চিটফান্ডে কোটি কোটি মানুষ প্রতারিত, কেন্দ্র–রাজ্য কারওরই হেলদোল নেই

 

ফাইল চিত্র

চিটফান্ড নিয়ে কেন্দ্র–রাজ্য তরজা সাম্প্রতিক রাজ্য রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, তিনি দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নিয়ে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করছেন৷ অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বলছেন, নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সিবিআই–কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে৷

এই তরজায় হারিয়ে যাচ্ছে কিছু মৌলিক প্রশ্ন৷প্রশ্ন হল, চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি ঘটতে পারল কী করে? একি গোপনে হয়েছে? সংবাদপত্রে পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন দিয়ে, টিভিতে ধারাবাহিক প্রচার দিয়ে এই প্রতারণার ফাঁদ বছরের পর বছর ধরে চলেছে৷ প্রায় সমস্ত শাসক দলগুলির সাংসদ–বিধায়করা এই সব চিটফান্ডের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত৷ এদের নানা রকম কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে জনগণের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য করতে সাহায্য করেছেন তাঁরা৷ থানা পুলিশ প্রশাসন সকলেরই নজরে এই প্রতারণার ব্যবসা চলেছে৷ এই সব সংস্থায় লগ্নি করলে মোটা অঙ্কের সুদ মিলবে– এই আশা দেখানো হয়েছে৷ এজেন্টদেরও প্রচুর সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ এতসব সুবিধা দেওয়া অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে সম্ভব কি না– এসব বিচার না করে কোটি কোটি সাধারণ মানুষ সংকটগ্রস্ত জীবনে খানিকটা সুরাহার আশায় তাঁদের কষ্টার্জিত উপার্জন এখানে বিনিয়োগ করেছেন৷ ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে৷ আমানতকারীদের টাকা মেরে দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে নানা সংস্থা৷ কিছু দিন তা নিয়ে হৈ চৈ হয়েছে৷ তারপর আবার অন্য নামে প্রতারণার ব্যবসা চলেছে৷ এভাবেই চিটফান্ডের কারবার ঘটে চলেছে৷

আমানতকারীদের ৩০০ কোটি টাকা ফেরানোর দাবি সঠিক নয়

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, সরকার চিটফান্ড আমানতকারীদের ৩০০ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে৷ এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন অল বেঙ্গল চিটফান্ড সাফারার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি রূপম চৌধুরী৷ তিনি বলেন, চিটফান্ড কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর পরই রাজ্য সরকার ৫০০ কোটি টাকা আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল৷ এ জন্য তামাক জাতীয় পণ্যের উপর ট্যাক্স চাপানো হয়েছে, যা আজও চালু আছে৷ সরকার সারদার আমানতকারীদের মাত্র ১৯৬ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে৷ পরে সরকার বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত চলছে এই অজুহাতে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়৷ একই সাথে শ্যামল সেন কমিশনও তুলে দেওয়া হয়৷ ফলে ৩০০ কোটি টাকা ফেরতের দাবি ভিত্তিহীন৷

২৪ এপ্রিল ২০১৩ শহিদ মিনার ময়দানের জনসভায়

সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ

‘‘এই সব চিটফান্ড চালাতে কেন কেন্দ্রীয় সরকার অ্যালাও করল? গরিব মানুষ বাঁচার জন্য বাড়তি অর্থের আশায় একটু বেশি সুদ চায়৷ সরকারি সঞ্চয় প্রকল্পে ক্রমাগত সুদ কমিয়ে সরকার ব্যবসা প্রাইভেটের হাতে তুলে দিয়ে চিট ফান্ডের নামে চিটিং ফান্ড চলতে দিল৷ এভাবে যে টাকা বাড়ানো যায় না, এটা যে ফাটকাবাজি, লোক ঠকানো সর্বনাশ– একথা কি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জানা ছিল না? এরা মিডিয়া ও অন্যান্য সকল উপায়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জনগণকে সতর্ক করেনি কেন?

