চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কুৎসা বিজেপির

ফাইল চিত্র

বলির পাঁঠা ডাক্তার। দশচক্রে ভগবান ভূতের মতো অবস্থা, রাজ্যের ডাক্তারদেরও। এবারের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি একটি ভিডিও প্রচার করছে। তাতে নানা জনের বয়ানে শোনানো হচ্ছে, এ রাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসক থেকে শুরু করে ওয়ার্ড বয় পর্যন্ত সকলেই ঘুষ নেওয়ার মাস্টার। তাদেরকে তোলাবাজ, দুর্নীতিপরায়ণ, পিশাচ ইত্যাদি নানা বিশেষণে ঘৃণা উগরে দেওয়া হচ্ছে।

এ কথা ঠিক, হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে রাজ্যের মানুষ নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। এর কারণ চিকিৎসার পরিকাঠামোগত অভাব। একটা জরুরি পরীক্ষা করাতে গিয়ে যদি দেখা যায় তারিখ মিলল কয়েক মাস পরে, অথচ কিছু টাকা ঘুষ দিলেই জলদি হয়ে যায় তা হলে ক্ষোভ তো হবেই। এর জন্য কে দায়ী? যিনি ঘুষ নিয়ে পিছন দরজা দিয়ে কাজটা করে দিলেন, তিনি তো সরাসরি দায়ী। কিন্তু কয়েক মাস পরে পরীক্ষার তারিখ পড়ল কেন? কেন দিনের পরীক্ষা দিনে হচ্ছে না? এর কারণ কী? এর কারণ হল ল্যাবরেটরির অভাব, যারা পরীক্ষা করবেন, সেই স্টাফের অভাব, অভাব ডাক্তারদের। এগুলি পূর্ণ করার দায় কার? ডাক্তার নার্সরা কি এই পরিকাঠামো গড়ার দায়িত্বে, না তা গড়ার দায়িত্ব সরকারের? সরকার এই দায়িত্ব পালন তো করছেই না, বাড়তি সমস্যা হল দুর্নীতিচক্র চলছে নানা রাজ্যে এবং কেন্দ্রের শাসকদলের প্রভাবশালীদের মদতেই।

একটি পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যাক। দেশের ৯২ শতাংশ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৮৮ শতাংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৮৭ শতাংশ ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসার পরিকাঠামো ইন্ডিয়ান পাবলিক হেল্থ স্ট্যান্ডার্ডস-এর নিচে অবস্থান করছে। সরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা প্রতি হাজার মানুষ প্রতি থাকার কথা ন্যূনতম তিনটি, সেখানে রয়েছে ০.৭ অর্থাৎ ১-এর কম। এই ঘাটতি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার পূরণ করে না বলে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অর্থের জোরে অন্যদের বঞ্চিত করে পিছন দরজা দিয়ে সুবিধা নেন। এর জন্য ডাক্তার নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের একতরফা দায়ী করলে সরকারের অপদার্থতা আড়াল করা হয়।

সার্ভিস উক্টরস ফোরাম ও মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেন সরকারি হাসপাতালকে এমন দুয়োরানী করে রাখা? কারণ, বেসরকারিকরণ, নার্সিংহোমের ব্যবসা বাড়াতেই সরকারের এই অবস্থান। আসল কারণ ঢাকতেই বিজেপি ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে লোক খ্যাপাতে চাইছে।