পাল্টা প্রশ্ন করুন, রুখে দিন এনআরসি–সিএএ–এনপিআর

পাল্টা প্রশ্ন করুন, রুখে দিন এনআরসি–সিএএ–এনপিআর

কলকাতা নাগরিক কনভেনশনের আহ্বান

আপনাদের যা খুশি বুঝিয়ে চলেছে সরকার৷ মানুষের উচিত পাল্টা প্রশ্ন করে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া যে মাথা নিচু করে অন্যায় ফরমান মানুষ মেনে নেবে না৷ কলকাতা জেলা এনআরসি–সিএএ বিরোধী নাগরিক কনভেনশনে এ কথা বলে গেলেন কান্নন গোপীনাথন৷ এই তরুণ কিছুদিন আগে মোদি সরকারের কাশ্মীর নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আইএএসের চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন৷

১৪ জানুয়ারি কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এই কনভেনশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক থেকে শুরু করে সমাজের নানা স্তরের মানুষ সমবেত হয়েছিলেন প্রতিবাদের কণ্ঠকে তুলে ধরতে৷ সভার শুরুতেই এনআরসি–সিএএ বিরোধী আন্দোলনে নানা রাজ্যে এনআরসির আতঙ্কে যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন, ডিটেনশন ক্যাম্পে অমানুষিক পরিবেশে থেকে মারা গেছেন এবং আন্দোলনে পুলিশি অত্যাচারে যাঁরা শহিদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়৷ মূলপ্রস্তাব পাঠ করেন অংশুমান রায়৷

কান্নন গোপীনাথন শ্রোতাদের সাথে নানা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এনআরসি–সিএএ–র বিপদের দিক তুলে ধরেন৷

তিনি বলেন, আজ মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে৷ সরকারের শক্তির থেকে জনগণের শক্তি অনেক বড়৷ সেটাই নির্ণায়ক শক্তি৷ তাই এই বিপদের বিরুদ্ধে গ্রামে–গঞ্জে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে৷ তাহলে এই আন্দোলনকে কেউই রুখতে পারবে না৷

মানবাধিকার আন্দোলনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সুজাত ভদ্র বলেন এনআরসি নাগরিক জীবনে কী ভয়ঙ্কর ত্রাস সৃষ্টি করেছে তা আসামের মানুষ জানেন৷ সেই এনআরসির থেকেও সিএএ–র পরিকল্পনা আরও ভয়ঙ্কর৷ বিশিষ্ট আইনজ্ঞ এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় এনআরসির বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন৷ তিনি সারা বাংলা এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটির সভাপতি৷ কনভেনশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, বিজেপি তার গোপন অ্যাজেন্ডা হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণ করার জন্য একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে৷ ৩৭০ ধারা বিলোপ, এনআরসি–সিএএ সবকিছু এই পরিকল্পনারই অংশ৷ এই বিপদকে মোকাবিলা করতে হলে বিষয়টিকে ভাল করে যেমন নিজেদের বুঝতে হবে, তেমনি ব্যাপক প্রচার করে গ্রামে শহরে মানুষকে বোঝাতে হবে৷ তিনি সারা বাংলা এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটি প্রকাশিত বাংলা ও হিন্দি বইটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান৷

বিশিষ্ট কবি এবং শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শেহনাজ নবি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই আন্দোলনে মানুষ এভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে কারণ তারা প্রায় সহ্যের শেষ সীমায় চলে গেছে৷ ৩৭০ ধারা বিলোপ, অযোধ্যা নিয়ে অনৈতিহাসিক রায়েও তেমন প্রতিবাদ হচ্ছে না দেখে সরকার ভেবেছিল যা খুশি তাই করে নেবে৷ কিন্তু তা হতে পারেনি এটা খুবই আনন্দের৷

সারা বাংলা এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটির সম্পাদক সমাজকর্মী গোপাল বিশ্বাস বলেন, এনআরসি–তে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে গরিব মানুষই সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত হবেন৷ ভাল করে এই আইনটিকে বুঝলে দেখা যাবে বিজেপি হিন্দুদের উপকারের নামে আসলে হিন্দু শরণার্থীদের বিপাকে ফেলতে চলেছে৷ পূর্ব পাকিস্তান এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ যাঁরা এত বছর সমস্ত নাগরিক অধিকার ভোগ করছেন,  ভোট দিচ্ছেন, চাকরি–ব্যবসা করছেন, তাঁদের এখন সব অধিকার ছেড়ে নিজেকে শরণার্থী ঘোষণা করে সরকারের মর্জির হাতে নিজেকে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকতে হবে তিনি এই আইন প্রতিরোধের ডাক দেন৷

বক্তারা বলেন, আমাদের সকলকে নতুন করে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে কেন? তাহলে আমাদের ভোটে জিতে যারা মন্ত্রী হয়েছেন, তাঁরা কি অনাগরিকদের ভোটে জিতেছেন? তাহলে তাঁরা পদত্যাগ করুন৷ কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ভূবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়৷ কনভেনশন থেকে বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ ইউ এন সরকারকে সভাপতি এবং অংশুমান রায়কে সম্পাদক করে কলকাতা জেলা এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটি গঠিত হয়৷