ধনকুবেরদের স্বার্থেই ব্যাঙ্ক সংযুক্তি

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ৩০ আগস্ট ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন৷ ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংযুক্তি ঘটিয়ে সংখ্যাটা চারে নামিয়ে আনা হল৷ এর ফলে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মোট সংখ্যা ১৮ থেকে কমে দাঁড়াল ১২–তে৷ মন্দা কবলিত ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং ২০২৪–এ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি’ পূরণ করার লক্ষ্যে সরকার যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, এই সংযুক্তিকরণ তারই অঙ্গ৷ অনাদায়ী ঋণে (এনপিএ) দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাঙ্কগুলিতে সরকার নতুন করে আরও পুঁজি ঢালার কথা ভাবছে, যাতে ব্যাঙ্কপুঁজিকে আরও ভালভাবে কাজে লাগানো যায়৷

এবারই প্রথম নয়, বিজেপি ক্ষমতায় এসেই বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ছোট, অনাদায়ী ঋণের ভারে জর্জরিত দুর্বল ব্যাঙ্কগুলি সংযুক্তিকরণের কর্মসূচি নিতে শুরু করে৷ ২০১৭–য় দেশে ২৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ছিল৷ কিছুদিনের মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে ৫টি সহযোগী ব্যাঙ্ক ও ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ক মিশিয়ে দেওয়া হল৷ একইভাবে ব্যাঙ্ক অব বরোদার সঙ্গে দেনা ব্যাঙ্ককে গত বছর জুড়ে দেওয়া হয়৷ এর পরই দেখা যায় আইডিবিআই ব্যাঙ্কের অধিকাংশ শেয়ার কিনে নেয় এলআইসি৷

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে মিশিয়ে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া সরকার নিয়ে চলেছে, এতে সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ণ এবং আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ এটা স্বাভাবিক৷ ব্যাঙ্ক সংযুক্তির কথা ঘোষণার সাথে সাথেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মী–ফিসার সকলেই৷ ব্যাঙ্ককর্মী ও অফিসারদের ইউনিয়নগুলি বিক্ষোভ–প্রতিবাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে৷ এই সংযুক্তিকরণ আসলে অনাদায়ী ঋণ বা অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যাকে চাপা দেওয়ার কৌশল বলে তাঁরা মন্তব্য করেছেন৷ তাঁদের বক্তব্য, ‘‘অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা বাড়ার দরুন অনেক ব্যাঙ্কই লোকসানে ডুবছে৷ দেউলিয়া আইনের আওতায় ঋণখেলাপি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে,তাদের অনেকে জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনালে (এনবিএলসি) গিয়েওছে, যাতে ওই ঋণ আদায় করা যায়’৷ কিন্তু ট্রাইবুনাল যেসব নির্দেশ দিচ্ছে, তাতে ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণের একটা বড় অংশ ছেড়ে দিতে হচ্ছে (হেয়ারকাট)৷

যখন গোটা দেশে শিল্প ধুঁকছে, নতুন লগ্নি হচ্ছে না, বিদেশি লগ্ণি তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে, কৃষির অবস্থা শোচনীয়, ফসলের দাম নেই, ঋণের দায়ে লক্ষ লক্ষ চাষি আত্মহত্যা করছে, নোট বাতিল ও জিএসটির ধাক্কায় ছোট–বড়–মাঝারি কারখানার নাভিশ্বাস উঠছে, লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, বেকারির হার সর্বোচ্চ, কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি এক শতাংশের কম, কৃষিতে তা ২ শতাংশের কম– এইরকম একটা শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে আসার কথা ঘোষণার ঠিক পূর্বমুহূর্তেই দশটি ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে–  তবে কি মোদি সরকারের অর্থনীতি অর্থাৎ মোদিনমিক্সের গভীর সংকট ও অতি করুণ অবস্থা থেকে দেশের মানুষের নজর ঘোরাতেই এই ঘোষণা

এ ছাড়াও, মোদি সরকার যে ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘাড় ধরে ১,৭৬,০৫১ কোটি টাকা আদায় করেছে, তা নিয়েও গভীর আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে৷ অর্থনীতিবিদদের মধ্যে এ সব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে৷ প্রশ্ন উঠছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আয় কি হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে অথবা ভবিষ্যৎ ঝুঁকির জন্য অর্থসংস্থানের প্রয়োজন কি আগের মতো নেই বা তা কমে গিয়েছে? বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বা বড় আকারে ‘নেগেটিভ ট্রেড ব্যালান্স’ বা বিদেশি মুদ্রা ও গোল্ড রিজার্ভ–এ ঘাটতি দেখা দিলে তাকে সামাল দেওয়ার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যে সামর্থ্য সাধারণত থাকার কথা, এর মধ্য দিয়ে তাকেই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপৎকালীন তহবিল থেকে জোর করে নজিরবিহীনভাবে টাকা আদায়ের এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের মোদি সরকারের ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের সঙ্গে যুক্ত–এ সম্ভাবনাও ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷

অর্থমন্ত্রী ব্যাঙ্ক সংযুক্তির প্রশ্নে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ব্যাঙ্কে যাঁদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই৷ ব্যাঙ্কের কাজকর্মে তাঁদের কোনও অসুবিধা হবে না৷ কোনও কর্মীকে ছাঁটাই করা হবে না৷ কিন্তু যে কথাটা তিনি গোপন রেখেছেন, তা হল, পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ফিনান্স (পিএসসিএফ) ২০১৮ সালে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট গতবারের সংযুক্তিকরণের মধ্য দিয়ে বড় ধরনের ছাঁটাইয়ের খাঁড়া নেমে এসেছিল৷ ইতিমধ্যে সারা দেশে ব্যাঙ্কের মোট শাখার সংখ্যা ২৪ হাজার থেকে ২২ হাজারে নেমে এসেছে৷ শুধু এস বি আইতে ৩ হাজার ৫০০ কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিতে বাধ্য হয়েছেন৷ এ বারেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে হবেই, অর্থাৎ ব্যাঙ্কের শাখা কমবে, হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই হবে– এ কথা হলফ করে বলা যায়৷ ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কগুলিতে স্বল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে কাজ হাসিল করার জন্য কর্মীদের কাজের চাপে যে হিমশিম অবস্থা, এই সংযুক্তিকরণ সেই বোঝা আরও বাড়াবে৷

তবে কর্পোরেট সেক্টরগুলি যথেষ্ট খুশি৷ এই সংযুক্তিকরণ ও তার পাশাপাশি ব্যাঙ্কশিল্পে যে সব সংস্কারের কথা অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তাকে দু’হাত তুলে স্বাগত জানিয়ে বণিকসভা অ্যাসোচেমের সভাপতি বি কে গোয়েঙ্কা বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপে শিল্প তো বেশি ঋণ পাবেই৷ সেই সঙ্গে এই পথে হেঁটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক পরিচালনায় পেশাদারি মনোভাব আনার ব্যবস্থাও করেছেন অর্থমন্ত্রী৷

অর্থমন্ত্রী মহাশয়া সাংবাদিক বৈঠকে প্রথমেই দাবি করেছেন ২০১৭–’১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে এনপিএ মোটামুটিভাবে ৮.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা থেকে কমে ৭.৯০ লক্ষ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে৷ কত সহজে মন্ত্রী মহাশয়া টাকার অঙ্ককে কম করে দেখিয়ে জনগণের সাথে প্রতারণা করলেন ২০১৭–’১৮ আর্থিক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মকুব করে দেওয়ার বিষয়টি তিনি চেপে গেলেন৷ ২০১৪–’১৮ এই চার বছরে ব্যাঙ্কের হিসাবের খাতা খুললে দেখা যাবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সঞ্চিত জনগণের হকের টাকা  থেকে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা ঋণ মকুব করা হয়েছে৷ এই ঋণ মকুবের টাকা লুটেপুটে খেল কারা? নিঃসন্দেহে ধনকুবের গোষ্ঠী, কর্পোরেট সংস্থাগুলি৷

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্ট (২০১৮–’১৯) বলছে, বিভিন্ন ব্যাঙ্কে প্রতরণা–জালিয়াতির ঘটনা বেড়ে চলেছে৷ ফলে ২০১৭–’১৮ আর্থিক বর্ষে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে অনাদায়ী ঋণ৪১ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা থেকে এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৫৪৩ কোটিতে৷ শুধু তাই নয়, প্রতারণা–জালিয়াতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে৷ ৩,৭৬৬ টি ঘটনায় প্রায় ৬৪,৫০৯ কোটি টাকা জালিয়াতি হয়েছে৷ তার আগের বছর ২,৮৫৫ টি ঘটনায় অর্থ নয়–ছয়ের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ২৬০ কোটি  টাকা৷ এই প্রতারণা–জালিয়াতিতে যুক্ত বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোকসির মতো অসৎ ব্যবসায়ীরা কেন্দ্রের মোদি সরকারের মদতে ফুলে–ফেঁপে উঠেছে৷

অনুৎপাদক সম্পদ নয়ছয়ের বাড়–বাড়ন্তে জেরবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ আর তা থেকে বেরিয়ে আসতে এই সংযুক্তিকরণ৷ এর ফল দাঁড়াচ্ছে মারাত্মক৷ ফুটো কলসিতে জল ঢালার মতো এ প্রয়াস৷

আর একটি উল্লেখ্য বিষয় হল, সংযুক্তিকরণের পরেও আশঙ্কা পিছু ছাড়ছে না মানুষের৷ বিশেষ করে উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে আমানতকারীদের মধ্যে৷ ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷ সাধারণ মানুষ তাঁদের কষ্টার্জিত আয়ের থেকে কিছু বাঁচিয়ে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখেন৷ বিপদে–আপদে–প্রয়োজ ভরসা এই সঞ্চয়৷ নিম্নবিত্ত–মধ্যবিত্ত্ অবসরকালীন শেষ ভরসা এই সঞ্চয়টুকু৷ সেখানেও শেষপর্যন্ত নেমে আসতে পারে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ৷ আমানতকারীদের গচ্ছিত টাকা বা সঞ্চয় ব্যাঙ্কে কতটা নিরাপদ, এই নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে৷ যাই ঘটুক, রুগ্ন হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে শেষপর্যন্ত দায় থাকে সরকারের৷ এখনও পর্যন্ত এটাই চালু আছে৷ এই ভরসায় মানুষ ব্যাঙ্কে টাকা রাখে৷ সারা বিশ্বে এর পোশাকি নাম ‘বেল আউট’৷