আমরা মনে করি, লক্ষ লক্ষ মানুষকে এভাবে পথে বসাবার পূর্ণ দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারকে, রাজ্য সরকারকে নিতে হবে৷ ভারতবর্ষের কর্পোরেট সেক্টর, একচেটিয়া পুঁজিপতিদের লোকসান হচ্ছে বলে, এবারকার বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের জন্য সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা অনুদান পাবলিক ফান্ড থেকে দিয়েছে৷ যে কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার উপর ঋণের বোঝা (ডেফিসিট) নিয়ে চলছে, তাদের তো একচেটে পুঁজিপতিদের জন্য সমপরিমাণ টাকা অনুদান দিতে আটকালো না৷ কর্পোরেট সেক্টরের প্রতি তাদের এতই বদান্যতা৷ তা হলে সেই সরকার চিটফান্ডে আমানতকারী সর্বস্বান্ত মানুষদের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা দিতে পারে না দেওয়া তার নৈতিক কর্তব্য নয়?’’

 

এর দায় কার? কেন্দ্রের পূর্বতন কংগ্রেস সরকার, বর্তমান বিজেপি সরকার, রাজ্যের পূর্বতন সিপিএম সরকার, বর্তমানের তৃণমূল সরকার কি এর দায় অস্বীকার করতে পারে?

এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে অতীতের কয়েকটি পাতা উল্টাতে হবে৷ ১৯৮০ সাল থেকে এ রাজ্য সহ দেশের নানান জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কোম্পানি জনগণের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছিল৷ এ রাজ্যে সিপিএম পরিচালিত সরকারের আমলে ভেরোনা, সঞ্চয়িনী, ওভারল্যান্ড প্রভৃতি চিটফান্ড সংস্থা জনসাধারাণের কাছ থেকে টাকা তুলে কিছুদিন পর ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়ে পালিয়েছে৷

কেন চিটফান্ডের দিকে মানুষ বেশি করে ঝুঁকলো? সকলেই জানেন ’৯০–এর দশকে তদানীন্তন কংগ্রেস সরকার পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের নীতি অনুসরণ করে৷ তখনই এ দেশে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প ধীরে ধীরে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়৷ ক্ষুদ্রসঞ্চয়ের স্কিমগুলোর সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হল, সুদ কমানো হল৷ সরকারের পক্ষ থেকে ধীরে ধীরে এই প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়ার ছক কষা হল৷ এরই সাথে সারা দেশ জুড়ে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ও পোস্ট অফিসের পরিষেবা অত্যন্ত দুর্বল ছিল৷ সারা দেশে প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে এমনকী ছোট ছোট গ্রামেও ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ও পোস্ট অফিস ব্যাংঙ্কিই ছিল না বললেই চলে৷ এই সময়টাতেই কেন্দ্রীয় সরকারের আর বি আই, সেবি, আর ও সি–র অনুমোদন নিয়ে সারদা, রোজভ্যালি, অ্যালকেমিস্ট, অমৃত, পিএসিএল, বিশাল গ্রুপ টোগো, এমপিএস সহ আনুমানিক চার শতাধিক চিটফান্ড কোম্পানি রাজ্য সরকারগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে৷

তীব্র বেকারত্বের জ্বালায় কোটি কোটি যুবক–যুবতী জীবিকার সংস্থান না করতে পেরে যখন দিশাহারা, ঠিক তখনই চিটফান্ড কোম্পানিগুলো এদেরকে এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ করে৷ আবার এরা যতটুকু কমিশন পেয়েছিল তাও নিজ নিজ কোম্পানিতে আমানতকারী হিসাবে বিনিয়োগ করে৷

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চিটফান্ড কোম্পানির উৎপাদিত ছোট দু’চাকার মপেড গাড়ির উদ্বোধন করেছেন, সঙ্গী ছিলেন প্রয়াত শিল্পমন্ত্রী নিরুমপম সেন৷ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এমপিএস কোম্পানির মালিক প্রমথনাথ মান্নার মেয়ের বিয়েতে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন৷ চিটফান্ড কোম্পানিগুলোর আকর্ষণীয় সঞ্চয় প্রকল্পের নানা স্কিম সম্পর্কে তাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বলেছেন, এরা বেকারি দূর করছে ও জনগণকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দিয়ে এবং আকর্ষণীয়ভাবে নানা লাভজনক স্কিমের পরিকল্পনার মাধ্যমে জনগণের উপকার করছেন৷ এইসব কথা কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করে টাকা রেখেছেন৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বিষ্ণুপুরে সারদা সিটি গড়ে তোলার জন্য বহু একর জমি থেকে চাষিদের উৎখাত করার ক্ষেত্রে তদানীন্তন তৃণমূল এমএলএ মদন মিত্রের সহযোগী ছিল ওই অঞ্চলের দাপুটে সিপিএম নেতারা৷

