দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না (পাঠকের মতামত)

সোশ্যাল মিডিয়ায় লাল সেলাম বা কমরেড বললেযেতে হবে জেলে ৷ ঘরে ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ থাকলেও রেহাই নেই ৷ আপনাকে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা লাগিয়ে  তুলে নিয়ে যাওয়া হবে৷ সম্প্রতি বিজেপি শাসিত আসামে বিট্টু সনোয়াল নামে এক কৃষক নেতাকে এই অভিযোগেই জেলে পুরেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এন আই এ৷ তাঁর বিরুদ্ধে ইড এ পি এ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে৷ আসামেই সি এ এ বিরোধী আন্দোলনে গত ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অখিল গগৈকে৷ পরে তাঁকে এনআইএ–এর হাতে তুলে দেয় পুলিশ৷ গত ২৯ মে এঁদের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট পেশ করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা, সেখানেই অপরাধীদের এমন ‘মারাত্মক’ অপরাধের কথা জানা যায়৷

আসলে বিজেপির শাসনে সরকারের সমালোচনা মানেই দেশদ্রোহিতা৷ এর অসংখ্য উদাহরণ সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে৷ বিনা বিচারে এমন ‘দেশদ্রোহী’দের জেলে আটকে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন৷ এই লকডাডনের মধ্যে, সরকার সারা দেশের জনসাধারণকে  ঘরে থাকতে বলেছে, বলেছে কোনও প্রতিবাদী জমায়েত চলবে না, কিন্তু নিজেদের জনবিরোধী কার্যকলাপ ঢাকতে যে কোনও একটা অজুহাত খাড়া করা চাই৷ তাই কার্ল মার্কসের কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো, যা কোনও নিষিদ্ধ বই নয়, খোলা বাজারে বিক্রি হয়, আমাদের দেশ সহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ঘরে এই বই পাওয়া যাবে, সেই বই ঘরে রাখার অপরাধে জেল হয়, মামলা হয় জামিন অযোগ্য ধারায়৷ এমনকি কমরেড বা লাল সেলাম বলা কোনও অপরাধ নয়৷ কোনও দিক থেকেই যখন কোনও অপরাধ প্রমাণ করার উপায় থাকে না, তখন দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না৷

মনে রাখা দরকার, বিজেপি–আরএসএস নেতারা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহন করেনি, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, ব্রিটিশের দালালি করেছে, তারাই আজ মহান দেশপ্রেমিক সেজেছে৷ তারা দেশপ্রেমের ঠিকা নিয়েছে৷ তাদের অন্যায় অত্যাচারের বিরোধিতা মানেই, সরকারের কোনও কালা কানুনের বিরোধিতা মানেই দেশের বিরোধিতা, এভাবেই তারা প্রচার করে৷ কিন্তু তারা জানে না, এভাবে প্রতিবাদীদের গ্রেপ্তার করা যায়, জেলে পাঠান যায়, কিন্তু প্রতিবাদকে দমন করা যায় না৷ তাই যত গ্রেপ্তার তত বিরোধিতা, যত অন্যায় তত প্রতিবাদ৷

রাজকুমার বসাক

কলকাতা