পাঠকের মতামত : মূর্তি গড়ার টাকায় হাসপাতাল হতে পারত

অবশেষে ভারত শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন করল প্রধানমন্ত্রী মোদিজির হাত ধরে এমনই শোরগোল উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রচারে৷ সর্বোচ্চ মূর্তি তৈরি করে ভারত নাকি আমেরিকা, চীন, জাপানকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে গেছে

গত ৩১ অক্টোবর গুজরাতের রাজপিপলাতে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মূর্তির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিনে এই সুবিশাল মূর্তিটির আনুষ্ঠানিক উন্মোচন করেন তিনি৷ নর্মদা বাঁধের গায়ে মূর্তিটি গড়ে উঠেছে ২০ হাজার বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে৷ আর মূর্তিকে ঘিরে ১২ বর্গ কিলোমিটারের একটি কৃত্রিম হ্রদও তৈরি করা হয়েছে৷ মূর্তিটির উচ্চতা ৫৯৭ ফুট, বেসমেন্ট ৭৯০ ফুট৷ মূর্তি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা৷ সরকারের যুক্তি, উচ্চ মূর্তি নির্মাণে ভারত প্রথম, আর এর জন্য দেশ গর্বিত৷ তাদের আরও যুক্তি এই মূর্তি তদারকিতে অনেকের কর্মসংস্থানও হবে৷ কিন্তু এই টাকায় যদি একটি উন্নত হাসপাতাল করা যেত, যদি একটি উন্নত মানের বিশ্ববিদ্যালয় করা যেত, যেটির নাম না হয় হত প্যাটেলের নামেই, তা হলে তো দুটো দিক দিয়েই ভারত এগিয়ে যেত৷ এতে সাধারণ মানুষের যেমন উপকার হত, তেমনি আরও বেশি সংখ্যক  মানুষ কাজ পেত৷ সাথে সাথে বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপাও হয়ত জুটত৷ উচ্চ মানের গবেষণা ও শিক্ষার জন্য এখনও যখন বিদেশে ছুটতে হয়, সেখানে মূর্তি গড়ার এই উদাহরণ কি ভারতের পক্ষে গৌরবের? স্বাস্থ্যক্ষেত্রে  ভারত জিডিপির মাত্র ১.০২ শতাংশ বরাদ্দ করে, উচিত যেখানে কমপক্ষে ৫ শতাংশ বরাদ্দ করা৷ মূর্তি বানানোর ওই টাকায় ২টি ভাল মানের এইমস প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যেত, ২ টি আই টি আই প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে পারত৷ এতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দুটোতেই ভারতের অবস্থার উন্নতি হত৷

ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, নেপাল, ইরাকের থেকেও নিচে৷ অপুষ্টিতে ভুগছে ভবিষ্যত প্রজন্ম৷ এ দেশে খালি পেটে রোজ রাতে শুতে যাওয়া শিশুদের সংখ্যাটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে৷ বাড়ছে অপুষ্টি৷স্রেফ খেতে না পেয়ে আরও বেশি শুকিয়ে যাওয়া কচি কচি মুখগুলির সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে ৷ অথচ ওই মূর্তির অর্থে পাঁচ হাজারের বেশি শিশুর ভালভাবে সারা জীবনের দায়িত্ব নেওয়া যেত৷ ৭২৫টি গ্রামের উন্নতি করা যেত৷ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে এই  মূর্তি৷ মূর্তিটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’৷ অথচ ওই মূর্তি স্থাপনের জন্য ওই অঞ্চলের প্রায় ৭৫টি আদিবাসী গ্রামকে কোনও স্থায়ী বসবাসের জায়গা না দিয়েই উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ তাদের প্রতিবাদকে দমিয়ে, আটক করে, কারফিউ জারি করে যে মূর্তির উন্মোচন করতে হয় সেটা আর যাই হোক একতার প্রতীক হতে পারে না৷

 

মেহেদি হাসান মোল্লা

গোসাবা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ২১ সংখ্যা)