Breaking News

ছিল দুটি স্কুল, হল একটি, আর একটি কোথায় গেল? দুই বন্ধুর কথোপকথন

 

 

– ভাই, আজ একটা জায়গায় যাবি? আমার সেই বন্ধু ফোন করেছিল, ওরা আজ একটা প্রতিবাদ মিছিল করবে।

– প্রতিবাদ? কীসের প্রতিবাদ?

– ওদের গ্রামে একটা সরকারি স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে, তার প্রতিবাদেই ওরা …

– আরে ভাই, ওটা আমি জানি। ওটা মোটেই কেউ বন্ধ করেনি, মার্জ করে দিয়েছে।

– মার্জ করেছে মানে?

– মানে, দুটো স্কুল ছিল তো? দুটোতেই ছেলেপুলে কম হচ্ছিল, তা দুটোকে মিলিয়ে একটা স্কুল করে দিয়েছে।

– দুটো স্কুল ছিল, একটা স্কুল হল। তা হলে আর একটা স্কুল এর কী হল?

– হ্যাঁ মানে সেটা অবশ্য বন্ধই হয়ে গেল, কিন্তু …

– ভাই, এ তো সবে শুরু। খবর শুনিস? খবরের কাগজ পড়িস? রাজ্যে রাজ্যে কত সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খোঁজ রাখিস? সরকার তো রীতিমতো বুক ফুলিয়ে বলছে, সরকারি স্কুলগুলো তুলে দেবে, সরকারি স্কুলে শিক্ষক পদগুলোতে আর নিয়োগই হবে না। গোটা দেশে প্রায় ৫১ হাজার স্কুল উঠে গেছে। এসবের জন্যই তো ওরা পথে নামছে, প্রতিবাদ করছে।

– তোর ওই বন্ধুদের মাথায় গণ্ডগোল আছে। একটা বিষয় ভাল করে কিছু জানলই না, নেমে পড়ল রাস্তায়। কী? না প্রতিবাদ করবে। আচ্ছা, সরকারি স্কুলে যদি লোকজন বাচ্চাদের না-ই পাঠায়, তা হলে কী হবে ওই স্কুলগুলো রেখে? তুই বল তো, তুই নিজের বাচ্চাদের সরকারি স্কুলে পড়তে পাঠাবি?

– বাঃ। দারুণ বললি তো। আমার বাচ্চারা সরকারি বাসে চড়ে না, তা হলে সরকারি বাস তুলে দাও। আমার বাচ্চারা ট্রেনে চড়ে না, ট্রেন তুলে দাও। ওরা যখন সরকারি স্কুলে যায় না, সরকারি স্কুলগুলো সব তুলে দাও। এটা কোনও যুক্তি হল?

– আচ্ছা, তোর কথা ছাড়। তুই আমায় বল, সরকারি স্কুলগুলোয় যারা পড়ায়, তারাই কি নিজের ছেলেমেয়েকে সরকারি স্কুলে পড়তে পাঠায়?

কেন পাঠায় না বল তো? এটা কখনও ভেবে দেখেছিস? পাঠায় না কারণ, সরকারি স্কুলগুলোয় পড়াশুনার কোনও পরিবেশই নেই। ক্লাসরুম নেই, বিল্ডিং নেই, বসার বেঞ্চ নেই, টিচার নেই, পানীয় জল নেই, শৌচালয় নেই বা থাকলেও এমন অবস্থা যে সেখানে ঢুকলেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। গ্রামের দিকের অনেক স্কুলে তো মাথার ওপর ছাদও নেই। সরকারি স্কুলগুলোর তো এই হাল বানিয়ে রাখা হয়েছে, কোন বাবা-মা বাচ্চাদের সেখানে পাঠাতে চাইবে বল তো?

