পঞ্চায়েত নির্বাচনে এস ইউ সি আই (সি)–র নীতিনিষ্ঠ সংগ্রামী ভূমিকা এবং অন্য দলগুলির নীতিহীন সুবিধাবাদী চরিত্র উদঘাটিত হয়েছে

এস ইউ সি আই (সি) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি

২৬ মে এস ইউ সি আই (সি) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভায় সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পর্কে পর্যালোচনার পর রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন,

এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দলের ও সরকারের পক্ষে সিপিএম পরিচালিত বিগত সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণকারী পদক্ষেপ ও নীতির এবং বিজেপি’র ধর্মান্ধ ও কর্পোরেট ধনকুবেরদের স্বার্থরক্ষার নীতির বিরুদ্ধে বিপ্লবী শ্রেণীসংগ্রাম ও গণআন্দোলনের শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নির্বাচনী সংগ্রামে অংশ নিয়ে আমাদের দলের শত শত কর্মী আক্রান্ত ও আহত হয়েছে৷ তৃণমূল কংগ্রেস এই নির্বাচনে জনগণের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারকে সম্পূর্ণ পদদলিত করেছে৷ বেপরোয়া সন্ত্রাস চালিয়ে বিডিও–এসডিও দপ্তরে মস্তান বাহিনী মোতায়েন করে রড ও বাঁশপেটা করে নাক–মাথা ফাটিয়ে এবং পাড়ায় পাড়ায় প্রার্থীদের খুনের হুমকি, কোথাও এস ইউ সি আই (সি) পার্টি অফিসে হামলা ও মারধর প্রভৃতি প্রবল সন্ত্রাসের মুখোমুখি হয়েও এস ইউ সি আই (সি) এবার তিন স্তরে ৩৬৭৮টি আসনে প্রার্থী দিতে সমর্থ হয়েছিল৷ উপরোক্ত কারণে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে আমরা ৯৩০২টি আসনে মনোনয়ন জমাই দিতে পারিনি৷ পুলিশ–প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কাছে দফায় দফায় অভিযোগ এবং নিরাপত্তার দাবি জানিয়েও কোনও ফল পাওয়া যায়নি৷ এমনকী ভোটের আগে কমিশনের ওয়েবসাইটে এস ইউ সি আই (সি)–র নামোল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি, নির্দল হিসাবে দেখানো হয়েছে৷ কমিশন এ ক্ষেত্রেও অভিযোগের কোনও গুরুত্বই দেয়নি৷ আশঙ্কা মতো ভোটের দিনও শাসক দল পুলিশ–প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েছে, ভোটারদের লাইন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, অবাধে ছাপ্পা দিয়েছে, বাধা দিতে গেলে লাঠি–গুলি চালাতেও দ্বিধা করেনি৷ এমনকী এতসবের পরেও গণনাকেন্দ্রেও প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় তৃণমূল কংগ্রেস গুন্ডাবাহিনীর দাপট চলেছে অবাধে৷ ভোটের ফলাফলকে তৃণমূলের মর্জিমতো সাজিয়ে বৈধ ভোট বাতিল করার জন্য অন্য প্রতীকে ছাপ লাগিয়ে বাতিল করিয়ে তারপর রিটার্নিং অফিসারকে দিয়ে ঘোষণা করানো হয়েছে৷ প্রতি পর্বেই আমরা প্রশাসন ও কমিশনকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি, তাঁরা কর্ণপাত করেননি৷ এই কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করে এস ইউ সি আই (সি) সমগ্র রাজ্যে গ্রাম সভায় ১০৩টি আসন, সমিতিতে ৭টি আসন পেয়েছে৷ এছাড়াও ৫৩টি আসনে নগণ্য ভোটে পরাস্ত হয়েছে৷ অনেকগুলি গ্রামসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে, দুটি গ্রামসভায় নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা অর্জন করা গেছে৷

শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়, সিপিএম সরকারের আমলে সমস্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও ফলাফলই যেভাবে পুলিশ–প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় দুষ্কৃতীরাই নির্ধারণ করত, আমরা দেখলাম, তৃণমূল কংগ্রেস শাসনে সিপিএম নেতাদের পদাঙ্ক অনুসরণের কোনও পরিবর্তন ঘটল না৷

আমরা এবারের নির্বাচনে সিপিএমের ভূমিকার ক্ষেত্রে আরও বিশেষ কিছু দিক লক্ষ করেছি৷ সিপিএম নেতারা নীতিহীন নির্লজ্জ সুবিধাবাদী ভোটসর্বস্ব নীতি নিয়েছেন৷ সিপিএম সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপিকে প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্ণিত করেছে, অথচ এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সর্বত্র বিজেপি ও সিপিএমের মধ্যে প্রকাশ্য ও গোপন বোঝাপড়া দেখা গেছে৷ যে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাস্ত করার স্লোগান তুলেছে সিপিএম, এমনকী তাদের সঙ্গেও কোথাও কোথাও জোট করতে সিপিএমের দ্বিধা হয়নি৷ যেসব আসনে এস ইউ সি আই (সি)–র জেতার প্রবল সম্ভাবনা ছিল সেখানে বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএম প্রকাশ্য আঁতাত পর্যন্ত করেছে, যা সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে৷ নির্বাচনসর্বস্ব এই পথেই নেতারা তাদের দলের বামপন্থী চরিত্রের অবশেষটুকুও ক্রমান্বয়ে ধ্বংস করে চলেছেন, যা খুবই দুঃখজনক৷ আমরা একথা জানিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদককে চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু আজও পর্যন্ত তার কোনও উত্তর পাইনি৷ এ জিনিস নিশ্চিত ভাবে এ রাজ্যে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধিতেই সাহায্য করছে, যে বিজেপি ধর্মীয় দাঙ্গা বাঁধিয়ে তথাকথিত ‘ভোটব্যাঙ্ক’ তৈরির খেলায় মেতেছে৷ আবার তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাসের রাজনীতিও অত্যন্ত নিন্দনীয়, তা একদিকে যেমন সিপিএম দলের কায়দায় নিজেদের গদি ও পঁজিপতিশ্রেণির স্বার্থে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে মরিয়া হয়েছে, অন্যদিকে রাজ্যে  বিজেপির প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করছে৷

(৭০ বর্ষ ৪১ সংখ্যা ১জুন, ২০১৮)