প্রধানমন্ত্রী শিল্পপতিদের পাশে দাঁড়াতে ভয় পান না, ভয় পান দেশবাসীর পাশে দাঁড়াতে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর সরকারের গত চার বছরের ইতিহাস একই সঙ্গে কর্পোরেট ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের স্বার্থরক্ষার ইতিহাস৷ বড় বড় শিল্পপতি–পুঁজিপতিদের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা কর ছাড়, দুর্নীতি এবং প্রতারণায় অভিযুক্ত শিল্পপতিদের সঙ্গে ওঠাবসা, তাদের জন্য পুরনো আইনে বদল, নতুন আইন তৈরি, জালিয়াত শিল্পপতিদের বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করা প্রভৃতি এত স্পষ্ট যে, কোনও উপায়েই তাকে আর ঢেকে রাখা যাচ্ছে না৷ দেশজুড়ে জনসাধারণের মধ্যেও– মোদি সরকার শ্রমিক–কৃষক–সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিরোধী– এমন ধারণা ক্রমাগত স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ এই অবস্থায়, নিজের পুঁজিপতি ঘনিষ্ঠতার সাফাই গাইতে মোদি বলেছেন, ‘‘দেশের উন্নতিতে অংশ নেওয়া শিল্পপতিদের পাশে দাঁড়াতে আমি ভয় পাই না৷ কারণ আমার উদ্দেশ্য সৎ৷’’ তাঁর দলের রাজ্য সভা সাংসদ বিজয় মাল্য, ললিত মোদি, নীরব মোদি, মেহুল চোকসিদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা ভেবেই বোধহয় এরপর তিনি বলেছেন, ‘‘যদি তোমার উদ্দেশ্য ভাল ও সৎ হয়, তা হলে যে কারও সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেই পার৷ এতে চরিত্রে কোনও দাগ পড়ে না৷’’ নিজের অবস্থান জোরদার করতে গান্ধীজির উদাহরণ টেনে নিজেকে তাঁর সমকক্ষ দেখাতে চেয়েছেন তিনি৷

দেখা যাক, কোন ‘সৎ উদ্দেশ্য’ থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল বিজেপির দেশের একচেটিয়া শিল্পপতি–পুঁজিপতিদের সাথে এই ঘনিষ্ঠতা গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নজিরবিহীন প্রচার–ঝড়ের কথা প্রায় সকলেরই মনে আছে৷ খবরের কাগজ, টিভি, মোবাইল, সোস্যাল মিডিয়ায় সর্বক্ষণ প্রচার চালিয়ে তারা নরেন্দ্র মোদিকে একজন সুপারম্যান হিসেবে দেশের মানুষের সামনে উপস্থিত করেছিল, যিনি প্রধানমন্ত্রী হলে নিমেষে দেশের মানুষের সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন৷ মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে না, বেকারি থাকবে না, কল–কারখানার বন্যা বয়ে যাবে, ভারত বিশ্বে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভূত হবে৷ আর এই ঝড় তুলতে বিজেপি খরচ করেছে লক্ষ কোটি টাকা৷ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, এই বেপরোয়া খরচের টাকা কোথা থেকে এল? এই টাকা তো দেশের জনগণ দেয়নি বা বিজেপি দলের খরচের জন্য জনগণের উপর নির্ভর করে না৷ তা হলে কোথা থেকে এল এত টাকা? অনেকেরই মনে আছে, নির্বাচনী প্রচারে মোদি গুজরাট মডেলের কথা তুলে ধরেছিলেন৷ স্বপ্নের পোলাওয়ে এত ঘি ঢেলেছিলেন যে, ভোটারদের অনেকেই ভেবেছিলেন, গুজরাটে নরেন্দ্র মোদিরা বোধহয় স্বর্গ গড়ে তুলেছেন৷ বাস্তবে গুজরাটে তাঁরা কী করেছিলেন? স্বর্গই গড়ে তুলেছিলেন৷ তবে তা কোটি কোটি গুজরাটবাসীর জন্য নয়, হাতে গোনা কয়েক জন শিল্পপতির জন্য৷ কোনও রকম নিয়ম–নীতি আইন–কানুনের তোয়াক্কা না করে পুঁজিপতিদের অবাধ লুঠপাটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদির মুখ্যমন্ত্রীত্বে গুজরাটের বিজেপি সরকার৷ তাই দেখা গেছে নাম না জানা শিল্পপতি গৌতম আদানি মোদির রাজত্বেই উল্কাগতিতে উঠে এসে দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিতে পরিণত হয়েছেন৷ বন্দর বিদ্যুৎ কয়লাখনি প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে এই আদানিই এখন দেশের বৃহত্তম পুঁজিপতি৷ একই রকম ভাবে অবাধ লুঠতরাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে আম্বানিদের জন্য, অন্যান্য আরও বহু শিল্পগোষ্ঠীর জন্য৷ মোদির রাজত্বে ফুলে–ফেঁপে ওঠা এই শিল্পপতি–পুঁজিপতিরাই ছিলেন গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বেপরোয়া খরচের ভাণ্ডার৷ স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রে বিজেপি সরকারে বসার পর এই সব একচেটিয়া পুঁজিপতিদের আহ্লাদের সীমা নেই৷ বিজেপি রাজত্ব মানে তো বকলমে তাদেরই রাজত্ব৷

