ধর্ষণের সংজ্ঞা পুলিশ দিতে পারে না

 

সংবাদপত্রে দেখলাম উত্তরপ্রদেশ পুলিশ মনীষা বাল্মীকির মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা পর দাবি করেছে, মেয়েটিকে নাকি ধর্ষণ করাই হয়নি। ডাক্তারি পরীক্ষা ও ফরেন্সিক রিপোর্টে গণধর্ষণ তো নয়ই, ধর্ষণের প্রমাণও মেলেনি।

ইতিমধ্যে অবশ্য রাতের অন্ধকারে গেস্টাপো স্টাইলে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের পুলিশ ওর পরিবারের সদস্যদের আটকে রেখে তাদের অনুপস্থিতিতে মেয়েটির মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলেছে। ভেবেছে, ডাক্তার আর ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞকে ম্যানেজ করে ইচ্ছামতো রিপোর্ট লিখিয়ে গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া যাবে। পরে যাতে ওই রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে কেউ মৃতার পুনরায় পোস্ট মর্টেম করানোর দাবি করতে না পারে, তাই বডিটাই পুড়িয়ে দিয়েছে।

এবার একটু আইনের কথা বলা যাক। ধর্ষণ হয়েছে কি হয়নি, সেটা পুলিশ কি বলতে পারে? আইন বলছে, না পারে না। ডাক্তার কি বলতে পারে? না, ডাক্তারও পারে না। কারণ,

রেপ হল মেডিকো-লিগ্যাল টার্ম। তাই একমাত্র কোর্টই বলতে পারে কোনটা রেপ কোনটা নয়। তা হলে ডাক্তার তাঁর পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে বলবে, মৃতার দেহে কী কী ইনজুরি উনি পেয়েছেন, জেনিটাল অর্গানে ইনজুরি কী আছে, এই সব। কিন্তু রেপ হয়েছে কি হয়নি, সে ব্যাপারে কোনও মতামত দেবার এক্তিয়ার ডাক্তারেরও নেই, পুলিশের তো নেইই। কারণ, রেপ একটা এমন বিষয় যেটা ডাক্তারি দৃষ্টিতে বোঝা যাবে না, এর সাথে আইনের ধারণা জড়িয়ে আছে, যেটা ডাক্তার বা অন্য কোনও আধিকারিকের বিচার্য বিষয় নয়। কোর্ট অবশ্যই ডাক্তারের রিপোর্টকে গুরুত্ব দেবে। ধর্ষণের কতদিন পর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে তা-ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর উপর নির্ভর করে ওই রিপোর্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে কতটুকু সাহায্য করবে। ধর্ষিতা বলে কথিত মহিলার শরীরে অন্যান্য ইনজুরি, যা দেখে বোঝা যাবে মেয়েটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে কি না, নাকি সে স্বেচ্ছায় সহবাস করেছে এবং তার বয়স প্রভৃতি এ রকম আরও বহু বিষয় বিবেচনা করে কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে রেপ হয়েছে কি হয়নি।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মেয়েটির জবানবন্দি। মেয়েটির যদি মৃত্যুকালীন জবানবন্দি থাকে এবং তার মধ্যে যদি অস্পষ্টতা না থাকে তা হলে কোর্ট সব সময়ই সেটাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে, ডাক্তার যাই রিপোর্ট দিয়ে থাকুক।

তা হলে ইউপির পুলিশ তড়িঘড়ি এমন একটা কথা বলল কেন? আসলে এর দ্বারা পুলিশ বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছে বলেই মনে হয়। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন দল কী চাইছে সেটাও বুঝিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত আছে এতে। এটা গণতান্ত্রিক বিচারব্যবস্থার উপর নগ্ন আক্রমণ।

এই কারণেই দেশ জুড়ে লাগাতার প্রবল গণআন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। না হলে বিচারের বাণী কাঁদতেই থাকবে। মনীষার পরিবারের মতো সাধারণ মানুষও বিচার পাবে না কোনও দিনই।

সুব্রত দত্তগুপ্ত, আইনজীবী

জলপাইগুড়ি

(ডিজিটাল গণদাবী-৭৩ বর্ষ ৮ সংখ্যা_৫ অক্টোবর, ২০২০)