– আচ্ছা মেনে নিলাম, অনেক স্কুলের অবস্থা খারাপ। কিন্তু সব স্কুল তো এ-রকম নয়, অনেক স্কুলে ভাল ব্যবস্থা আছে, শিক্ষকও আছে। …

– দেখবি সেখানে ছাত্ররাও আসে। যে সব সরকারি স্কুলে সত্যিই ভাল ব্যবস্থা আছে, পর্যাপ্ত শিক্ষক আছে, পড়াশুনা হয়, সেখানে লোকে ছেলেমেয়েদের অবশ্যই পাঠায়। আরে বাবা, একটা ভাল স্কুলে কেন ছাত্র আসবে না? সরকারি স্কুলগুলোকে তেমন করে তৈরি করতে হবে তো, যাতে লোকে সন্তানদের সেখানে পাঠাতে চায়?

– তা কর না। সরকারি স্কুলের টিচাররা ঠিক মতো পড়ালেই তো স্কুলগুলোর হাল ফিরে যায়। করতে কে বারণ করেছে?

– ভাই, আমরা তো জঙ্গলে থাকি না, থাকি একটা মানুষের সমাজে। এরকম নিজের মর্জি মতো খেয়ালখুশি মতো সবকিছু চলে জঙ্গলে। বাঘের মনে হল, একটা পশুকে ধরে খেল, মনে হল না খেল না। হরিণ দৌড়ে বাঁচতে পারল তো পারল, না হলে বাঘের পেটে গেল। একটা সমাজে, প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এ জিনিস চলে না। এখানে আইন-কানুন আছে, পুলিশ-প্রশাসন আছে, বিভিন্ন দপ্তর, তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা আছেন। টিচার যাতে ঠিক মতো পড়ান, তা দেখার জন্য হেডস্যার আছেন, হেডস্যারদের কাজ দেখার জন্য এসআই আছে, তার ওপর ডিআই আছে, শিক্ষামন্ত্রী আছেন, মুখ্যমন্ত্রী আছেন। এরকম স্তরে স্তরে প্রত্যেকের মাথার ওপর লোক বসে আছে, কাজ করিয়ে নেওয়া, কাজ যাতে ঠিকমতো হয় সেটা দেখাই তাদের দায়িত্ব। সরকারি স্কুলে যদি পড়াশুনা না হয়, টিচাররা যদি না পড়ায়, সেটা শুধু তাদের ব্যর্থতা নয়, পুরো সিস্টেমের দায়।

– বাঃ, তার মানে তুই বলছিস, কোথায় কোন অজ-পাড়াগাঁয়ের কোন টিচার পড়াচ্ছে না, তার দায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর?

– আলবাৎ। মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এরা কী জন্য আছেন? একজন শিক্ষামন্ত্রী যদি স্কুলগুলোর অবস্থা না জানেন, শিক্ষকরা কেন পড়াচ্ছেন না, কোথায় সমস্যা, বাচ্চারা কেন আসছে না, এগুলো নিয়ে যদি তাঁর মাথাব্যথা না থাকে, তিনি কিসের শিক্ষামন্ত্রী? তাঁকে মন্ত্রী করে লাভটা কী? এই দেখ, তুই বলছিস তো যে, স্কুলে শিক্ষকরা পড়ান না? অথচ এই শিক্ষকরাই কিন্তু হাজার রকমের সরকারি কাজ সারা বছর করেন। মিড ডে মিলের হিসাব লেখা, ভোটের ডিউটি, বাড়ি বাড়ি সার্ভে করে রিপোর্ট তৈরি করা, কন্যাশ্রী-সবুজ সাথী থেকে শুরু করে একগাদা সরকারি প্রকল্পের কাজ। এমনকি গ্রামের দিকে লোকে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করছে কি না এটা দেখতেও সরকারি স্কুলশিক্ষকদের পাঠানো হয়। এই কাজগুলো তারা ঠিকমতো করেন কী করে? করেন কারণ, সরকার তাদের দিয়ে এই কাজগুলো করাতে চায়, এই কাজগুলোই করাতে চায়। তাই এই কাজগুলো হয়েও যায়। না করলে তার জন্য সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। অথচ, শিক্ষকের যা আসল কাজ, সেই পড়ানোর ক্ষেত্রে কোনও জবাবদিহি কোনও নজরদারির বিষয় নেই। কিছু শিক্ষক এর সুযোগও নিচ্ছেন, তাঁরা সত্যিই পড়াচ্ছেন না। তারা জানেন যে, পড়ানো নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা নেই, বরং এতে সরকারেরই সুবিধা। পড়াশুনা না হলে ছাত্ররা এসব স্কুলে আসবে না, আর দুদিন পরে ‘ছাত্র হচ্ছে না’ এই অজুহাতে দিব্যি সরকারি স্কুলগুলোয় তালা ঝোলানো যাবে, ছেলেমেয়েরা সব ভিড় করবে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট স্কুলগুলোয়, যেখানে ভর্তি থেকে শুরু করে পাশ করে বেরোনো অব্দি সবটাই লাখ লাখ টাকার কারবার। শিক্ষকরা পড়ালেই সরকারি শিক্ষার হাল ফিরে যাবে, কেউ ঘুষ না নিলেই দেশে আর দুর্নীতি থাকবে না, সবাই চারপাশ পরিষ্কার রাখলেই পরিবেশ দূষণ কমে যাবে, এগুলো হচ্ছে বোকা বানানো কথা। এরকম নিজে নিজে কিছু হয় না ভাই, করাতে হয়, করিয়ে নিতে হয়। তুই আমি কী করব, কী ভাবব, কী ভাবে চলব– সব কিন্তু ঠিক করে দেয় সিস্টেম, আর সিস্টেম যেটা সত্যিই দরকার মনে করে, সেটা ঠিক করিয়ে নেয়। আসল কথা হল, সরকার নিজেই চায় না যে সরকারি স্কুলগুলোর হাল ফিরুক।

