Breaking News

জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে বিজ্ঞানকে বিকৃত করার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক

জাতীয় শিক্ষানীতিতে ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের নামে বিজ্ঞানকে বিকৃত করার বিরুদ্ধে সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির তরফে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কে পি বসু হলে ৩০ অক্টোবর একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটির সহ উপাচার্য অধ্যাপক নবীন দাস বলেন, প্রশ্ন করার প্রবণতা যদি কমতে থাকে, তবে সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত হয়। প্রশ্নের বদলে, নিরীক্ষার বদলে বিশ্বাসকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে। ফলে প্রকৃত শিক্ষার অপমৃত্যু ঘটছে। বর্তমান শাসকরা ঠিক এই জিনিসটাই করতে চাইছে। জাতীয় শিক্ষানীতির এটাই বিপদ।

ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশানাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার প্রসারের জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলবার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাজেট ক্রমাগত কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু বিজেপি সরকার নয়, কংগ্রেস সরকারও শিক্ষায় এমনভাবেই বাজেট হ্রাস করেছিল। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে তুলে দিয়ে শিক্ষার বেসরকারিকরণ ঠিক নয়। এতে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণি শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থিব বসু বলেন, অপবিজ্ঞানকে নিরন্তর বিজ্ঞান বলে প্রচার চলছে। আরএসএস-এর উদ্যোগে অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবেই এটা ঘটানো হচ্ছে। বৈমানিক শাস্ত্রের মতো নানা অপবিজ্ঞানকে প্রমাণ করবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় সরকার প্রচুর অর্থও যোগান দিচ্ছে। ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’-এর নামে এসব কুসংস্কার ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করেছে।

ভাটনগর পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী এবং আইজার কলকাতার অধ্যাপক ডঃ সৌমিত্র ব্যানার্জী তাঁর আলোচনায় দেখান, ভারতে বিজ্ঞানকে শুধু বিষয় হিসাবে পড়ানো হলেও প্রকৃত বিজ্ঞাননের চর্চা কখনওই কার্যকরীভাবে হয়নি। অনেক বিজ্ঞানের অধ্যাপকও তাবিজ, আংটি ইত্যাদিতে বিশ্বাস করেন। সাধারণভাবে আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাতে এই বিপদটা নিহিত ছিল। তাই জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে অপবিজ্ঞানকে ছড়িয়ে দিতে সুবিধা হচ্ছে। সম্প্রতি গোমূত্র, গোবর ইত্যাদির গবেষণার জন্য ৪৯টি প্রজেক্ট প্রোপোজাল জমা পড়েছে এবং এজন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের নামেই এই অর্থহীন জিনিস চলছে। মানুষের যুক্তিবাদী মননকে মেরে একটা ফ্যাসিবাদী পরিবেশ গড়ে তোলাই এই শিক্ষানীতির আসল উদ্দেশ্য।

সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সভাপতি এবং প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী বলেন, গত দশ বছরে শিক্ষায় বেসরকারিকরণ তীব্রতর হয়েছে। ভয়াবহ বিপদ হচ্ছে বিজ্ঞানের সঙ্গে ইতিহাসেরও বিকৃতি ঘটানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে আর্যরা বাইরে থেকে আসেনি, এদেশেই তারা ছিল। যাঁরা এদেশ থেকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিন্তাকে চ্যালে? করেছিলেন, সেই রামমোহন, বিদ্যাসাগর প্রমুখের নাম এই শিক্ষানীতিতে নেই। যাঁরা এদেশে আধুনিক বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু করিয়েছিলেন, সেই জগদীশ চন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নামও নেই। মধ্যযুগে এদেশে বিজ্ঞানের অগ্রগতি রুদ্ধ হবার কারণ হিসেবে প্রফুল্ল রায় ব্রাহ্মণ্যবাদ ও শঙ্করাচার্যের মায়াবাদকেই দায়ী করে গেছেন। তাই তাঁদের নাম এই শিক্ষানীতিতে নেই। পরবর্তী প্রজন্মকে মেরুদণ্ডহীন, পরনির্ভর করে তোলবার যে অপচেষ্টা, তার বিরুদ্ধে আপসহীন সামাজিক আন্দোলন ছাড়া সেই বিপদকে রোখা যাবে না।

সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর প্রারম্ভিক ভাষণে বলেন, ভারতের শিক্ষানীতির প্রশ্নে আমাদের সংবিধানের ৫২এ (এইচ) ধারায় ফান্ডামেন্টাল ডিউটি হিসাবে বিজ্ঞানমনস্কতা সৃষ্টির যে প্রতিশ্রুতি আছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম চালু করার নামে তাকে ধ্বংস করতে চাইছে। নিউটন, পিথাগোরাস, কোপারনিকাস প্রমুখের আবিষ্কার সবই বেদে ছিল, এমন প্রচার করা হচ্ছে, যা অনৈতিহাসিক ও অবৈজ্ঞানিক।

এসব কথা বলে ছাত্রদের মধ্যে কোন বিজ্ঞানমনস্কতা তাঁরা সৃষ্টি করবেন? এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।