সারা দেশের মধ্যে এ রাজ্যেই চিটফান্ডের রমরমা ছিল সবচেয়ে বেশি৷ সারা রাজ্যে কোম্পানিগুলো পঞ্চাশ লক্ষ এজেন্ট নিয়োগ করেছিল৷ জনগণের থেকে বৃহৎ কোম্পানি ছাড়া আরও অসংখ্য ছোট ছোট কোম্পানি চার লক্ষ কোটি টাকা তুলেছে৷ কিছু দিন আগে ত্রিপুরার নির্বাচনে সিপিএম পরাজিত হওয়ার পর তাদের রাজ্য সম্মেলনে সম্পাদকীয় রিপোর্টে স্বীকার করেছে, তাদের নির্বাচনী বিপর্যয়ের নানা কারণের মধ্যে চিটফান্ডও বিপর্যয় ঘটাতে সাহায্য করেছে৷ কারণ ওই রাজ্যে সিপিএমের বহু নেতা ও মন্ত্রীসভার একাধিক সদস্য চিটফান্ড কোম্পানিগুলোকে মদত দিয়েছেন৷ সম্প্রতি সারদার মালিক সুদীপ্ত সেনকে কোর্টে তোলা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি ওই সিপিএম নেতাকে (নাম উল্লেখ করেছেন) বহু সাহায্য করেছি৷ ও এখন চিটফান্ড নিয়ে রাস্তায় নামছে কেন?

চিটফান্ড ও বিজেপি

বিজেপিও তার দায় অস্বীকার করতে পারবে না৷ অটলবিহারী বাজপেয়ী ক্ষমতায় থাকাকালীন চিটফান্ড কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি৷ ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেলেও দেশের কোথাও চিটফান্ড কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেননি এবং আমানতকারীদের টাকা ফেরতেরও কোনও ব্যবস্থা করেননি৷ ২০১৪ সালের ৯ মে সুপ্রিম কোর্ট চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তের ভার সিবিআইকে দেয়৷ কিন্তু সিবিআই তদন্তের বিশেষ কোনও অগ্রগতি হয়নি৷ দোষী ব্যক্তিদের বেশিরভাগকেই ধরা হয়নি৷ আসাম ও উত্তর–পূর্বাঞ্চলে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার একজন প্রধান কাণ্ডারি অতীতে কংগ্রেসের ও বর্তমানে বিজেপির অত্যন্ত ক্ষমতাশালী মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা চিটফান্ডের সঙ্গে জড়িত৷ ইনি উত্তর–পূর্বাঞ্চলের ছোট ছোট রাজ্যে ও ত্রিপুরায় শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিজেপিকে ক্ষমতাসীন করতে সাহায্য করেছেন৷ ইনি প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র৷ এ রাজ্যে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা যার নাম চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িত সেই মুকুল রায় আজ প্রধানমন্ত্রীর পাশে৷ সম্প্রতি ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে বিজেপির নির্বাচনী বিপর্যয়ের বহু কারণের মধ্যে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি অন্যতম কারণ৷ ওখানকার বহু বিজেপি নেতা কেলেঙ্কারিতে যুক্ত৷ সম্প্রতি মোদি সিবিআই তদন্ত নিয়ে তৎপরতার ভান করলেও এর উদ্দেশ্য যে লোকসভা ভোট তা আজ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট৷

