ভারত পাকিস্তান দুই স্বাভাবিক প্রতিবেশী একযোগে লড়ুক দারিদ্র আর মৌলবাদের বিরুদ্ধে — পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি

সম্প্রতি পাকিস্তান এবং ভারতে উগ্র দেশপ্রেমের নামে উন্মত্ততা বিশাল ভূখণ্ড জুড়ে যে অর্থহীন যুদ্ধ–যুদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তার নিন্দা করে কমিউনিস্ট পার্টি অফ পাকিস্তানের (সিপিপি) পলিটবুরো ২৭ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেছে– সীমান্তের দুই পারে ব্যাপক গোলাবর্ষণ, বিমান থেকে বোমা ফেলা– এ সব কিছুই জাতীয় সম্পদের চূড়ান্ত অপচয় মাত্র৷ সন্দেহ নেই, এই উত্তেজনা উগ্র ধর্মান্ধ শক্তিগুলি এবং সামরিক ক্ষেত্রের কায়েমি চক্রের পক্ষে খুবই উপযোগী৷ এর সাথে দুই দেশের সাধারণ মানুষের ভাল থাকার কোনও সম্পর্ক নেই৷

এই দুই দেশ মিলিয়ে ৭০ কোটির বেশি মানুষ অনাহারে, চূড়ান্ত কষ্টের মধ্যে দিন কাটান৷ এর থেকে আরও বেশি সংখ্যার মানুষের কাজের সংস্থান নেই৷ কৃষক, শ্রমিক, কর্মহীন অসংখ্য মানুষ ঋণের ভারে বিপর্যস্ত৷ এই বর্বর পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বেঁচে থাকতে না পেরে তাদের কেউ আত্মহত্যা করে৷ কেউ বা বাঁচার চেষ্টায় নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়, কেউ বা নিজের অঙ্গ বেচে চেষ্টা করে বেঁচে থাকার৷

সিপিপি মনে করে, এই পরিস্থিতিতে নিজ নিজ দেশের জনগণকে কিছুই না দিতে না পারার জন্য লজ্জিত হওয়া দূরে থাক, শাসকরাএই অনভিপ্রেত যুদ্ধ উন্মাদনার সুযোগে সামরিক খাতে নতুন করে বিপুল পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ আদায় করে নেওয়ার সুবিধা পেয়ে গেল৷

সিপিপি বলেছে, দুই দেশেই ক্ষমতাসীন তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলি একই মুদ্রার এপিঠ–ওপিঠ৷ উভয়েই তাদের রাজনৈতিক উচ্চাশা চরিতার্থ করতে নোংরা খেলায় মেতেছে৷ বৃহত্তর ক্ষেত্রে তারা তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভু ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থও এর মধ্য দিয়ে চরিতার্থ করছে৷

ভারত এবং পাকিস্তান দুই যমজ স্বাভাবিক প্রতিবেশী এশিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূ–রাজনৈতিক অবস্থানে বিরাজ করছে৷ এই রকম মারমুখো উত্তেজক পরিস্থিতির বদলে উভয়েরই উচিত একে অপরের প্রতি সম্মান ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির ভিত্তিতে সমস্ত বকেয়া বিতর্ক রাজনৈতিক আলাপ–আলোচনার মাধ্যমেই মিটিয়ে নেওয়া৷ দু’দেশকে অবশ্যই একযোগে লড়তে হবে, কিন্তু তা হবে দারিদ্র, বেকারি, আশ্রয়হীনতা, ফ্যাসিবাদী চিন্তা, ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অন্ধতা, মৌলবাদ এবং নৈতিক অধঃপতনের বিরুদ্ধে৷

সিপিপি দুই দেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলি, প্রগতিশীল এবং গণতন্ত্রপ্রিয় শক্তিগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছে, ঐক্যবদ্ধভাবে নিজ নিজ দেশের শাসক এবং সামরিক কর্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে, যাতে যুদ্ধ হুঙ্কারের স্থান নেয় শান্তি৷ তাদের আবেদন, জাতীয় সম্পদকে কামানের খাদ্যে পরিণত করা নয়– তাকে জনমুখী কর্মসূচিতে, মানুষের কর্মসংস্থানের কাজে লাগানোর জন্য জনগণের ঐক্য চাই৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৩০ সংখ্যা)