একদিকে শুরু হল পুঁজিপতিদের অবাধ লুঠতরাজ, অন্য দিকে সেই কাজে বিজেপি সরকারের নির্লজ্জ মদত৷ বিজেপি সরকারে বসার আগে ব্যাঙ্কগুলিতে পুঁজিপতিদের শোধ না করা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকা৷ মোদি রাজত্বে তা বেড়ে দাঁড়াল ১২ লক্ষ কোটি টাকা৷ ব্যাঙ্কের টাকা মানে যেন পুঁজিপতিদেরই টাকা, তা শোধ করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না৷ অথচ এই টাকা দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের তিল তিল করে সঞ্চয় করা টাকা৷ বিজেপি সরকার সেই টাকা পুঁজিপতিদের দেদার বিলিয়ে দিচ্ছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাঙ্কগুলির ভাণ্ডারে টান পড়ছে৷ তখনই সরকার রাজকোষ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্কগুলিকে মিটিয়ে দিচ্ছে৷ রাজকোষের এই টাকাও জনগণের থেকে সংগৃহীত করের টাকা৷ পুঁজিপতিদের প্রতি এমন নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব দেখালেও কৃষকদের সম্পর্কে বিজেপি সরকারের আচরণ কিন্তু ভয়ঙ্কর কঠোর৷ কয়েক হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করার পর ফসলের দাম না পেয়ে সেই টাকা শোধ করতে দেরি হলে কিংবা শোধ করতে না পারলে পুলিশ ঋণগ্রস্ত চাষিকে হাতকড়া পরিয়ে জেলে ঢোকায়৷ অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেওয়া কোনও শিল্পপতি–পুঁজিপতিকে আজ পর্যন্ত সরকার গ্রেপ্তার করেনি৷ গত কুড়ি বছরে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কৃষক ঋণ শোধ করতে না পারার গ্লানিতে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে– যে গ্লানি কোনও পুঁজিপতির মধ্যে দেখা যায়নি৷

ঋণখেলাপি এই পুঁজিপতিরা সবাই প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপি সরকারের নেতা–মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ৷ সরকারি ব্যাঙ্কের ৯ হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া শিল্পপতি বিজয় মাল্য শুধু বিজেপি ঘনিষ্ঠ নয়, তিনি ছিলেন রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ৷ তাঁর বিদেশে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা যে বিজেপি মন্ত্রীরাই করে দিয়েছিলেন, সংবাদমাধ্যমেও তার বিবরণ উঠে এসেছিল৷ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্কঋণ লোপাটের সর্বাধুনিক নায়ক নীরব মোদি এবং তাঁর মামা মেহুল চোকসি তো প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ৷ নীরব মোদি যেমন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সঙ্গী, তেমনই মেহুলকে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘হামারে মেহুলভাই’ বলে সম্বোধন করছেন দেখা গেছে৷ বিজেপি সরকার এবং তাদের নির্দেশে সেবি ইত্যাদি কেন্দ্রীয় সংস্থা সার্টিফিকেট দিয়ে মেহুল চোকসিকে অ্যান্টিগুয়ার পাসপোর্ট পেতে সাহায্য করেছে৷ আর্থিক কেলেঙ্কারির আর এক কুখ্যাত ব্যক্তি ললিত মোদির সাথে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়রাজে সিন্ধিয়া অন্য তাবড় বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠতা এবং তাঁকেও বিদেশে পালিয়ে যেতে তাঁদের সাহায্যের কথা সবই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ আম্বানিদের উত্থানের ইতিহাসই তো সরকারি নেতা–মন্ত্রী–আমলাদের যোগসাজশে সরকারি তথা জনগণের সম্পত্তি লোপাটের ইতিহাস৷ দীর্ঘ কংগ্রেস রাজত্বে তাদের বাড়বাড়ন্ত হলেও বিজেপি রাজত্বে যেন গোটা দেশটাই তাদের মালিকানায় এসে গেছে৷

