বজবজে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে রোজগার হারিয়ে গভীর সঙ্কটে কয়েকশো পরিবার

কলকাতা মহানগরীর দক্ষিণ শহরতলি ঘেঁষা মফঃস্বল অঞ্চল বৃহত্তর বজবজ। একসময় হুগলি নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা এই জনপদ একদিকে ছিল শিল্প আর অন্য দিকে ছিল কৃষি নির্ভর। এখন সেই শিল্প ধুঁকছে। আর কৃষিও ক্রমাগত অলাভজনক হয়ে উঠছে। এমনি দুরবস্থার মধ্যে কেউ এলাকার বাইরে গিয়ে দিনমজুর কেউ বা নদীতে মাছ ধরে কিংবা ভাটার সময় নদীর চরে এক কোমর জলে নেমে সাদা বালি তুলে বিক্রি করে কোনওক্রমে সংসার নির্বাহ করে।

বিড়লাপুর, রায়পুর, গদাখালি বজবজ দু’নম্বর ব্লকের অন্তর্গত এই গ্রামগুলির বহু মানুষের পেশা মাছ ধরা ও বালি তোলা। কিন্তু কয়েক মাস আগে পুলিশ প্রশাসন নদী থেকে সাদা বালি তোলা বেআইনি ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোন আইনের বলে পুলিশ এই কাজ বেআইনি ঘোষণা করেছে নোদাখালি থানার পুলিশ আধিকারিক তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা গ্রামবাসীদের কাছে দিতে পারেননি।

ভাটার সময়ে নদী থেকে সাদা বালি তুলে জীবিকা নির্বাহ করতেন গদাখালি গ্রামের বছর পঁচিশের যুবক সৌরভ। তাঁর কথায়, শুধুমাত্র এই গ্রামেরই প্রায় দেড়শো নৌকার সাথে জড়িত সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো মানুষ এই কাজে যুক্ত ছিল। আশপাশের গ্রাম ধরলে সংখ্যাটা আরও বেশি। বিগত কয়েক মাস ধরে তারা সকলেই কর্মহীন। তার ছাপ পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়। গ্রামের এক চায়ের দোকানে বিকেলে মাছি তাড়িয়ে যাচ্ছেন দোকানদার। আর এক গ্রামবাসী সুখেনের সাথে এই দোকানের ভিতরে দেখা। বালি তোলা বন্ধ, তাই এখন তিনি নদীতে মাছ ধরেন। যদিও এখন নদীতে আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না বলে জানালেন তিনি।

দোকান থেকে বেরিয়ে মাঠে গিয়ে দেখা গেল, একদল ছেলেমেয়ে খেলা বন্ধ করে বসে আছে। তাদের মধ্যেও এই সংকটের ছায়া পড়েছে। গ্রামে প্রায় শ’খানেক পড়ুয়া ছেলেমেয়ে রয়েছে। এদের অনেকেই নতুন শিক্ষাবর্ষে স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। কেউ কেউ কোনও রকমে ভর্তি হলেও বই, খাতা কেনা হয়নি। মাঠের পাশে গাছের তলায় বসে থাকা প্রদীপ ও উদয় এমনই দুরবস্থার কথা শোনায়। তারা আরও জানায়, অনেকেই নৌকা মেরামত করতে নানা আর্থিক সংস্থা ও মহাজনদের থেকে ঋণ নিয়েছিল। এ দিকে বালি তোলা বন্ধ, পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ বন্ধ। এমনই দুরবস্থার মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতোই পাওনাদারদের তাগাদা গ্রামবাসীদের অথৈ জলে ফেলে দিয়েছে। গ্রামেরই এক মুদি দোকানির কথায়, আজ সারা দিনে একশো টাকাও আয় হয়নি।

বালি তোলা কেন বন্ধ করল প্রশাসন? যে কাজের উপর হাজার হাজার মানুষের মরা-বাঁচা নির্ভরশীল, তাকে কি কেবল আইনের ধারায় বিচার করলে চলে? সঙ্গত কারণেই দাবি উঠছে বিকল্প কাজ দাও। না হলে বালি তুলতে দিতে হবে। ঐ অঞ্চলেরই শিক্ষক উত্তম পাল ও গণআন্দোলনের নেতা বাসুদেব কাবড়ি গ্রামবাসীদের নিয়ে সভা করছেন। নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চ গড়ে তুলে তাঁরা বিডিও এবং থানায় ডেপুটেশন দিয়েছেন। রোজগার হারিয়ে শত শত পরিবার প্রবল আর্থিক সঙ্কটে। প্রশাসন শুধু আইনের কথা ভাববে, এদের খাওয়া-পরার কথা ভাববে না?