ভোটের জন্যই যুদ্ধ–জিগির

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ৪০ জন সি আর পি এফ জওয়ান জঙ্গি হামলায় নিহত হওয়ার খবর সম্প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই গোটা দেশ জুড়ে একটা যুদ্ধোন্মাদনা চাগিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে৷ কি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বা প্রিন্ট মিডিয়া, সবেতেই একটা আলোচনা ‘এই যুদ্ধ লাগল বলে’ আর সীমান্তে যুদ্ধের উত্তাপ ছড়াক বা না ছড়াক তার চেয়ে বেশি ‘যুদ্ধংদেহি’ উত্তাপ সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে৷ ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ– সর্বত্র অন্ধ পাকিস্তান বিরোধী প্রচার৷

উল্টো ছবিও আছে৷ প্রশ্ন উঠছে, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘৫৬ ইঞ্চি ছাতি’ ফুলিয়ে ‘তাল ঠোকেন’ সেই প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর উপর হামলা হতে পারে এমন সতর্কতামূলক খবর থাকা সত্ত্বেও আগাম কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না কেন? যারা দেশের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত এবং প্রত্যেক বছর যাদের উন্নয়নের কথা বলে সরকার মোট বাজেটের বৃহৎ অংশ ব্যয় করে, তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকারের এতটুকু হেলদোল নেই কেন? যে রাস্তা দিয়ে সেদিন সেনা গিয়েছিল তা নাকি নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঞ্চল সেই রকম একটি অঞ্চলে ৩৫০ কেজি আর ডি এক্স নিয়ে একটি গাড়ি নিরাপত্তার বেড়াজাল টপকে ঢুকে পড়ল কীভাবে? আর এই প্রশ্নগুলি তুললেই তাদের দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে কোন যুক্তিতে?

পুলওয়ামার ঘটনার ১২ দিন পরে দেশের বিমানবাহিনী ১২টি মিগ–২১ যুদ্ধ বিমান সহযোগে পাকিস্তানের বালাকোটে হামলা চালাল৷ ভারতীয় মিডিয়া এক নাগাড়ে প্রচার করে গেল, ‘ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় ৩৫০ জন জঙ্গি খতম হয়েছে’৷ কিন্তু তার স্বপক্ষে কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ সরকারের তরফে পেশ করা হল না৷

আন্তর্জাতিক মিডিয়া ভারতীয় মিডিয়ার দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল যে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলায় ক্ষতি হয়েছে ১৫টা পাইন গাছ, আর মরেছে ১টি মাত্র কাক তখন সরকারের নেতা–মন্ত্রীরা নিজেদের মুখ ঢাকতে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য শুরু করে দিলেন৷ তা হলে সত্য কোনটা? প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে সত্য বলছেন না কেন? দেশের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন আসন্ন৷ পাঁচ বছর পূর্বে প্রতিশ্রুতির যে ডালা সাজিয়ে সরকারি ক্ষমতায় বসেছিল বর্তমান শাসকদল তা পুরোটাই যে ‘ভাঁওতা’  তা এখন জলের মতো পরিষ্কার৷ ফলে সরকারের নেতা–মন্ত্রীরা যখন নির্বাচনের প্রাক্কালে জনগণের দুয়ারে ভোট ভিক্ষে করতে যাবেন এখন তো তাদেরকে জনগণের ‘তেতো বড়ি’ মার্কা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে৷ ফলে সেটা যাতে না ঘটে তার জন্যই কি যুদ্ধ যুদ্ধ জিগির তোলা?

সৌপ্তিক পাল

কলকাতা

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৩২ সংখ্যা)