পাঠকের মতামত : হারিয়ে গেল দু’হাজার স্কুল

ফেল করলেও পাশ, সামান্য বকাঝকাও বন্ধ, অপরাধ করলেও শাস্তি নয়৷ সরকার ছাত্রদের উপর চাপ কমানোর নামে এ রকম যত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ততই অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের সরকারি বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন৷ কঠোর অনুশীলন বা বিদ্যাভ্যাসের মধ্যেই যে ছাত্রদের শিক্ষার উন্নতি হয় তা অভিভাবকরা বেশ উপলব্ধি করেছেন৷ পাশ–ফেল প্রথা তুলে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার যে অতি সরলীকরণ করা হয়েছে তাতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের শিক্ষার মান তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে৷ ফলে সরকারি  বিদ্যালয়গুলির ছাত্রসংখ্যা হু হু করে কমছে৷ মানুষ বাধ্য হয়ে তার সন্তানকে ভর্তি করছে বেসরকারি স্কুলে৷

শিক্ষা এখন নামমাত্র সর্বজনীন৷ আর পাঁচটা পণ্যের জায়গায় তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ সর্বজনীন সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা তার গুণগতমান ক্রমশ হারাচ্ছে৷ বিদ্যাসাগর শিক্ষার ব্যাপক প্রসার (গণশিক্ষা) চেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু কখনওই তিনি গুণগত মানকে বাদ দিয়ে নামমাত্র শিক্ষার প্রসার চাননি৷ গণশিক্ষার নামে সরকার কৌশলে মানুষকে বাধ্য করছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে ঠেলে দিতে৷ এর ফলে সরকারি উদ্যোগে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা তো দূরের কথা যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সরকারি সাহায্যে চলে আসছে সেগুলিও বন্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে৷ ইতিমধ্যেই কলকাতার মতো শহরে প্রায় দু’হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাত্রাভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ একইভাবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির অবস্থাও ঠিক সেই দিক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ এর ফলে সরকারকে যে নতুন নতুন বিদ্যালয় গড়ে তুলতে হত বা শিক্ষক নিয়োগ করে অর্থ ব্যয় করতে হত তা আর করতে হল না৷ মানুষকে এবার হাজার, লক্ষ টাকা দিয়ে শিক্ষা কিনে নিতে হবে৷

দেশে ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ দেওয়ার রীতিকে সুকৌশলে তুলে দিয়ে ‘অর্থ যার শিক্ষা তার’–এই জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ গুণগত মান বর্জিত নামমাত্র শিক্ষা দিয়ে বিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাকে আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে৷ উচ্চশিক্ষা ক্রমাগত সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ উচ্চ শিক্ষার যে কোনও ডিগ্রি আজ আর লক্ষ টাকার নিচে পাওয়া যায় না৷

এভাবেই শিক্ষার দায়ভার আমাদের দেশের কর্ণধারেরা ধীরে ধীরে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে৷ বেসরকারি মালিকদের হাতে শিক্ষা আজ মহার্ঘ পণ্যে পরিণত হচ্ছে৷ অদূর ভবিষ্যতে সাধারণ বাড়ির সন্তানদের জন্য আর কোনও সরকারি বিদ্যালয় অবশিষ্ট থাকবে না, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা অবাধে ‘সূর্যের কিরণের মতো’ বা ‘বৃষ্টির ধারার মতো’ সমানভাবে শিক্ষা পাবে৷

কিংকর অধিকারী, 

বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ২৩ সংখ্যা)