ইউপিএ সরকারের নির্দেশে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি ভারতের কালো অর্থনীতি বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছিল৷ ২০১৩ সালে সরকারের হাতে তা জমা পড়ে৷ কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, কংগ্রেস কিংবা বিজেপি কেউই সেই রিপোর্টটি সংসদে পেশ করেনি৷ একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্র রিপোর্টটির ভিতরের খবর প্রকাশ করে বলে, তাতে রয়েছে, ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন যত, দেশের কালো টাকার পরিমাণ তার চার ভাগের তিন ভাগ৷ অর্থাৎ প্রায় পুরোপুরি একটি সমান্তরাল অর্থনীতি চলছে কালো টাকার৷ প্রধানমন্ত্রী ১০০ দিনের মধ্যে কালো টাকা উদ্ধারের গল্প শুনিয়েছিলেন দেশবাসীকে৷ বলেছিলেন, নোটবাতিলের উদ্দেশ্য কালো টাকা উদ্ধার৷ বাস্তবে কালো টাকার মালিকদের টিকি ছোঁয়ারও চেষ্টা করেনি বিজেপি সরকার৷ কেন করেনি?

ঋণ মকুবের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর গুলি চালিয়ে মধ্যপ্রদেশে বিজেপিরই সরকার ছ’জন কৃষককে হত্যা করলেও, জনগণের উপর ক্রমাগত নতুন নতুন করের বোঝা চাপালেও কর্পোরেট পুঁজিপতিদের প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকা কর ছাড় দিয়েছে বিজেপি সরকার৷ কর্পোরেট কর ৩০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনে পুঁজিপতিদের প্রতি তাঁর আনুগত্যের প্রমাণ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি৷ একই সাথে শ্রম আইন সংস্কারের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের উপর শোষণের স্টিম রোলার চালানোর অবাধ ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার৷ এর মধ্যে অবাধে ছাঁটাই, স্থায়ী কর্মীর বদলে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ, অবসরকালীন কোনও প্রাপ্য না দেওয়া, বহু সংগ্রামের ফসল আট ঘন্টা কাজের অধিকারকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া, সবই রয়েছে৷ সাধারণ ভাবেই মালিকের মুনাফার মূলে রয়েছে শ্রমিককে শোষণ তথা বঞ্চনা, সেই শোষণই নতুন আইনে আরও তীব্র করা হয়েছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই মালিকরা বিজেপি তথা মোদির এই ভূমিকায় খুশি৷

কংগ্রেস আমল থেকেই শুরু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ৷ অর্থাৎ জনগণের টাকায় গড়ে ওঠা সংস্থাগুলিকে জলের দামে বেসরকারি পুঁজিপতিদের হাতে মুনাফার জন্য তুলে দেওয়া৷ সেটাই বিজেপি রাজত্বে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে৷ এমনকী প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্ষেত্রটিকেও দেশি–বিদেশি পুঁজিপতিদের মুনাফার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ এই তীব্র শ্রমিক শোষণের ফলেই বিশ্বজোড়া মন্দার ঢেউয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠলেও একচেটিয়া পুঁজিপতিদের মুনাফা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷ কী রকম সেই মুনাফা? এ বছর ২৩ জানুয়ারি দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সভায় প্রধানমন্ত্রী যোগ দেওয়ার ঠিক আগে অক্সফ্যাম যে রিপোর্ট পেশ করে তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে ভারতের মোট সম্পদের ৭৩ শতাংশ কুক্ষিগত হয়েছে দেশের ১ শতাংশ পুঁজিপতির হাতে৷ এই ১ শতাংশ ধনকুবেরের সম্পদ শুধু গত এক বছরে বেড়েছে ২০.৯ লক্ষ কোটি টাকা, যা দেশের ২০১৭–’১৮ অর্থবর্ষের মোট বাজেটের সমান৷

গত বছর ফোর্বস সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধনীদের তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছেন তেল–গ্যাস–টেলিকম ক্ষেত্রের ধনকুবের মুকেশ আম্বানি৷ তাঁর সম্পদের পরিমাণ এক বছরে ৬৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৮ বিলিয়ন ডলার (২.৫ লক্ষ কোটি টাকা)৷ ২০১৬ সালে ২৬,০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি এক বছরে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে আজিম প্রেমজির সম্পত্তি হয়েছে ১, ২৪, ৫০০ কোটি টাকার৷ সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধিতে এর পরে ক্রমান্বয়ে রয়েছে হিন্দুজা, মিত্তল, পালানজি, গোদরেজ, শিবনাদার, বিড়লা, দিলীপ সাংভি ও গৌতম আদানি গোষ্ঠী৷ এই ধনকুবেরদের প্রথম ১০০ জনের সম্পদ বেড়েছে ২৬ শতাংশ হারে৷ কী অসম্ভব পরিমাণে দেশের সম্পদ লুঠতরাজ চালালে এবং জনগণের উপর কী তীব্রশোষণ চালালে এমন অবিশ্বাস্য হারে সম্পদ বাড়ানো সম্ভব এর মধ্যে কোথায় আম জনতার আচ্ছে দিন, আর কোথায় প্রধানমন্ত্রীর সব কা সাথ সব কা বিকাশ? এর নাম দেশের উন্নতি, যে উন্নতিতে অংশ নেওয়ার জন্য পুঁজিপতিদের সার্টিফিকেট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী!

বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল এ দেশের পুঁজিপতি শ্রেণির রাজনৈতিক ম্যানেজার হিসাবে কাজ করে চলেছে এবং ক্রমাগত আরও দক্ষ ম্যানেজার হওয়াই তাদের লক্ষ্য৷ তারই অঙ্গ হিসাবে পুঁজিপতিদের এই অবাধ লুঠতরাজের সুযোগ করে দিয়েছে বিজেপি সরকার৷ রাষ্ট্রকে একচেটিয়া পুঁজির লেজুড়ে পরিণত করেছে৷ বিনিময়ে পেয়েছে সরকারে থাকার গ্যারান্টি, এমএলএ, এমপি, মন্ত্রী হয়ে জনগণের উপর শোষণ–নিপীড়ন চালানোর সুযোগ৷ একদিকে দেশের কোটি কোটি মানুষ খাদ্যের জন্য হাহাকার করছে, বিনা চিকিৎসায় মরছে, অশিক্ষার অন্ধকারে পড়ে রয়েছে, খোলা আকাশের নিচে জীবন কাটাচ্ছে৷ অন্য দিকে মুষ্টিমেয় ধনকুবেরদের সম্পদের পাহাড় ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে৷ পুঁজিবাদী উন্নয়নের মূল্য চোকাতে কোটি কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে, সম্পদহীন হয়ে শহরের বস্তিতে, নিকাশি খালের ধারে, নর্দমার ধারে, ফুটপাথে অমানুষের জীবনযাপন করছে৷ অপমানিত নারীত্বের হাহাকারে দেশের বাতাস ভারি হয়ে উঠছে৷ অপুষ্টিতে, শিশুমৃত্যুতে দেশ বিশ্বে শীর্ষে৷ ধনকুবেরদের মুনাফার লালসা মেটাতে লক্ষ লক্ষ কৃষক আত্মহত্যা করছে, লকআউট আর ছাঁটাইয়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ভিখারিতে পরিণত হচ্ছে, সপরিবারে আত্মহত্যা করছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি শিল্পপতিদের পাশে দাঁড়াতে ভয় পান না৷ এর দ্বারা তিনি তাঁর জনবিরোধী চরিত্রটিকে স্বীকার করে নিলেন৷ বাস্তবে তিনি জনগণের সাথে প্রতারণা করেছেন৷ মুখে জনগণের স্বার্থরক্ষার কথা, তাদের জীবনে সুদিন আনার কথা বলতে বলতে তাদের সর্বনাশ করছেন, আর পুঁজিপতিদের হয়ে নির্লজ্জ দালালি করছেন৷ তাঁর এই সাহস জনসমর্থনের সাহস নয়, জনগণের ভালবাসার সাহস নয়, পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থরক্ষার পুরস্কার হিসাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পুঁজিপতিদের দেওয়া সাহস৷ এতে বড়াই করার কিছু নেই৷ এ চরম নির্লজ্জতা৷

(৭১ বর্ষ ২ সংখ্যা ১০ আগস্ট, ২০১৮)