পাঠকের মতামত : ধর্মান্ধতার শেষ কোথায়?

সীমাহীন অত্যাচারে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতেই দাসপ্রভুদের বিরুদ্ধে সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সবচেয়ে দামি ক্রীতদাস স্পার্টাকাস। তাঁকে হিংস্র সিংহের মুখে ছুঁড়ে ফেলেছিল দাসপ্রভুদের দল। তাঁর জ্যান্ত শরীর খুবলে নিয়েছিল, দেহের চামড়া টেনে তুলেছিল। ঘটনাটা সেদিন খুবই উপভোগ করেছিল ধর্মের ধ্বজাধারী দাসপ্রভুদের দল। স্পার্টাকাসের মৃত্যু হলেও পৃথিবী তাঁকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করে। আর দাসপ্রভুরা ইতিহাসে ধিক্কারের পাত্র।

পোপের কথা অমান্য করে বিজ্ঞানের সাহায্যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে প্রমাণ করায় জিওর্দানো ব্রুনোকে সেদিন পুড়িয়ে হত্যা করেছিলপোপের তল্পিবাহকেরা। একই অপরাধে গ্যালিলিওকে সীসার ঘরে বন্ধ করে অন্ধ করে দিয়ে হত্যা করেছিল সেইসব ধর্মান্ধরা। ধর্মের নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থে কবর থেকে মৃতদেহ তুলে ব্যবচ্ছেদ করায় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল ভক্ত ধর্মান্ধদের থেকে।

এদেশে নারীর সতীত্ব রক্ষার্থে উগ্র হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী বীর পুঙ্গবদের জীবন্ত সতীদাহের মর্মান্তিক ঘটনা সবারই জানা। বিংশ শতাব্দীতে আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে শুধু মাত্র ধর্মের কারণে হিটলার কর্তৃক গ্যাস চেম্বারে লক্ষ লক্ষ ইহুদি নর-নারী-শিশু-বৃদ্ধ নিধনের ভয়ঙ্কর ঘটনা সমগ্র মানবসভ্যতা হত্যারই সামিল। এ দেশে বাল্যবিবাহ রোধ ও বিধবা বিবাহের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরায় উগ্র ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বিদ্যাসাগরকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি। নারী হয়েও চিকিৎসার পেশা গ্রহণ করায় এদেশের প্রথমলেডি ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর উপর নেমে এসেছিল উগ্র ধর্মান্ধদের আক্রমণ।

এখনও উগ্র ধর্মীয় রাজনৈতিক মদতে ঘটে চলেছে দলিত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নরনারীর বিরুদ্ধে বিষোদগার, আক্রমণ ও হত্যা।নির্বিচারে হত্যা করা হল গৌরী লঙ্কেশ, এম এম কালবুর্গী, গোবিন্দ পানসারে প্রমুখ যুক্তিবাদী ব্যাক্তিত্বকে।

উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী আক্রমণ ও হত্যার শেষ কোথায়? আশার কথা, এর মধ্যে একদল মানুষ বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাধারার অনুশীলনে রত। উগ্র ধর্মান্ধতা, ঝাড়ফুঁক, তুকতাক,জ্যোতিষ, আরাধনা, প্রদীপ জ্বালানো, হোম-যজ্ঞ, পূজাপাঠ ইত্যাদি দিয়ে মানব মস্তিস্ককে বাঁধা যাবে না। আজ অস্ত্র তাই বিজ্ঞান, বিজ্ঞানসম্মত দর্শন আর তার পরিপূরক সাহিত্য।

রাজীব সিকদার, ভবানীপুর, কলকাতা