Breaking News

জনস্বার্থরক্ষা আন্দোলনের স্মরণীয় চরিত্র বরুণ বিশ্বাসের আত্মোৎসর্গের এক দশক

এ বছর উত্তর ২৪ পরগণার সুটিয়া এলাকায় নারী নির্যাতন-ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের এক দুঃসাহসী চরিত্র আদর্শ প্রতিবাদী শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের আত্মোৎসর্গের এক দশক। তৎকালীন শাসক সিপিএম আমলে সমাজবিরোধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল সুটিয়া। শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দ্বারা প্রতিদিন কেউ না কেউ ধর্ষিত হতেন। এলাকার মানুষ ছিল ভয়ে নীরব। সেই নীরবতা ভাঙলেন বরুণ বিশ্বাস। তৈরি করলেন ‘সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চ’। শুরু হল দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসক আশ্রিত সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন। সরকার বাধ্য হল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। শুধু নারী সুরক্ষাই নয়, এলাকার গরিব মানুষ এবং দুঃস্থ ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতেন বরুণ। এলাকায় ভেড়ি এবং ইটভাটা নিয়ে মাফিয়াদের কার্যকলাপ রুখতে ও বন্যা প্রতিরোধের দাবিতেও আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। ধর্ষিত মেয়েদের সামাজিক প্রতিষ্ঠা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর উদ্যোগ আজও মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। পাশাপাশি শিক্ষা বাঁচানোর আন্দোলনে ‘সেভ এডুকেশন কমিটি’ এবং জনস্বার্থ রক্ষার আন্দোলনে ‘শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী-বুদ্ধিজীবী মঞ্চে’র সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

২০১২ সালের ৫ জুলাই গোবরডাঙা স্টেশনে ভাড়াটে খুনির হাতে খুন হন বরুণ। তাঁর স্মরণে গড়ে ওঠা ‘বরুণ বিশ্বাস স্মৃতিরক্ষা কমিটি’ ৫ জুলাই মিত্র ইনস্টিটিউশনের সামনে ‘বরুণ স্মরণ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শিক্ষাবিদ ও কমিটির সভানেত্রী অধ্যাপিকা মীরাতুন নাহার, সহসভাপতি ডাঃ বিজ্ঞান বেরা ও শিক্ষক তপন সামন্ত ছাড়াও মিত্র ইনস্টিটিউশনের (মেন) প্রধান শিক্ষক সহ বহু শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবক শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী-বুদ্ধিজীবী মঞ্চ, এআইডিএসও, এআইডিওয়াইও, এআইএমএসএস, নারী নিগ্রহ বিরোধী নাগরিক কমিটি, সেভ এডুকেশন কমিটি ও শোহরত সহ বিভিন্ন পত্রিকাগোষ্ঠী এবং ফোরামগুলির পক্ষে মাল্যদান করা হয়।

বরুণ স্মরণে ৯ জুলাই ভারত সভা হলে রাজ্য কনভেনশনে (ছবি) বক্তারা বরুণ চর্চার প্রয়োজনীয়তা ও জেলায় জেলায় তা ছড়িয়ে দেওয়ার উপর জোর দেন। বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সাংসদ, বরুণ বিশ্বাস স্মৃতিরক্ষা কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা ডাঃ তরুণ মণ্ডল, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও পরিবেশকর্মী সুকুমার পয়রা, বরুণ বিশ্বাসের সহকর্মী মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন শিক্ষক নাট্যকর্মী বিপ্লব নাহা বিশ্বাস, ‘সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের’ সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার, নারী নিগ্রহ বিরোধী কমিটির অধ্যাপক তরুণ দাস, শিল্পী- সাংস্কৃতিক কর্মী-বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী, স্মৃতিরক্ষা কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র প্রমুখ। কনভেনশনে বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীরা সঙ্গীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন।

কনভেনশন থেকে ৭০ জনের একটি রাজ্যস্তরীয় কমিটি গঠিত হয়। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, হুগলী, বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, দুই মেদিনীপুর, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বরুণ বিশ্বাস স্মৃতিরক্ষা কমিটির উদ্যোগে ৫ জুলাই বরুণ বিশ্বাস স্মরণে নানা কর্মসূচি পালিত হয়।

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা ১৫ জুলাই ২০২২