ফকিরের ঝুলি ভরে দিয়ে এবার নিজেদের ঝুলিও ভরছে ফাটকাবাজরা

‘ফকিরের’ ঝুলি নাকি ভরে গেছে কারা ভরল? সে প্রশ্নের উত্তর পেতে গিয়ে চোখ পড়ছে শেয়ার বাজারের দিকে৷ ভোট মিটতেই হঠাৎ যেন লাফ দিয়েছে শেয়ার বাজারের সূচক৷ সংবাদপত্রের শিরোনামে বারবারই স্থান পাচ্ছে তেজি শেয়ার বাজারের কথা৷ প্রচার হচ্ছে, বিজেপির সরকার প্রতিষ্ঠায় নিশ্চিন্ত বোধ করছেন বড় বড় বিনিয়োগকারীরা৷

শেয়ার বাজারের এই হঠাৎ রকেট গতির উত্থানের পিছনে রহস্য কী? দেখা যাচ্ছে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে ২৪ মে একদিনেই লেনদেন হয়েছে ২ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা৷ এই লেনদেনের বেশিটা হয়েছে মূলত সিকিউরিটি বন্ড, নানা ঋণপত্র , পেনশন ফান্ড ইত্যাদি সুদের ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের হাত ধরে৷ যার পোশাকি নাম হল ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট৷ একই সাথে পরিমাণে কম হলেও দেশীয় বিনিয়োগও হয়েছে একই কারবারে৷ আর তার সাথে আছে পুরনো শেয়ারের দর নিয়ে ফাটকার লেনদেন৷ এর অর্থ একদিনের মধ্যে এত বিশাল লেনদেনের বেশিরভাগটাই হয়েছে এমন কারবারের হাত ধরে, যার কোনও স্থায়িত্ব নেই৷ ‘ফরেন’ কিংবা নিখাদ দেশি যেটাই হোক না কেন, পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট অর্থাৎ টাকাকড়ি ও সুদের কারবারের এই  শেয়ার বেচাকেনা অনেকটা জুয়াখেলার মতো৷ সুদখোর, ফাটকাবাজ পুঁজি মালিকরা সুযোগ বুঝে এই সমস্ত বন্ড ইত্যাদি কিনতে শুরু করে তার দর হঠাৎ বাড়িয়ে দেয়৷ যার আকর্ষণে সাধারণ মানুষও এগুলি কিনতে শুরু করেন৷ অল্প সময়েই তার থেকে বিপুল মুনাফা তুলে নিয়ে ফাটকাবাজরা বিনিয়োগের পাততাড়ি গুটিয়ে উধাও হয়ে যায়৷

সাধারণ ছোট লগ্নিকারী বা সাধারণ মানুষ যাঁরা শেয়ারে বিনিয়োগ করে সঞ্চয়ের আশা করেন, তাঁদের শেয়ার, ফান্ড, বন্ডের কাগজগুলোর তখন ডাস্টবিন ছাড়া অন্য কোনও গতি থাকে না৷ শেয়ার বাজারের এই বিনিয়োগ মানে কোনওভাবেই শিল্প কিংবা ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগ নয়৷ এই লেনদেন যত লক্ষ কোটি টাকাই হোক না কেন, তার সাথে শিল্প চাঙ্গা হওয়া বা ভোগ্যপণ্যের বিক্রি বাড়ার কোনও সম্পর্ক নেই৷ কারণ একই শেয়ারের হাতবদলের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে যে ফাটকার কারবার চলে তাতে বিনিয়োগ হওয়া টাকা কোনও উৎপাদনে ব্যয় হয় না৷

বড় বড় ব্যবসাদার, পুঁজিপতিরা ভোটে বিজেপিকে জেতাতে যে ৯ লক্ষ কোটি টাকা ঢেলেছে তা তারা উসুল করে নেবেই৷ সেই কারণেই নরেন্দ্র মোদিদের জয়ের সংবাদ পেয়েই তারা উল্লসিত৷ তারা কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর একলাফে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়ে ওৎ পেতে বসে থাকে৷ সাধারণ লগ্নিকারীরা এই চড়া দরের আকর্ষণে শেয়ার বিক্রি করতে গেলেই ফাটকবাজরা শেয়ারের দাম তলানিতে নামিয়ে দেয়, কমদামে ভাল শেয়ারগুলি কিনে নিয়ে তারা আবার শিকার ধরার আশায় বসে থাকে৷ এইভাবে শেয়ার বাজারের দর কখনও চাঙ্গা হয় কখনও ঝিমিয়ে পড়ে৷ এর সাথে অর্থনীতির সামগ্রিক ভালমন্দের কোনও সম্পর্ক কখনও ছিল না, আজও নেই৷ ‘ফকির’ নরেন্দ্র মোদিজির দল বিজেপির ঝুলি ভরাতে দেশি–বিদেশি সুদখোর পুঁজি মালিক ও ফাটকাবাজরা টাকা ঢেলেছিল৷ এখন চাঙ্গা শেয়ার বাজারের ফাঁদ পেতে তারা তার বহুগুণ বেশি উশুল করছে৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৪২ সংখ্যা)