জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গ্রেপ্তারির পিছনে

উইকিলিক্স–এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান পল অ্যাসাঞ্জ একজন অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামার৷ তিনি সাহসের সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙঘনের ঘটনা, দুর্নীতি, প্রভৃতির সংবাদ উইকিলিক্স– এর মাধ্যমে প্রকাশ করতেন৷ ২০১০ সালে উইকিলিক্স প্রায় সাডে সাত লক্ষ অত্যন্ত সংবেদনশীল সামরিক ও কূটনৈতিক তথ্য প্রকাশ করে৷ এর মধ্যে ছিল ২০০৭ সালে বাগদাদে আমেরিকার আকাশ হানার ভিডিও, যা বিশ্বের মানুষের কাছে এই হানার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় আফগানিস্তানে আমেরিকার আক্রমণ সংক্রান্ত বেশ কিছু গোপন তথ্য, আমেরিকার ইরাক আক্রমণ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট, ইউনাইটেড স্টেটস ডিপ্লোমেটিক কেবলস লিক প্রভৃতি৷ কেবলস লিকের পর আমেরিকা সরকার উইকিলিক্স–এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এবং তার সহযোগী দেশগুলিকেও তা করতে বলে৷ সুইডেন অ্যাসাঞ্জ–এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে৷ ২০১২ সালের জুন মাসে তিনি ইকুয়েডরের কাছে কূটনৈতিক আশ্রয় চান এবং ওই বছর আগস্ট মাসে তাঁকে আশ্রয় দেওয়া হয়৷ তিনি লন্ডনের ইকুয়েডর দুতাবাসে থাকতে শুরু করেন৷ কিন্তু ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একের পর এক বিরোধের ফলে গত ১১ এপ্রিল ২০১৯ তাঁর কূটনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করা হয় এবং ওই দিনই অ্যাসাঞ্জকে লন্ডনের ইকুয়েডর দুতাবাস থেকে লন্ডনের পুলিশ গ্রেপ্তার করে৷ এর উদ্দেশ্য, পশ্চিমী দুনিয়া তাদের দমন–পীড়নমূলক, পচনশীল, প্রতিহিংসাপরায়ণ শাসন ব্যবস্থাকে বিশ্বের জনগণের কাছ থেকে আড়াল করতে চাইছে কারণ অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর সহযোগীরা বিভিন্ন দেশের অন্যায় কার্যকলাপ, মানবাধিকার লঙঘন, মানবতার প্রতি অপরাধ প্রভৃতি তুলে ধরে সাম্রাজ্যবাদী–পুঁজিবাদী শোষণ– নিপীড়নের ঘটনাগুলিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে৷ তিনি বিভিন্ন তথ্য ভাণ্ডার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পশ্চিমী দুনিয়া যে সব নৃশংস অপরাধমূলক কাজ বছরের পর বছর করে চলেছে, তা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে এই দেশগুলির ভণ্ডামির মুখোশ খুলে দিচ্ছেন এবং বিশ্বকে পরিবর্তনের প্রয়াস চালাচ্ছেন৷ আফগান জনসাধারণের প্রতি আমেরিকাসহ পশ্চিমী দুনিয়া যে অপরাধ করেছে, আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও মধ্য প্রাচ্যে নয়া উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ মানুষের জীবনে যে দুর্দশা ডেকে আনছে তা অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর সঙ্গীরা তুলে ধরছেন৷ তাঁরা পশ্চিমী দুনিয়ার মানুষের সামনে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরছেন যাতে তারা সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রয়াসী হতে পারে৷ উইকিলিক্স–এর সমালোচকরা চান না যে লক্ষ লক্ষ মানুষের দুর্দশার কথা মানুষ জানতে পারুক যাতে পশ্চিমী দুনিয়া নিরাপদ বোধ করতে পারে৷

প্রদীপ কুমার দত্ত

কলকাতা

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৪২ সংখ্যা)