কিছু সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, সংসদে এই শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরককার আনতে চলেছে ফিনান্সিয়াল রেজোলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনসিওরেন্স (এফআরডিআই) বিল৷ সেই বিলে ৫২ নম্বর ধারায় থাকছে অভূতপূর্ব বিধান৷ তার নাম বেল–ইন৷ বেল–ইন–এ বলা হচ্ছে বাইরের টাকায় ব্যাঙ্কের পুনর্জীবন আর নয়৷ অর্থাৎ সরকারি মদত বন্ধ৷ নিজের টাকাতেই বা কোমরের জোরে ব্যাঙ্ককে উঠে দাঁড়াতে হবে৷ ব্যাঙ্ক দুর্বল হলে ক্ষতিপূরণের জন্য আমানতকারীর টাকাই ব্যয়িত হবে৷ এমনকী আমাতকারীদের গচ্ছিত টাকা অস্বীকারও করতে পারে ব্যাঙ্ক৷ সেভিংস, কারেন্ট, ফিক্সড ডিপোজিটে আমানতের কিছু অংশ আমানতকারীদের ফেরৎ দিয়ে বাকিটা যাবে শেয়ার বাজারে৷ অর্থাৎ সাধারণ মানুষের হকের টাকা তাঁদের হাতে থাকবে না, চলে যাবে শেয়ার বাজারের ফাটকা কারবারে৷

কোনও কারণে রুগ্ন হয়ে পড়া ব্যাঙ্কের দায়ও নেবে না সরকার৷ এই কালা ‘এফআরডিআই’ বিল আইনে পরিণত হলে গঠন করা হবে ‘ফিনান্সিয়াল রেজোলিউশন করপোরেশন’৷ তার আওতায় থাকবে সরকারি–বেসরকারি, সমবায়, নন–ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থা, সরকারের সব রকমের জীবনবিমা, সাধারণ বিমা সংস্থাগুলি৷

প্রশ্ন উঠছে, শিল্পপতিদের হাজার হাজার কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণে রুগ্ন ব্যাঙ্কের বোঝা মানুষ বইবে কেন? অনাদায়ী ঋণের পাহাড় কি ব্যাঙ্কের ব্যর্থতা নয়? ব্যাঙ্ক লাভ করলে আমানতকারীদের ভাঁড়ার শূন্য৷ ব্যাঙ্কের ক্ষতির বোঝা তবে সাধারণ সঞ্চয়ীদের কেন বহন করতে হবে? মানুষকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে সরকারের কি দায় নেই? আমানতকারীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে এই বিলের লক্ষ্য কেন ‘বেল–ইন’ হবে? যদিও ব্যাঙ্কগুলির পুনর্জীবনের উদ্দেশ্যে এই বিল আনছে বলে দাবি কেন্দ্রের৷ আমানতকারীর টাকা সুরক্ষিত থাকবে বলে আশ্বাস সরকারের৷ কিন্তু সরকার যাই বলুক না কেন, মানুষ তাঁর সহজ বুদ্ধিতে বিলটির মর্মবস্তু বুঝে ফেলেছেন৷ এই বিলে নিহিত ‘বেল–ইন’ এক সর্বনাশের বিধান হয়ে আসছে বলে অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরাও দৃঢ়ভাবে মনে করছেন৷

স্বাধীনতার পর ‘দেশ গড়ার’ স্লোগান তুলে জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত বড় ও মাঝারি সংস্থা ও শিল্প–কলকারখানা গড়ে উঠেছিল৷ আজ সেসব জলের দরে কর্পোরেটদের কাছে বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যার পোশাকি নাম বিলগ্নিকরণ৷ এর শুরু হয়েছিল কংগ্রেস আমলেই৷ বাজার অর্থনীতির গতি আনতেই নাকি এসব খুব জরুরি হয়ে পড়েছে৷ এখন বাকি রয়েছে পিএসবি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে এই পথে সামিল করা৷

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চাই ‘বড় পুঁজির বড় ব্যাঙ্ক’৷ অথচ আজ গোটা অর্থনৈতিক দুনিয়ায় ‘বড় ব্যাঙ্কের মডেল’ প্রায় পরিত্যক্ত৷ কারণ ঘটনা ও অভিজ্ঞতা বলছে, দুর্বল ব্যাঙ্কের দায়ের বোঝা বইতে গিয়ে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে৷ ব্যাঙ্ক সংযুক্তির এই সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে না৷ এতে লাভবান হবে ধনকুবের গোষ্ঠীগুলি৷ অদূর ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ রূপে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণরে লক্ষ্যে আজ সরকারের এই সিদ্ধান্ত৷

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ১০ সংখ্যা)