Breaking News

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কালা দিবসে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিতে সোচ্চার হোন

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সৌধ বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল আরএসএস–বিজেপি৷ দেশজুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ নামিয়ে এনেছিল তারা৷ সে হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় দু’হাজার মানুষ, আহত অসংখ্য৷ আরএসএস–বিজেপি বাহিনীর সে দিনের সেই পাশবিকতা, হিংস্রতা, বর্বর উন্মাদনা ক্ষত বিক্ষত করেছিল ভারতীয় সভ্যতাকে৷

ইদানীং সেই হিংস্রতা, সেই বর্বরতা চলছে আরও তীব্র গতিতে৷ আজ দেশের কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসীন বিজেপি যার মূল চালিকাশক্তি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ৷ ভারতের একচেটিয়া পুঁজিপতিরা ২০১৪ সালের মে মাসে সংঘের একনিষ্ঠ সেবক নরেন্দ্র মোদিকে কেন্দ্রের তখতে বসিয়েছে অনেক অংক কষেই৷ সে সময় থেকেই গোটা দেশজুড়ে  সাম্প্রদায়িক হিংসার সুর চড়ানো হয়েছে ক্রমাগত৷ ধর্মান্তরণ, গোরক্ষা, গোমাংস ইত্যাদি নানা অজুহাতে ইতিহাসকে বিকৃত করে, জাতীয়তাবাদ বা হিন্দুত্বের নামে উগ্র মুসলিম বিদ্বেষ তৈরি করে জনজীবনকে ব্যাহত করে ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়িয়ে দেশের অবশিষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধূলিসাৎ করার ঘৃণ্য কাজে তারা মত্ত৷ এর বিরুদ্ধে যে সব মানুষ সরব হয়েছেন তাঁদের খুন করা হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন৷ একচেটিয়া মালিকদের সেবা করতে গিয়ে বিজেপি দেশের মানুষের উপর যে অত্যাচারের বুলডোজার চালাচ্ছে তাকে ঢাকতে এখন এই ধর্মীয় উন্মাদনাই বিজেপি’র একমাত্র হাতিয়ার৷

জনস্বার্থের যে সব গালভরা বুলি বিজেপি ভোটের আগে উচ্চারণ করেছিল, গদি হাতে পাওয়ার পর তার কোনওটা পূরণেই তারা বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায়নি৷ বরং কালোটাকা ধরার নামে নোট–বাতিলের চালিয়াতি করে গরিব মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন–জীবিকার উপর মারাত্মক আঘাত করেছে৷ মধ্যপ্রদেশে ফসলের দাম না–পাওয়া চাষিরা যখন রাস্তায় অনশনে বসে তখন তাদের গুলি করে হত্যা করেছে হিন্দুত্বের এই ধ্বজাধারীরা৷ চরম মূল্যবৃদ্ধির সময়েও শতাধিক জীবনদায়ী ওষুধের দাম বাড়িয়েছে৷ জিএসটি’র নামে বহু জিনিসের উপর চাপিয়েছে ব্যাপক করের বোঝা৷ বিপরীতে, সুদিন এনে দিয়েছে সেই সব একচেটিয়া শিল্পপতিদের যারা ভোটের আগে বিজেপি’র হাতে দিয়েছিল কোটি কোটি টাকা৷ গত প্রায় সাড়ে তিন বছরের শাসনে দেখা যাচ্ছে কোনও দিক থেকে কোনওভাবেই বিজেপি দেশের জনসাধারণের জন্য কিছু করতে পারেনি৷

এই চরম ব্যর্থতা আড়াল করতে এবং ভোটে জিততে সে  ছড়াচ্ছে ভ্রাতৃঘাতী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষ৷ ধর্ম–বর্ণ–জাত–গোত্র ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে নানান ভাবাবেগ লালন–পালনে মদত দিয়ে আসছে পুঁজিবাদ৷ সেগুলিকে খুঁচিয়ে তুলে, একের বিরুদ্ধে অন্যকে লড়িয়ে সুজলা সুফলা এই দেশের আশি–পঁচাশি ভাগ মানুষকে খাদ্য–বস্ত্র–বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে মনুষ্যেতর জীবন যাপনে বাধ্য করছে৷

পঁচিশ বছর আগে বাবরি মসজিদ ভেঙে নিজের যে হিংস্র মুখ বিজেপি ও সংঘ–পরিবার দেখিয়েছিল, সে মুখ আজ আরও ভয়ঙ্কর, আরও মারাত্মক৷ আশার কথা, এই পৈশাচিক মুখ চিনতে পারছে দেশের সাধারণ মানুষ, জীবনের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায়৷ ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার লড়াইয়ে তারা প্রস্তুত হচ্ছে৷ হাতুড়ি পেটা শ্রমিকের হাত একত্রিত হচ্ছে, বীজ পোঁতা কৃষকের হাত হচ্ছে প্রসারিত৷ ধর্ম–বর্ণ–জাতির ঊর্ধ্বে উঠে তারা কোমর বাঁধছে দলে দলে৷ সমস্ত রকমের শোষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণ আন্দোলনের উত্তাপ তাদের হৃদয়ে সঞ্চারিত করেছে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) পার্টি৷ দৃঢ় প্রত্যয়ে গড়ে তোলা তাদের প্রতিরোধ আরএসএস–বিজেপি সহ সমস্ত ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তিকে রুখে দেবে৷ ধর্মের আড়ালে পুঁজিবাদ–সাম্রাজ্যবাদের শোষণ অত্যাচার নিপীড়ন সমূলে উচ্ছেদ করবে তারাই৷