– কেন? এটা করে সরকারের কী লাভ?

– হাসালি ভাই। কী লাভ দেখছিস না? এই যে প্রাইভেট স্কুলগুলো সরকারের নাকের ডগায় বসে যা খুশি তাই ফি নিচ্ছে, এমনকি করোনার সময় যখন দু-বছর স্কুল বন্ধ থাকল, তখনও এরা টাকা নিতে ছাড়েনি। এসব নিয়ে কত বিক্ষোভ হল, অভিভাবকরা আন্দোলন করলেন, সরকার কোনও ব্যবস্থা নিল? লোক দেখানো একটা কমিটি করল, স্কুলগুলোর হেডদের ডেকে মুখ্যমন্ত্রী একবার একটু নরম করে ধমকে দিলেন, ব্যস। কাজের কাজ কিছু হল? বরং, করোনার পরে লোকের যখন সংসার চালানোই দায়, তখন এইসব স্কুলগুলো ফিজ আরও বাড়িয়েছে, এমনকি ফি বাড়া নিয়ে কোনও বিক্ষোভ-আন্দোলন করা যাবে না বলে কলকাতার কয়েকটা স্কুল মুচলেকা লিখিয়ে নিচ্ছে অভিভাবকদের দিয়ে। ভাবতে পারিস? সরকার এতে মদত দিচ্ছে কেন? দিচ্ছে, কারণ সরকার জানে, এসব স্কুলের মাথায় বসে থাকা ব্যবসাদাররা টাকা না ঢাললে, বছর বছর ভোটে জিতে গদিতে বসা হবে না। তাই কি কেন্দ্র, কি রাজ্য সব সরকারই চাইছে শিক্ষার দায়দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে সব ব্যবসায়ীদের বেচে দিতে। পিপিপি মডেল শুনিসনি? সবটাই গট আপ ভাই।

– সে তুই যাই বল, সরকার কিন্তু অনেক মাইনে দেয় টিচারদের। সেখানে প্রাইভেট স্কুলে মাইনে দেখ, বড়জোর কুড়ি পঁচিশ হাজার টাকা। সরকারি টিচাররা এত মাইনে কী জন্য পাবে বল তো?

