজেপি সরকার। আদালতে অভিযোগ দায়ের হয়। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট এই ধর্মঘটকে বেআইনি ঘোষণা করে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু মাথা নোয়াননি ডাক্তাররা। ভবিষ্যৎ বাজি রেখে দলে দলে ইস্তফা দিতে থাকেন তাঁরা।

ইতিমধ্যে রাজ্যের ৬টি মেডিকেল কলেজের প্রায় ৩০০০ জুনিয়র ডাক্তার ইস্তফা দিয়েছেন। মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার সহ দেশের প্রগতিশীল চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী সংগঠনগুলি এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে, সংহতি জানিয়েছে। আন্দোলন ভাঙার জন্য মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের মিথ্যা প্রচার ও হুমকির তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। এস ইউ সি আই (সি)-র মধ্যপ্রদেশ রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে ১০ জুন এক বিবৃতিতে জুনিয়র ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি রাজ্যের বিজেপির সরকারের অন্যায় আচরণের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। ডাক্তারদের সমস্ত দাবি মেনে নিয়ে এই অতিমারি পরিস্থিতিতে অবিলম্বে তাঁদের কাজে ফেরানোর জন্য মধ্যপ্রদেশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে দল।

মধ্যপ্রদেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থার হাল অত্যন্ত খারাপ। এই কোভিড অতিমারিতে বিপন্ন সময়ে চিকিৎসা খাতে ব্যয় বাড়ানোর বদলে সেখানকার বিজেপি সরকার ২০২০-‘২১-এর স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দ ১২ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। স্থায়ীভাবে নিয়োগ করার বদলে নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এমনকি ডাক্তারদের পর্যন্ত তিন মাস, এমনকি তারও কম সময়ের জন্য ঠিকায় নিয়োগ করছে সে রাজ্যের সরকার। শুধু তাই নয়, স্থায়ী চাকরির দাবিতে করোনা-যোদ্ধা চিকিৎসাকর্মীরা বিক্ষোভ দেখালে তাঁদের ওপর নির্মম লাঠিচার্জ করেছে বিজেপি সরকারের পুলিশ। গত ছ’মাস ধরে জুনিয়র ডাক্তাররা বার বার তাঁদের দাবি সরকারের কাছে জানিয়ে আসা সত্ত্বেও তারা কর্ণপাত করেনি। এই অবস্থায় ধর্মঘটের পথে যাওয়া ছাড়া তাঁদের উপায় ছিল না।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও নাকি কোভিড-যোদ্ধা ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি প্রচণ্ড শ্রদ্ধাশীল। তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানোর নামে, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের মানুষকে হাততালি দিতে বলেছিলেন। তাঁর নির্দেশে হাসপাতালগুলিতে হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছড়ানো হয়েছিল। মধ্যপ্রদেশে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি বিজেপি সরকারের আচরণ স্পষ্ট দেখিয়ে দিচ্ছে যে এ সমস্তই ছিল লোক দেখানো চমক। এতদিন পরেও বিজেপি শাসিত একটি রাজ্যে কোভিড যোদ্ধাদের নিজেদের ও পরিবারের জন্য বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসার জন্য দাবি তুলতে হচ্ছে। এ তো তাঁদের ন্যায্য পাওনা! এর জন্য তাঁদের দাবি জানতে হবে কেন? ধর্মঘট করতে হবে কেন? আসলে, কেন্দ্র বা রাজ্য, সবক্ষেত্রেই বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতিই সার। সরকারের এই ভাঁওতার বিরুদ্ধে ন্যায্য দাবিতে লড়ছেন মধ্যপ্রদেশের জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে দেশের সমস্ত বিবেকবান, গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের সংহতি জানানো কর্তব্য।