বাঁকুড়ায় কিডনির রোগীরা ওষুধের দাবিতে আন্দোলনে

সচরাচর যেমনটা দেখা যায় না, গত ২৪ ডিসেম্বর কার্যত তেমন দৃশ্যই দেখা গেল বাঁকুড়া সিএমওএইচ এবং জেলাশাসকের দপ্তরে। কিডনি রোগে আক্রান্ত নিয়মিত ডায়ালিসিস করে বেঁচে থাকা রোগীরা যাদের মধ্যে কিছু সংকটজনক রোগীও আছেন, তাঁদেরই মিছিল করে এসে স্মারকলিপি দিতে হল জীবনদায়ী ওষুধের সুষ্ঠু সরবরাহের দাবিতে।

কিডনি রোগে আক্রান্ত ডায়ালিসিস রোগীদের শরীরে প্রোটিনের গুরুতর ঘাটতি মেটানোর জন্য এরিথ্রোপোয়টিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি জীবনদায়ী ওষুধ। এই ওষুধের রোগীদের অবস্থা অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে এক দুই বা তিনটি পর্যন্ত ইঞ্জেকশন লাগতে পারে। এতদিন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় এই ইনজেকশনের ভায়ালগুলি রোগীদের প্রত্যেক মাসে এককালীন দিয়ে দেওয়া হত। ফ্রিজে রেখে সময়মতো নিয়ে নিতেন রোগীরা। বাঁকুড়া জেলার ক্ষেত্রে দু’মাস হল সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে এবার থেকে প্রতিটি ডোজ রোগীকেই হাসপাতালে এসে নিয়ে যেতে হবে। আগের মতো এককালীন দেওয়া হবে না। এর ফলে রোগীদের প্রাণান্তকর হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সপ্তাহে দু’দিন অথবা তিনদিন বিভিন্ন হাসপাতালে ডায়ালিসিসের পরে ইঞ্জেকশনের জন্য ছুটতে হচ্ছে জেলা হাসপাতালে, গুরুতর অসুস্থ রোগীকেই লাইনে দাঁড়িয়ে তা নিতে হচ্ছে প্রাণের দায়ে। কোনও কোনও রোগীর বাড়ি ৬০-৭০ কিলোমিটার দূরে। সপ্তাহে দু’-তিন দিন জেলায় ছুটে আসা, তারপর লাইনে দাঁড়িয়ে ইঞ্জেকশন নেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব ও অমানবিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। নতুন এই নিয়মের ফলে অসংখ্য রোগীকে ওষুধ ছাড়াই থাকতে হচ্ছে। পরিণামে অত্যন্ত দ্রুত অবনতি হচ্ছে বহু রোগীর স্বাস্থ্যের।

বাঁকুড়া জেলায় ইতিমধ্যে কিডনি রোগীদের নানা সমস্যার সমাধান এবং পারস্পরিক সহযোগিতা তথ্যের আদান-প্রদান, রক্তের জোগানের জন্য রক্তদান শিবির সংগঠিত করা ইত্যাদির লক্ষ্যে কিডনির রোগে গুরুতর অসুস্থ সুজিত রায়ের উদ্যোগে কিডনি কেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। বাঁকুড়া জেলার স্বাস্থ্য দপ্তরের এই অমানবিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কিডনি কেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রোগীরা নিজেরাই রাস্তায় নামেন।

তাঁরা দাবি জানান, আগের মতো প্রতি মাসে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ইনজেকশন একসাথেই দিতে হবে। কর্তৃপক্ষ দাবি না মেনে নিলে এই রোগীদের বিশেষ করে যারা আর্থিকভাবে সঙ্গতিহীন তাদের মৃত্যু ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই। কিডনি কেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুজিত রায় জানিয়েছেন, জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর এই দাবি মেনে না নিলে তারা প্রয়োজনে আমরণ অনশনে বসবেন।

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ২২ সংখ্যা ৭ জানুয়ারি ২০২২