Breaking News

পুঁজিপতিদের ঋণ মুছতে দরাজ কৃষকদের ঋণ মকুবে নারাজ বিজেপি সরকার

70 Year 32 Issue 30 March 2018

‘কেন্দ্র কৃষিঋণ মকুব করবে না৷ রাজ্যগুলি তা করতে পারে, কিন্তু তার আর্থিক দায় বইতে হবে তাদেরই৷’ সম্প্রতি কৃষকদের উদ্দেশে কড়া ভাষায় এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷

ঋণভারে জর্জরিত কৃষকরা চরম সংকটগ্রস্ত অবস্থায় কৃষিঋণ মকুবের দাবিতে যখন দেশজোড়া আন্দোলনে সামিল হয়েছে, তখন এমন বক্তব্য বিজেপি সরকারের চূড়ান্ত কৃষক বিরোধী চরিত্রকেই তুলে ধরেছে৷

সাধারণ মানুষের অতিকষ্টে ব্যাঙ্কে জমানো সঞ্চয় থেকে বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোকসির মতো ধনকুবেরদের হাজার হাজার কোটি টাকা লুঠ করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়াকে আটকানোর ক্ষেত্রে বিজেপি নেতা–মন্ত্রীদের এই কড়া মনোভাব আদৌ দেখা যায় না৷ বরং শিল্পপতিদের ঋণ কীভাবে ছেড়ে দেওয়া যায়, সেই কলাকৌশল করতেই তারা তৎপর৷ এই বিজেপি সরকার ঋণখেলাপি বড় বড় শিল্পপতিদের বিশাল পরিমাণ ঋণের ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশি মুছে ফেলছে (রাইট অফ), রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা থেকে৷

২০১২–১৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মুছে ফেলা ঋণের অঙ্ক ছিল ২৭ হাজার ৩২১ কোটি টাকা৷ ২০১৬–১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির খাতা থেকে মুছে ফেলা ঋণের পরিমাণ যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তা সংসদে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে সরকার৷  লোকসভায় এ সংক্রান্ত এক বিলও পেশ করেছে সরকার৷ যদিও তাতে যে পর্বতের মূষিক প্রসব ছাড়া কিছু হবে না, তা আগেই বলে দেওয়া যায়৷ কারণ ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ না করা পুঁজিপতি শিল্পপতিদের এতদিন কোনও শাস্তি যে হয়নি, তা আইনের অভাবের জন্য নয়, তাদের তল্পিবাহক নেতা–মন্ত্রীদের সদিচ্ছার অভাবের জন্য৷ বিলটির প্রয়োগও হবে ১০০ কোটি বা তার উপরে বকেয়া থাকলে৷ ৯৯ কোটি বকেয়া থাকলে তা ধর্তব্য হবে না ঋণখেলাপি শিল্পপতিদের ঋণ পরিশোধে বাধ্য করতে সরকার কতটা আন্তরিক, তা এতেই পরিষ্কার৷

পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যখন বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোকসির মতো ধনকুবেরদের ঋণ মুছতে ব্যস্ত, তখন কৃষকদের ঋণ মকুবে সরকার নারাজ কেন? বিজেপি নেতারা যুক্তি দিয়েছেন, ঋণমকুব করলে কৃষকরা অলস হয়ে যাবে, নিজেদের ঋণ নিজেদের মেটানোই ভালো ইত্যাদি৷ চরম দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে চাষের খরচটুকুও তুলতে পারছেন না, চাষের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে যখন তাঁরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের কি অলস বলে মনে হচ্ছে বিজেপি নেতাদের?

হাজার হাজার কৃষক যে ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে, সে কি তাঁদের অলসতার জন্য আসলে নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে বিজেপি নেতারা এ সমস্ত কুযুক্তি তুলছেন৷

সরকারের এই দায়িত্বহীনতা আর শিল্পপতিদের প্রতি অসীম দায়বদ্ধতার একটাই মানে দাঁড়ায়৷ তা হল এই সরকার আসলে শিল্পপতিদের–ব্যাঙ্ক মালিকদের, শ্রমিক–কৃষক–সাধারণ মানুষের নয়৷