দেশটাকে কসাইখানা বানাচ্ছে বিজেপি

রাজস্থানে শ্রমিককে নারকীয় হত্যা

মরণ–আর্তনাদ করছেন একজন মানুষ৷ আর তার আততায়ী নির্বিকারভাবে নানা অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে চলেছে, মাঝে মাঝে কাছে দাঁড় করিয়ে রাখা সুক্টার থেকে অস্ত্র পরিবর্তন করে নিচ্ছে অতি ধীরেসুস্থে৷ শেষ পর্যন্ত নিথর দেহটাকে জ্বালিয়ে দিল পেট্রোল ঢেলে৷ সবটাই ঘটছে ভিডিও ক্যামেরার সামনে, তারপর এই ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সোস্যাল মিডিয়াতে৷ মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইসিস)–এর কাজ নয়, বিজেপি শাসিত রাজস্থানের রাজসমুন্দ জেলায় এভাবেই লাভ জেহাদের মিথ্যা অজুহাত তুলে ৭ ডিসেম্বর পুড়িয়ে মারা হয়েছে পশিচমবঙ্গের মালদহ থেকে রাজস্থানে কাজ করতে যাওয়া নির্মাণ শ্রমিক আফরাজুল খানকে৷ তারপরেও কপাল গেরুয়া রঙ দেওয়া ঘাতক শম্ভুলাল রেগর ‘লাভ জিহাদী’ এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে রীতিমতো হুমকি দিয়ে ভিডিও ক্যামেরার সামনে ভাষণ দিয়েছে৷ ধর্মীয় বিদ্বেষ, তীব্র সাম্প্রদায়িক ঘৃণা গোপন করার কোনও চেষ্টাই করেনি৷

শিউরে উঠেছে সারা দেশ৷ কিন্তু অবিচলিত দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷  প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত গুজরাটের ভোটের প্রচারে উগ্র হিন্দুত্ব, অযোধ্যার রাম মন্দিরের জিগির তুলে হিন্দু–মুসলমান ভোটের মেরুকরণ করতে, যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোট পেয়ে বিজেপি গুজরাটের গদি ধরে রাখতে পারে৷ অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কলকাতায় এসে এই নিয়ে প্রশ্ন শুনে সাংবাদিকদের বলে গেছেন, ‘আপনারা রাজনৈতিক প্রশ্ন করবেন না৷’

এই হত্যা নিয়ে বিজেপি শাসিত রাজস্থানেই গত নয় মাসে পাঁচজন মানুষ হিন্দুত্ববাদী আরএসএস বিজেপির বিদ্বেষের রাজনীতির শিকার হয়ে প্রাণ দিয়েছেন৷ প্রথম খুন হয়েছিলেন জাফর খান, গত ১ এপ্রিল আরএসএস অনুপ্রাণিত গো–রক্ষকরা রাজস্থানে পিটিয়ে হত্যা করেছিল হরিয়ানার দুধ ব্যবসায়ী পেহলু খানকে৷ ১০ নভেম্বর সেই আলোয়ারেই গো–রক্ষক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন উমর মহম্মদ, ৮ ডিসেম্বর আলোয়ারের পুলিশ গো–রক্ষকদের অ্যাজেন্ডা কাঁধে তুলে নিয়ে গোরু পাচার করা হচ্ছে এই অভিযোগে তালিম সেখ নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছে৷

শম্ভুলাল রেগর যে তীব্র ঘৃণা এবং নিশ্চিন্ততা নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেই ঘৃণার পরিবেশই এখন দেশের একটা বড় অংশ জুড়ে বিরাজ করছে৷ উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র সহ যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি একক শক্তিতে বা সহযোগীদের হাত ধরে ক্ষমতায় বসেছে সেখানেই সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে বার্তা দেওয়া হয়েছে– দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে হিন্দুত্ববাদীদের বিধান মেনেই তাদের বাঁচতে হবে৷ না হলেই খুন৷ গুজরাটে ২০০২ সালের সংখ্যালঘু নিধন যজ্ঞের কারিগররা সিবিআই ও কেন্দ্র–রাজ্য প্রশাসনের দাক্ষিণ্যে একে একে ক্লিনচিট পেয়ে গেছে৷ বিজেপি সভাপতি সহ প্রভাবশালী বিজেপি নেতারা গুজরাট নিধন যজ্ঞের যে মামলায় অভিযুক্ত তার একজন বিচারকের পর্যন্ত রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে৷

আফরাজুল খানের মর্মান্তিক হত্যা এবং তার লাইভ ভিডিও প্রচারে দল–মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ শিউরে উঠেছেন৷ তাঁরা চিন্তিত, ব্যথিত৷ এই বিদ্বেষের বাতাবরণকে দূর করার জন্য প্রয়োজন মানুষের জীবন–যন্ত্রণা নিয়ে ধর্ম–বর্ণ–সম্প্রদায় নির্বিশেষে খেটে খাওয়া মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন৷

আফরাজুলের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলাটাই আজ মনুষ্যত্বের দাবি৷