বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ (পাঠকের মতামত)

বাংলাদেশে বর্তমান সাম্প্রদায়িক আক্রমণটি হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনা নয়। এরকম পরিস্থিতিতে অনেকেই হতবিহ্বল। কারণ এর ব্যাপকতা। এর একটি দীর্ঘ যাত্রা রয়েছে। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অনুপস্থিতি এই পরিস্থিতি তৈরি করতে সহায়তা করেছে। জনগণের চেতনার মান সারশূন্য না করলে বুর্জোয়াদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠান থাকা সহজতর নয়। আমরা এমন এক ভঙ্গুর শাসনের অধীন। এখানে রাজনৈতিক ইস্তেহারের মূল্য কমে গেছে। আওয়ামি লিগের প্রধান প্রতিপক্ষ হল বিএনপি। আর বিএনপিকে সাইজ করতে গিয়ে বিএনপির রাজনীতির সাথে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধর্মভিত্তিক দলগুলো ছিল তাদেরকে বিকাশিত করার সুযোগ করে দিয়েছে আওয়ামি লিগ। হেফাজতের প্রচ্ছন্ন শক্তিগুলো বিএনপি জোটে অবস্থান করতো। এই খেলাটা এখন অতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।

আমি মনে করি, আমাদের টেক্সটবুক বোর্ডের সিলেবাসে কী থাকবে, না থাকবে, হেফাজতের এই দাবি যখন এই সরকার মেনে নিয়েছে সে দিন থেকেই আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নটি মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। আপনারা দেখবেন পাড়া-মহল্লায় সরকারি দলের এমপিদের প্রধান অতিথি করে ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন করতে। তাতে ধর্মীয় আলোচনা হলে অসুবিধার কিছু ছিল না। প্রধান অতিথি উদ্বোধন করে চলে যাওয়ার পর– ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, অপর ধর্মগুলো নিয়ে বিদ্বেষ ছিল বক্তব্যের প্রধান বিষয়। এরা সেই বক্তব্যগুলো ইউটিউবে ছড়িয়ে দেখেছে এর লক্ষ লক্ষ ভিউয়ার। এই রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের একটি আলোচনার ভিউয়ার হয়ত হাতে গোনা। এই যে পার্থক্য এটা একটি পশ্চাৎপদতারই সূচক। এই ওয়াজ করতে করতেই তারা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। শাসক দল বড় ধাক্কাটি খেয়েছে বুড়িগঙ্গা ব্রিজের মুখে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করতে গিয়ে।

এরপর এই শক্তিটিকে তারা যেভাবে মোকাবেলার চেষ্টা করেছে তাও কিন্তু জোর খাটিয়ে। রাজনৈতিক-সামাজিক ভাবে এই যে পরাজয় এর পেছনে রয়েছে আওয়ামি লিগের ভোটারবিহীন নির্বাচন, তার সাথে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতি এবং জনগণের বাক ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ। এভাবে ক্ষমতায় থাকলে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হয়, তারাও বোধ হয় তা জানে। আসলে আমাদের দেশ সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া একটি দেশ। এখানে ধর্মের অপপ্রচার মোকাবিলা করে আমরা আমাদের দেশ স্বাধীন করেছি। উক্ত সময়ে ধর্মগোষ্ঠীগুলো পরাজিত হয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল। দুঃখজনক হলেও এই সত্যটি আজ স্বীকার করতে হবে, আওয়ামি লিগের পৃষ্ঠপোষকতায় আবার উগ্র ধর্মীয় রাজনীতি জায়গা করে নিয়েছে। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে এমন এক ফাঁদ সে নিজেই রচনা করেছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য এ এক মরণফাঁদ। আমরা যদি বিষবাষ্প মুক্ত আধুনিক একটি দেশ পেতে চাই, তা হলে আওয়ামি লিগ-বিএনপির বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং সে কেবলমাত্র বাম-গণতান্ত্রিক শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিকদের দ্বারাই সম্ভব। এই শক্তিটির বিকশিত হওয়া জরুরি। বিকশিত হলে আপনার আমার হতাশা তখনই কাটবে।

মহম্মদ হক আরিফ, ঢাকা

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ১৩ সংখ্যা ৫ নভেম্বর ২০২১