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ২০১২ সালের শেষে চিটফান্ড কোম্পানিগুলি এক এক করে বন্ধ হতে শুরু করলে বলেছিলেন– ‘যা গেছে তা যাক’৷ পরবর্তী সময়ে ৫০০ কোটি টাকা আমানতকারীদের মধ্যে বিলি করার জন্য বরাদ্দ করেন৷ মূলত সারদা কোম্পানির সম পরিমাণের আমানতকারীদের মধ্যে এই টাকা বিলি শুরু হয়েছিল৷ ৫০০ কোটি টাকার সংস্থান করার জন্য সেই সময়ে তামাক জাতীয় দ্রব্যের উপর ট্যাক্স চাপিয়েছিলেন, যা আজও চালু আছে৷ সবাইকে টাকা ফেরত দেবেন এই আশ্বাস দিয়ে শ্যামল সেন কমিশন গঠন করেন৷ শ্যামল সেন কমিশন যতদিন কাজ করেছে সেই স্বল্পকালে প্রায় ১৯ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছিল৷ ২০১৪ সালের ৯ মে সুপ্রিম কোটের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে টাকা বিলি বন্ধ করে দেন ও শ্যামল সেন কমিশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ সাধারণ আমানতকারী ও এজেন্টরা দিশেহারা হয়ে আত্মহত্যা করতে শুরু করেন৷ আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যা ৩০০–র অধিক৷ সারা রাজ্যে সাধারণ এজেন্টরা আক্রমণের লক্ষ্য হতে থাকেন৷ হাজার হাজার এজেন্ট আক্রান্ত হন ও তাদের পরিবারও বাদ যায় না৷ অসংখ্য এজেন্টদের বাড়িঘর লুট হয়৷ হাজারে হাজারে এজেন্ট বাড়ি ছাড়া হন৷ সেই সময় রাজ্য সরকার এদের পাশে দাঁড়াননি, কেন্দ্রীয় সরকারও দাঁড়ায়নি৷

কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মাননীয়া মঞ্জুলা চেল্লুর ২০১৬ সালে মাননীয় বিচারপতি শৈলেন্দ্র প্রসাদ তালুকদারের নেতৃত্বে কমিশন গঠন করেন৷ এই কমিশন ও হাইকোর্ট ৪৫টি কোম্পানিকে টাকা ফেরতের নির্দেশ দেয়৷ কোম্পানিগুলির আইনজীবীরা হাইকোর্ট ও কমিশনের রায়কে মান্যতা দিয়ে টাকা ফেরতের অঙ্গীকার করে৷ কিন্তু এই টাকা ফেরতের প্রশ্নে রাজ্য সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও রাজ্য সরকার তা পালন করেনি৷ টাকা ফেরতের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করা দুরস্ত, আন্দোলনরত আমানতকারী ও এজেন্টর সংগঠনের নেতৃত্বের সাথে কথা বলার সময়টুকু দেননি৷

আমানতকারী ও এজেন্টদের সংগঠন চিটফান্ড সাফারার্স ওয়েলফেয়ার কমিটি দাবি তুলেছে কেন্দ্র ও রাজ্যকে দায়িত্ব নিয়ে সমস্ত কোম্পানির আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে, সমস্ত এজেন্টদের নিরাপত্তা দিতে হবে, আত্মহত্যাকারী পরিবারদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সিবিআই ও ইডির তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে, এই কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত সমস্ত দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তি দিতে হবে৷

এই দাবিগুলি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত৷ কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সুকৌশলে তরজার জাল বিস্তার করে এই মূল প্রশ্নগুলিকে আড়াল করছে৷ কারণ এরা সকলেই এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত৷ জনসাধারণ, আমানতকারী ও এজেন্টদের বুঝতে হবে এরা শুধু চিটফান্ডের প্রতারণার সঙ্গেই যুক্ত তা নয়, সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রাতরণা করছে জনগণের সঙ্গে৷ একটু খুঁটিয়ে বিচার করলে যে কেউ বুঝবেন এদের শাসন কীভাবে প্রতারণার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত৷ যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা শোষণ, বঞ্চনা, প্রতারণার সূতিকাগৃহ তার পৃষ্ঠপোষক–রক্ষক এরা৷ ফলে এদের প্রত্যেকটি ভূমিকা প্রতারণামূলক৷ এদের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন হয়ে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে৷ তা না হলে এমন প্রতারণা চলতেই থাকবে৷ মোদি–মমতার তরজায় না ভুলে জনস্বার্থ কোন পথে এটিই আজ জরুরি প্রশ্ন৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ২৭ সংখ্যা)