‘ত্রিভাষা নীতি’ আসলে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র

২৯ জুলাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০’ পাশ হয়েছে। দেশ যখন করোনা অতিমারির ভয়াবহতায় কম্পমান, বেঁচে থাকার রসদ জোগাড়ই মানুষ দিশাহারহ। ঠিক সেই সময় শিক্ষাবিদ-শিক্ষক-গবেষক-ছাত্র-শিক্ষানুরাগী মানুষের কোনও মতামত না নিয়ে একতরফাভাবে শিক্ষানীতি ঘোষণা করে দিয়েছে। যে নীতি দেখে শিক্ষাবিদদের অভিমত এর সাহায্যে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষার যতটুকু সুযোগ ছিল তার বনিয়াদকেই ধ্বংস করা হয়েছে।

শিক্ষানীতিতে শিক্ষাস্বার্থবিরোধী সে পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছে। তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল ভাষা শিক্ষা। ‘মাল্টিলিঙ্গুয়ালিজম অ্যান্ড পাওয়ার অফ ল্যাঙ্গুয়েজ’ নামে শিক্ষানীতির এই অংশে বলা হয়েছে ছোট বয়সেই শিশুরা দ্রুত ভাষা শিক্ষতে পারে। ফলে অন্তত পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এবং সম্ভব হলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের পাশাপাশি আরও দুটি ভাষা শেখানোর কথা বলা হয়েছে। মাতৃভাষা ছাড়া বাকি দুটি ভাষা হবে ভারতীয় ভাষা। এ দেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কোনও উল্লেখ নেই। অর্থাৎ বর্তমান শিক্ষানীতির নিদান ‘ত্রিভাষা’ নীতি।

প্রথমত, বিভিন্ন রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের বিষয়টি দীর্ঘদিন থেকে প্রচলিত ও স্বীকৃত। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা ও পাঠ্য বই উভয়ই রয়েছে। তা হলে, বর্তমান নীতিতে পঞ্চম বা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষার কথা বলে সরকার নতুন কি করল? দ্বিতীয়ত, এটা স্বীকৃত যে উচ্চতম পর্যায় পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকা উচিত। কারণ ভাষা হল ‘চিন্তার বাহন’। যে কোনও মানুষ তার চিন্তা বা ভাবকে সর্বোন্নতরূপে মাতৃভাষাতেই প্রকাশ করতে পারে। ফলে উচ্চতম স্তর পর্যন্ত মাতৃভাষাতে শিক্ষার ব্যবস্থা করার দাবি অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত। তা হলে, কেবলমাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্তই তা অবশ্যিক কেন? তবে কি দেশের সংবিধান স্বীকৃত ২২টি ভাষাকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার নামে আসলে বিভিন্ন মাতৃভাষা শেখা ও চর্চা করার গুরুত্ব ও পরিসরকে সংকুচিত করার উদ্দেশ্যেই এই চক্রান্ত? একই সাথে প্রশ্ন, ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উচ্চবিত্তদের জন্য চালু যখন থাকছে, বাকি স্কুলে মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি শেখানোর কথা স্পষ্ট করে বলা হল না কেন?

বর্তমান নীতিতে ইংরেজি ভাষার গুরুত্বকে লঘু করে দিয়ে শিক্ষার উচ্চতম পর্যায় পর্যন্ত সংস্কৃত ও হিন্দি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দানের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। স্বদেশীয়ানার চ্যাম্পিয়ানরা ইংরেজির বিরুদ্ধে প্রায়শই বিষোদগার করে। অন্যদিকে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ হিন্দিতে কথা বলে এই যুক্তিতে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। বলা হয় হিন্দিই স্বদেশী জাগরণের মাধ্যম, হিন্দিই জুড়বে দেশকে। গত ২০আগস্ট, ‘মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়’-এর এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক খোলাখুলি বললেন– দেশকে জোড়ার মাধ্যম হতে পারে হিন্দি। বললেন–প্রাচীন ভারতের শিক্ষা সম্ভার হাতে পেতে সংস্কৃতের প্রসারেও জোর দেওয়া উচিত। যথার্থই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে এল। দীর্ঘদিন থেকে আরএসএস–বিজেপি শিবির স্বদেশীয়ানার নামে হিন্দি–হিন্দু –হিন্দুস্থানের পক্ষে এবং ভারতীয় সনাতন ঐতিহ্য চর্চার মাধ্যমরূপে সংস্কৃত ভাষা বাধ্যতামূলক করার উদ্দেশ্যে সে প্রচার চালাচ্ছে তা শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে দিলেন। সংস্কৃতের কথায় পরে আসছি।

ইংরেজির গুরুত্ব কি আজকের ভারতীয় সমাজে উপেক্ষা করা সম্ভব? নবজাগরণ তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ইংরেজি ভাষার মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছিল। অচিরেই এই ভাষা ভারতবর্ষের বিরাট অংশের মানুষের ভাব বিনিময় ও যোগাযোগের মাধ্যমরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংল্যান্ডে উৎপত্তি হলেও ইংরেজি ভাষা এদেশে শিকড় তৈরি করেছে। আজ আর ইংরেজিকে বিদেশি ভাষা বলা চলে না। ইংরেজি এদেশে যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে তার জন্য বিদেশি শাসকরা চেয়েছিল ইংরেজি শিক্ষায় রাশ টানতে। আর নবজাগরণের মনীষীরা চেয়েছিলেন ইংরেজি শিক্ষার প্রসার হোক। এই ইংরেজিই জাতীয়তাবাদকে জাগাতে সাহায্য করেছে। প্রাদেশিকতার গণ্ডি ভেঙেছে। আজ ভারতের বহু জনগোষ্ঠী রোমান হরফ ব্যবহার করেই মাতৃভাষার চর্চা করে। অন্তত ৬টি রাজ্যের সরকারি ভাষা ইংরেজি।

অন্যদিকে স্বদেশীয়ানার চাম্পিয়ান সাজা ‘হিন্দিপ্রেমী’ আরএসএস ব্রিটিশের দালালি করেছে। আমরা দেখেছি স্বাধীন ভারতে আংরেজি হটাওয়ের স্লোগান তুলেছিল একচেটিয়া পুঁজিপতিদের দল কংগ্রেস। তারা স্বদেশীয়ানার নামে ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-প্রাদেশিকতা নিয়ে বারে বারে ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা বাধিয়েছে। বিজেপিও তাই করেছে। ইংরেজি ভাষা উন্নত চিন্তার বাহন বলেই শাসকরা তার চর্চাকে আটকাতে চেয়েছ। বামপন্থার কথা বলা সিপিএমও মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের কথা বলে প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি তুলে দিয়েছিল। অথচ ধনীর ঘরের দুলালদের জন্য বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় তা চালু রাখা হয়েছিল। উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানদের ইংরেজি শেখার সুব্যবস্থা রেখে নিম্নবিত্ত ঘরের সন্তানদের কাছ থেকে ইংরেজি কেড়ে নিয়ে তাদের মুর্খ করে রাখার চক্রান্ত সেদিন তারা করেছিল। তার বিরুদ্ধে এ রাজ্যে দীর্ঘ ১৯ বছর আন্দোলন হয় এবং প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি ফিরে আসে। আজ বিজেপিও একই দুরভিসন্ধি নিয়ে চলছে।

নবজাগরণের মহান মনীষী রামমোহন রায় এ দেশে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আজীবন লড়াই করেছিলেন। ১৮২৩ সালে যখন ব্রিটিশ সরকার এদেশে বেনারস, মাদ্রাজ ও কলকাতায় তিনটি সংস্কৃত কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন রামমোহন তার তীব্র প্রতিবাদ করে লিখেছিলেন ‘সংস্কৃত শিক্ষা ব্যবস্থা দেশকে অন্ধকারে নিমগ্ন রাখার একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ। যে বৈদিক মতবাদ বিশ্বাস করতে শেখায়, কোনও দৃশ্যমান বস্তুরই অস্তিত্ব নেই, তা যুবকদের সমাজের উন্নত সদস্য হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উপযোগী হবে না। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সরকার হিন্দু পণ্ডিতদের তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যেই ভারতবর্ষে যে সব বিষয় চালু রয়েছে সেগুলি পড়ানোর জন্য সংস্কৃত কলেজ স্থাপন করছে। …ছাত্রছাত্রীরা সেখানে দু’হাজার বছর আগে যা জানা ছিল সেই সব জ্ঞানই শুধু অর্জন করবে।” ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এদেশের নবজাগরণের বলিষ্ঠ প্রতিভূ হিসেবে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার উপর কি অপরিসীম গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা আমরা জানি। তিনি বলেছেন –‘‘…ছাত্ররা যখন দর্শন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে, তার আগে ইংরেজি ভাষায় তারা যে জ্ঞান অর্জন করবে তাতে ইউরোপের আধুনিক দর্শনবিদ্যা পাঠ করারও সুবিধা তাদের হবে। ভারতীয় ও পাশ্চাত্য দুই দর্শনেই সম্যক জ্ঞান থাকলে, এদেশের পণ্ডিতদের পক্ষে আমাদের দর্শনের ভ্রান্তি ও অসারতা কোথায় তা বোঝা সম্ভব হবে।”

গণিত শিক্ষা প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন ‘‘…. আমি শুধু বলতে চাই যে, সংস্কৃতের বদলে ইংরেজির মাধ্যমে গণিত শিক্ষা দেওয়া উচিত। কারণ তাতে ছাত্ররা অর্ধেক সময়ে দ্বিগুণ শিখতে পারবে”। বিবেকানন্দ নিজে হিন্দু ধর্মের প্রবক্তা হয়েও ইংরেজির বিরোধিতা না করে, ইংরেজদের বিরোধিতার কথা বলেছিলেন। তিনি সংস্কৃতের গদাই লস্করি চাল থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে বলেছিলেন। ফলে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়ার অর্থ হল এ দেশে আপামর গরিব মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানদের কাছে উন্নত চিন্তার সংস্পর্শে আসার পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া, যা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। প্রাডীন ভাষা হিসাবে সংস্কৃতের গবেষণা এবং চর্চা এক জিনিস আর তাকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে স্কুল ছাত্রদের ঘাড়ে চাপানো অন্য বিষয়। আধুনিক ভাষাবিদদের মতে বাংলা বা হিন্দি কোনও ভাষাই আজ সংস্কৃত অনুসারী নয়। তাদের ব্যকরণ আজ সংস্কৃতকে ছাড়িয়ে বহুদূর চলে গেছে।

আবার ‘ত্রিভাষা’ নীতিতে হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় ভাষা শেখার নামে। এ হল–আরএসএস–বিজেপির সেই চিন্তা যাকে হাতিয়ার করে তারা হিন্দি-হিন্দু-হিন্দিস্তান গড়ার লক্ষ্য়ে অনড়। তারা মনে করে হিন্দি ভাষার মাধ্যমেই জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে এবং হিন্দি হল এদেশের ভাষা। একটু গভীরে গিয়ে দেখলেই আমরা বুঝতে পারব বিজেপি-আরএসএসের এ হেন চিন্তা যা জাতীয় শিক্ষা নীতির মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন তা সম্পূর্ণরূপে একটি অসার চিন্তা। যার ভবিষ্যৎ ফলাফল হবে অত্যন্ত মারাত্মক। যা তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পরিসরকে আরও প্রসারিত করবে।

একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে মানুষ সেই এলাকার অর্থনীতি ও উৎপাদনে অংশগ্রহণ করার জন্য পরস্পরের মধ্যে যে ভাবের আদান-প্রদানে লিপ্ত হয়। তাকে ভিত্তি করেই একটা ভাষা সৃষ্টি হয়। এবং তা গরিব-ধনী, শাসক-শোষিত, ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত নির্বিশেষে সকলের ভাষা রূপেই গড়ে ওঠে। আবার একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সামন্ততন্ত্র তথা কুটির শিল্প ও চাষবাস ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থাকে ভেঙে বৃহৎ শিল্প গড়ে তোলার আকাঙক্ষা থেকে পুঁজিবাদ বিকশিত হয়। পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত আমোঘ নিয়মই হল জাতীয় বাজার গড়ে তোলা। জাতীয় বাজার গড়ে ওঠার পথে ওই নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের একাধিক ভাষা পরস্পর আদারন-প্রদানে লিপ্ত হয় ও কয়েকটি নির্দিষ্ট ভাষা বিকশিত হয়ে জাতীয় ভাষা বা কোনও একটি নির্দিষ্ট ভাষা বিকশিত হয়ে জাতীয় ভাষা রূপে গড়ে ওঠে। বিশ্ব পুঁজিবাদের ক্ষয়িষুiর স্তরে এ দেশে পুঁজিবাদের বিকাশ অত্যন্ত দুর্বলরূপে এবং আপসের মধ্য দিয়ে ঘটার ফলে একটি জাতীয় ভাষার বিকাশ এখানে সম্ভব হয়নি।

বিপ্লবভীত পুঁজিবাদ জাতীয়ভাষার বিকাশে শুধু অন্তরায়ই হয়েছে তাই নয়, সে এ দেশের ভাষা সমস্যাকে জিইয়ে রাখতে চেয়েছে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। বরং ইংরেজি ভাষা জাতীয়তাবোধের বিকাশে, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে অনেকটা সাহায্য করে গেছে। হিন্দি বা অন্য কোনও ভাষা এই কাজ করতে পারেনি। তা হলে, হিন্দি ভাষার মধ্য দিয়ে দেশকে জোড়ার এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা বিজেপি করছে তা কি সঠিক পথ হরে পারে? না, তা কখনওই যথার্থ বৈজ্ঞানিক পথ হতে পারে না। একটা ভাষাকে জোর করে অন্য ভাষাভাষী মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কখনওই দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়না। বরং বর্তমান মরোণ্মুখ পুঁজিবাদ এই পথে দেশের ঐক্যকে বিনষ্ট করতে সচেষ্ট।

এই চিন্তার ফলশ্রুতি একটি বিশেষ ভাষার আধিপত্য কায়েম করা হবে যা দেশের জাতীয় পুঁজির আঞ্চলিক পুঁজির উপর আধিপত্যবাদ কায়েম করতেই সাহায্য করবে। এ সহজে মানুষ মেনে নেবে না। ফলে ভাষাগত বৈরিতা, আর তা নিয়ে হানাহানি ভাঙবে মানুষের ঐক্য। যার প্রতিফলন বিগত দিনে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। একই সমস্যা আসাম সহ অন্যান্য রাজ্যেও বারবার মাথাচাড়া দিয়েছে।

বুঝতে হবে, বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের পক্ষে কোনও একটি ভাষাকে জাতীয় ভাষা রূপে বিকশিত করা আজ আর সম্ভব নয়। এই কাজ করতে পারে একমাত্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যে ব্যবস্থায় বিভিন্ন ভাষাকে বিকশিত করার পথেই একটি জাতীয় ভাষা গড়ে তোলার সঠিক বিজ্ঞানসম্মত পথ অনুসৃত হয়,। ফলে ‘ত্রিভাষা’ নীতির দ্বারা হিন্দি বা সংস্কৃকে চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান ব্যবস্থায় মাতৃভাষা এবং ইংরেজি–এই দুই ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম রূপে বিবেচিত করাই সঠিক পন্থা হওয়া উচিত। অন্য যে কোনও পরিকল্পনায় আসলে পুঁজিবাদের স্বার্থে মানুষের ঐক্যকে বিনষ্ট করা এবং নতুন করে আধিপত্যবাদ কায়েম হওয়ার পন্থা। কেন্দ্রীয় সরকারের এই ঘৃণ্য পরিকল্পনাকে প্রতিহত করতে আমাদের সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

(ডিজিটাল গণদাবী-৭৩ বর্ষ ৬ সংখ্যা_২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০)