Breaking News

বাসদ (মার্কসবাদী)-র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর জীবনাবসানে  এস ইউ সি আই (সি)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের শোকবার্তা

প্রিয় কমরেডস,

বাসদ (মার্কসবাদী) দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিপ্লবী নেতা কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত বাসদ (মার্কসবাদী) দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি সমব্যথী হিসাবে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

এটা আপনাদের প্রায় সকলেরই জানা আছে, কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর বৈপ্লবিক রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ভারতবর্ষের মাটিতে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ শাসিত অবিভক্ত ভারতে তিনি তাঁর এক বড় ভাইয়ের বাসায় থাকাকালীন সদ্য কৈশোর-অতিক্রান্ত যৌবনে ১৯৫১ সালে মহান মার্কসবাদী চিন্তানায়ক, এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড শিবদাস ঘোষের সংস্পর্শে এসে বৈপ্লবিক চিন্তায় শিক্ষিত ও অনুপ্রাণিত হন এবং প্রচলিত জীবনের আকর্ষণ ত্যাগ করে বিপ্লবী সংগ্রামে সর্বাত্মকভাবে আত্মনিয়োগ করেন।

তিনি এদেশে থাকাকালীন কংগ্রেস সরকারবিরোধী বহু গণআন্দোলনে সংগ্রামী ভূমিকা পালন করে কয়েকবার কারাবরণ করেন ও পুলিশি নির্যাতন সহ্য করেন।

এদেশে শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রামে, গরিব কৃষক ও খেতমজুর আন্দোলনে, যুব-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সংগ্রামে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং একজন সুদক্ষ সংগঠক হিসাবে গড়ে ওঠেন। তিনি দিল্লি ও হরিয়ানা রাজ্যে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) সংগঠন গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ না পেলেও তিনি কমরেড শিবদাস ঘোষের বৈপ্লবিক শিক্ষায় ও তাঁর সাহচর্যে মার্কসবাদী দর্শন ব্যাখ্যায়, আন্তর্জাতিক-জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে, সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রশ্নে মনোজ্ঞ আলোচনায়, বিপ্লবী দল এবং শ্রেণি ও গণসংগঠন গঠনে, বিপ্লবী আদর্শ ও দলের প্রতি তরুণদের প্রবল আকর্ষণ সৃষ্টি ও মানবিক মূল্যবোধ-বিবেক-মনুষ্যত্ব জাগানোতে মর্মস্পর্শী আবেদনে বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

৪৮ লেনিন সরনি

তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারা প্রচার ও বিপ্লবী দল গড়ে তোলা এবং বিপ্লবী সংগ্রাম সংগঠিত করাই জীবনের একমাত্র ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। এই উদ্দেশ্যেই তিনি ১৯৭২ সালে তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশে যান এবং সম্পূর্ণ একাকী সংগ্রাম শুরু করে সকল বাধাবিঘ্ন, প্রতিকূলতাকে জয় করে বহু ছাত্র, যুবক, বুদ্ধিজীবী ও গরিব সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে বাংলাদেশে যথার্থ সাম্যবাদী দল বাসদ (মার্কসবাদী) প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত ও বার্ধক্যজনিত দৈহিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি এই বিপ্লবী সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।

সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের বৈপ্লবিক শিক্ষায় উচ্চতর হৃদয়বৃত্তি ও উন্নততর জ্ঞানের অধিকারী হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে বহু মানুষের হৃদয়ে তিনি মহান বিপ্লবী যোদ্ধা ও অতি উজ্জ্বল চরিত্র হিসাবে সুগভীর শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদী হিসাবে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, আরবভূমিতে মার্কসবাদ- লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারা প্রচারে এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন সংগঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।

কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষায় উন্নত সংস্কৃতি ও চরিত্রের অধিকারী এই বিপ্লবী যোদ্ধা শোষিত জনগণের প্রতি দরদবোধে উন্নততর, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষ চিন্তাধারা ও সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্যসম্পন্ন, প্রতিকূল সংগ্রামে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও সাহসী, বিপ্লবী আদর্শ, কর্মনিষ্ঠায় অবিচল, জুনিয়র কর্মীদের প্রতি স্নেহপ্রবণ, আত্মপ্রচারবিমুখ ও নিরহঙ্কারী ছিলেন।

ভারতবর্ষের বিপ্লবী আন্দোলনে তাঁর বিশেষ ভূমিকা আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি।

আমাদের দল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের যথার্থ সাম্যবাদী বাসদ (মার্কসবাদী) দল সদ্যপ্রয়াত কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর স্বপ্ন ও সাধনাকে সফল করার উদ্দেশ্যে মহান মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারা ও সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদের পতাকাকে ঊর্ধ্বে বহন করে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ ও দেশীয় পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী সংগ্রামে এগিয়ে যাবে।

আমাদের দল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, মহান আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী বাংলাদেশের বাসদ (মার্কসবাদী) ও ভারতবর্ষের এসইউসিআই(কমিউনিস্ট) উভয় দলের বৈপ্লবিক সৌভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক বজায় থাকবে ও শক্তিশালী হবে।

আমৃত্যু বিপ্লবী কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী লালসেলাম

বাসদ (মার্কসবাদী) জিন্দাবাদ

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারা জিন্দাবাদ

সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদ জিন্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ

আপনাদের সকলকে আমাদের দলের পক্ষ থেকে লাল সেলাম জানাচ্ছি।

বিপ্লবী অভিনন্দন সহ

প্রভাস ঘোষ

সাধারণ সম্পাদক

সোস্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অফ ইন্ডিয়া (কমিউনিস্ট)

গণদাবী ৭৩ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা