ডেউচা-পাঁচামিঃ আগেই চাই ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন

বীরভূমের ডেউচা-পাঁচামিতে কয়লা খনির কাজ শুরুর আগে ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসন সহ ৬ দফা সুনির্দিষ্ট দাবিতে ২৯ নভেম্বর এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর পক্ষ থেকে জেলাশাসককে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। জেলা সম্পাদক মদন ঘটকের নেতৃত্বে ৪ জনের প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের সাথে আলোচনায় অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে পুনর্বাসনের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। কমরেড ঘটক জেলাশাসককে বলেন, জোর করে অধিগ্রহণ হলে এলাকাবাসী তা মেনে নেবে না।

ডেউচা-পাঁচামি এলাকায় প্রায় ১২০০ ফুট নিচে উৎকৃষ্ট কয়লা এবং তার উপরের অংশে উন্নতমানের ব্যাসল্টের সন্ধান অনেক দিন আগেই পাওয়া গেছে। এই বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ উত্তোলন করার কথা সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। এর ফলে যুগপৎ আশা এবং আকাঙক্ষা তৈরি হয়েছে। একদিকে যেমন এলাকার উন্নয়ন, মানুষের কাজ পাওয়ার বিষয়টি রয়েছে, অন্যদিকে ওই এলাকায় যাদের ঘরবাড়ি, চাষবাস এবং পাথর খাদানে যে হাজার হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে উচ্ছেদের প্রবল আশঙ্কা। আশঙ্কা এই কারণে যে, সর্বস্ব হারিয়ে আগামী দিনে কীভাবে বাঁচবেন। কেন না, তিক্ত অভিজ্ঞতায় তাঁরা জানেন, সরকারি প্রচার এবং বাস্তবের মধ্যে যেমন বিরাট পার্থক্য থাকে তেমনই থাকে দলবাজি, স্বজনপোষণ আর ভয়াবহ দুর্নীতি।

জানা গেছে, এই এলাকায় ৩৪০০ একর জুড়ে উৎকৃষ্ট মানের কয়লা আছে। এখানে আছে বেশ কয়েকটি গ্রাম, যেখানে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করেন। আছে বন-জঙ্গল এবং শস্যের খেত। যদি খোলামুখ খনি হয়, তবে খননকার্য কতদূর থেকে হবে তা সহজেই বোঝা যায়। ১২০০ ফুট নিচে নামতে গেলে, যে বিপুল পরিমাণ মাটি, পাথর উঠবে তা রাখার জায়গা লাগবে। তারপর প্রয়োজন হবে কয়লা মজুতের জায়গা। আবার কয়লা পরিবহণের জন্য রেল লাইন পাততে হবে। এর জন্য লাগবে অনেক জমি। এখানে যারা কাজ করবেন তাদের আবাসনের জন্য জায়গার প্রয়োজন হবে। স্বাভাবিক ভাবেই বিপুল সংখ্যক মানুষ জমি থেকে উচ্ছেদ হবেন। এর সাথে যে পরিমাণ ধূলো ও কয়লার গুঁড়ো বেরোবে তা অদূর ভবিষ্যতে আশেপাশের ফসলি জমিকে বন্ধ্যা করে দেবে। আর পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের বিপদ তো আছেই।

ফলে একদিকে জীবন-জীবিকা থেকে উচ্ছেদের আতঙ্ক, অন্যদিকে উন্নয়নের সম্ভাবনার এই প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন সমগ্র পরিকল্পনাটি নিয়ে এলাকার মানুষ, পরিবেশবিদ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, খনি বিশেষজ্ঞ সকলের মিলিত মতামতের ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়া। কিন্তু তা না করে প্রশাসনিক স্তরে সিদ্ধান্ত নিয়ে আর নামমাত্র কিছু পুনর্বাসনের প্যাকেজ ঘোষণা করেই এলাকাবাসীদের উচ্ছেদ করলে প্রতিরোধ হবেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে এস ইউ সি আই (সি) সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি জানাচ্ছে। দাবিগুলি হলঃ ১) খোলামুখ খনির পরিবর্তে আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং-এর সাহায্যে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। ২) খনির কাজ শুরু করার পূর্বেই এই প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে সকলকে পুনর্বাসন ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৩) প্রতি পরিবারে অন্তত একজনকে স্থায়ী চাকরি দিতে হবে। ৪) কয়লা ব্লক কোনও উপায়েই বেসরকারি মালিকের হাতে দেওয়া চলবে না। ৫) বনসৃজন এবং পরিবেশ রক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। ৬) খনি এলাকায় কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

কমরেড মদন ঘটক এলাকাবাসীকে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের দৃষ্টান্ত স্মরণ করে জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এলাকাবাসীদের এই চরম অনিশ্চয়তা ও বিপদের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও চিন্তাশীল গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষকেও এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।