– হ্যাঁ এই কথাটা এখন খুব ঘুরছে বাজারে, টিচারদের নাকি অনেক মাইনে। আমাদের গরিব দেশে আজ যদি শিক্ষকদের মাইনে কমিয়ে কুড়ি হাজার করে দেয়, দশ হাজারে পড়ানোরও লোক পাওয়া যাবে। দশ হাজার টাকা মাইনে চালু করলে আর একদল বলবে, আমরা পাঁচ হাজারে পড়িয়ে দেব, এভাবে আর কত পিছনের দিকে এগোবি ভাই? প্রাইভেট স্কুলে যে অল্প টাকা দিয়ে শিক্ষকদের এত খাটায়, সেটা তো অন্যায়, অমানবিক। সেটাই কি হওয়ার কথা ছিল? অথচ শিক্ষা যে আমাদের অধিকার, প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষা যে সরকারের দায়িত্ব, এ নিয়ে আমরা ভাবি না। তুই ইতিহাস পড, খবর নে, যেসব দেশ নানা ফিল্ডে সত্যিই উন্নতি করেছে, সেখানে শিক্ষা স্বাস্থে্যর মতো জরুরি বিষয়গুলো হয় অবৈতনিক, নয় তো একেবারে নূ্যনতম খরচে মানুষ শিক্ষার সুযোগ পায়, চিকিৎসা পায়। আমাদের দেশের ইতিহাসই পড়। আমাদের দেশের সব বড় মানুষরা কী বলেছেন? সবার জন্য শিক্ষা চাননি? টাকা দিয়ে কিনতে হলে শিক্ষা কোনও দিন সবার হবে?

– সেই, সেই আবার ফ্রি-তে চাইছিস তো? শিক্ষা ফ্রি, স্বাস্থ্য ফ্রি, যাতায়াত ফ্রি। সব তোদের ফ্রি চাই, সবকিছুতে ভর্তুকি চাই। কেন? সরকার তোকে ফ্রি তে সব দেবে কেন?

– এই হচ্ছে সরকারের আর একটা চালাকি। ফ্রিতে তোকে কে কী দিচ্ছে ভাই? তুই ট্যাক্স দিস না? দিস তো? সব জিনিসে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত জিএসটি দিস। দুধ, দই, জল, ওষুধ, চাল, ডাল, জামাকাপড় কোনও একটা কিছু নেই, যাতে আমরা সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছি না। এমনকি করোনার হাত থেকে বাঁচতে দেশের মানুষ যে ভ্যাক্সিন নিতে বাধ্য হয়েছে, সেখানেও ট্যাক্স নিয়েছে সরকার। তা তোর আমার মতো কোটি কোটি সাধারণ মানুষের থেকে এত ট্যাক্স নিয়ে, সরকার যদি শিক্ষা স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক জিনিসগুলো আমাদের না দিতে পারে, সেই সরকারের দরকারটা কী বল তো? কই, ক্লাবগুলোর পুজোর জন্য কোটি কোটি টাকা দিতে তো সরকারের টাকার অভাব হচ্ছে না?

আর একটা কথা বলি, কিছু মনে করিস না। আমরা আজকাল বড় স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি। আমরা যখন প্রাইভেটাইজেশনের পক্ষে গলা ফাটাই, সরকারি স্কুল উঠে যাওয়া নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না, তখন শুধু নিজেদের কথা ভাবি। আমাদের অনেকের হয়তো আজ দশ বিশ হাজার খরচ করে সন্তানকে বেসরকারি স্কুলে পাঠানোর ক্ষমতা আছে, কিন্তু মনরেগা’র ওই মজুরেরা? তোর আমার বাড়িতে যারা কাজ করেন, সেই পরিচারিকাদের সন্তানরা? অতিমারিতে যে লক্ষ লক্ষ মানুষের চাকরি গেল, তাদের সন্তান? এরা কোথায় পড়বে? নাকি গরিব হয়ে জন্মেছে বলে সরকারি স্কুলের মোটা চালের মিড ডে মিল আর খোলা আকাশের তলায় পাঠশালা স্কুল পর্যন্তই ওদের অধিকার? আর একটা কথা মনে রাখিস, তোর-আমার ছেলে আজ বাদে কাল স্কুলের গণ্ডি পেরোলে আমরা কিন্তু সরকারি কলেজ সরকারি ইউনিভার্সিটিই খুঁজব। কারণ, আজও উচ্চশিক্ষায় এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রির যে মূল্য মর্যাদা আছে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর তা নেই। তাই তখন আমরাও সন্তানের জন্য সরকারি শিক্ষাই খুঁজব, শুধু আজ ইংলিশ মিডিয়ামের গুমোরে সরকারের এই চালটা ধরতে পারছি না।

– ধরতে পেরেই বা কী হবে ভাই? তোর আমার কথা কে শুনবে?

– মজার কথা কী জানিস, আমরা আগেই ভাবি কেউ কিছু শুনবে না, কেউ কিছু করবে না। অথচ দেখ, যারা সরকারের এই অভিসন্ধিটা ধরতে পেরেছে, শুধু ধরতেই পারেনি এই সর্বনাশ আটকাবে বলে পথে নেমেছে, সরকার তাদের মিথ্যে মামলা দিয়ে জেলে আটকে রেখেছে। আমাদের রাজ্যেই এত বড় ঘটনা ঘটল, আমরা ক’জন জানি? ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে তো অন্তত পারি আমরা। পারি না বল?

– রাগ করিস না ভাই, তবে তোর কথা মানলে বলতে হয় আমাদের পুরো ব্যবস্থাটাই খারাপ, গোড়াতেই গলদ।

– একশো বার। সেই গলদ সারাবার ব্যবস্থা না করে, ব্যবস্থাটাকে না পাল্টে সরকারি রেল সরকারি হাসপাতাল সরকারি স্কুল সব বেচে দাও, এটা কী ধরনের যুক্তি ভাই? সরকারটাই বা তা হলে সরকারি থাকে কেন? ওটাকেও বেচে দিলেই হয়।

– তবে যাই বলিস, টিচারদের এই ষাট-সত্তর হাজার টাকা মাইনে কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না। সপ্তাহে ছুটি, সারা বছর এই ছুটি, সেই ছুটি, ছ ঘন্টা স্কুল আর এত মাইনে। আমাদের দেখ, দিনভর খেটে দুটো পয়সা জোগাড় করতে ঘাম ছুটে যায়।

কী হল, হাসছিস যে?

– এখানেই আসল সমস্যা ভাই রে। আমি একটা চোখে দেখতে পাই না, পাশের লোকটার দু’চোখ নষ্ট হয়ে গেলে আমি খুশি হই, আর আমাদের এই দুর্বলতাটা সরকার খুব ভালো চেনে। তাই সরকার কী করে জানিস? আজ মুসলমান, কাল দলিত, পরশু এসসি-এসটি এমন হাজার শত্রু খাড়া করে আমাদের সামনে। দেখাতে চায়, ওদের জন্যই তোর আমার সমস্যা। এই যেমন এখন তুই ভাবছিস, শিক্ষকরা অনেক মাইনে পায়, তাই ওরা তোর শত্রু। আসল শত্রুকে তুই দেখতে পাচ্ছিস না। কাজের কাজ কখন হবে জানিস? যখন এই জাত-ধর্ম পেশা ভুলে আমরা সব মানুষ এক হয়ে দাঁড়াতে পারব, সরকারের দিকে আঙুল তুলে বলতে পারব –আমার পাশের মানুষটার দুটো চোখ তো থাকবেই, আমার নষ্ট চোখটার দায়িত্বও তোমায় নিতে হবে। তখন বুঝব তুমি কেমন সরকার, জনগণের কেমন অভিভাবক। তবে এখানে জনগণেরও একটা ভূমিকা আছে। ওই যে সিকোয়েন্সটা বলেছিলাম– টিচার-হেডস্যার-এসআই-ডিআই-শিক্ষামন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী– এই পিরামিডের চূড়ায় বসতে হবে জনগণকে, যারা দেখভাল করবে সরকারের কাজ। এ বার বুঝলি তো জনগণের ভূমিকা।

(সোসাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত)