ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা ও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাঁধ মেরামতি, ত্রাণ এবং চিকিৎসার দাবি করল এসইউসিআই(সি)

২৩ মে দক্ষিন ২৪ পরগণার বিভিন্ন এলাকায় নদীবাঁধগুলি পরিদর্শন করেন রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য এবং জয়নগর কেন্দ্রের পূর্বতন সাংসদ কমরেড তরুণ মণ্ডল

এসইউসিআই(সি)-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ২১ মে এক বিবৃতিতে বলেন,

একদিকে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ, দীর্ঘদিনের লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিক সংকট এবং তার উপর গতকালের বিধবংসী আমফানের তাণ্ডবে দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং কলকাতা-হাওড়া সহ গোটা রাজ্যে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এক কথায় ভয়ঙ্কর। আমরা এই অবস্থাকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ হিসেবে ঘোষণা করে অবিলম্বে যথোপযুক্ত অর্থ সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি করছি। রাজ্য সরকারকেও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সমস্ত রকম ত্রাণকার্যে এগিয়ে আসার দাবি করছি। সেক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, এগারো বছর পার হয়ে গেলেও সরকারি গড়িমসিতে আয়লার ক্ষতচিহ্ন আজও পুরোপুরি মেরামত হয়নি।

আমফান ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ জানতে সময় লাগবে এ কথা ঠিক। কিন্তু এখনই চোখের সামনে যা দেখা যাচ্ছে, তা হল– দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় একটিও মাটির ঘর আর টিকে নেই। অন্যান্য বাড়িগুলির অ্যাসবেসটাস, টিন ও টালির চাল উড়ে গিয়েছে। ছোট-বড় প্রায় সব গাছ উপড়ে পড়েছে রাস্তায়। সমস্ত পান বরজ মাটিতে মিশে একাকার। বিস্তীর্ণ এলাকায় একের পর এক নদী বাঁধ ভেঙে ঘর, বাডি, ধানসহ মাঠের অন্যান্য ফসল, রাস্তাঘাট জলের তলায় পুরোপুরি ডুবে গিয়েছে। অন্যান্য জেলাতেও ঘরবাড়ি সহ নানা ধরনের চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানির সংখ্যা ঠিক কত, তা এখনও জানা যাচ্ছে না। ভরা কোটাল চলছে, ফলে জল আরও বাড়বে এই আশঙ্কায় প্রমাদ গুনছেন বিপন্ন মানুষ। কোথাও কোনও বিদ্যুৎ যোগাযোগ নেই। ফোন-ইন্টারনেটের যোগাযোগও নেই। এলাকাগুলি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। কিছু জায়গায় সরকারি উদ্যোগে আশ্রয় শিবির হয়ে থাকলেও বিপন্ন মানুষের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে কোথাও কোথাও জোর করেই স্কুল বিল্ডিংয়ের তালা খুলে বিপন্ন মানুষকে রাখতে বাধ্য হয়েছে। তা না হলে আরও অনেক প্রাণহানি ঘটত।

আমরা মনে করি, কালবিলম্ব না করেই ভেঙে যাওয়া সমস্ত নদীবাঁধ দুর্যোগ মোকাবিলার উপযোগী উঁচু কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে তৈরি করার জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আশ্রয় শিবিরগুলোতে যোগাযোগের জন্য রাস্তাগুলি থেকে পড়ে যাওয়া গাছ সরাতে হবে। এবং পরিবহণকে সচল রেখে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় জল সরবরাহ করতে হবে।

তৃতীয়ত, রাজ্য সরকারকে দ্রুততার সঙ্গে ডেঙ্গি-কলেরা ইত্যাদি প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। সাথে সাথে আশ্রয় শিবিরগুলিতে একত্রিতভাবে থাকার ফলে করোনা আক্রমণের সম্ভাবনাকে মোকাবিলা করার জন্য শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাও মাস টেস্টিং-এরব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চতুর্থত, বর্তমান এই বিপজ্জনক সময়ে দল-মত বা ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে বিপন্ন সকল মানুষের সর্বব্যাপক সহযোগিতার জন্য আমরা রাজ্য সরকারের কাছে দ্রুত সর্বদলীয় সভা ডাকার আবেদন জানাচ্ছি। সাথে সাথে আমরা দলের পক্ষ থেকে ত্রাণকার্য চালানোর পাশাপাশি সকল রকমের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছি।

আমরা এ কথা পরিষ্কার বলতে চাই, যে কেন্দ্রীয় সরকার মূর্তি নির্মাণে, মন্ত্রী-এমপিদের বেতন ভাতা বৃদ্ধিতে, দিল্লিতে নতুন নতুন অট্টালিকা নির্মাণে, পুঁজিপতিদের কর মকুব সহ অন্যান্য সাহায্য দানে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজকীয় সংবর্ধনায় কয়েক লক্ষ কোটি টাকা অপচয় করতে পারে, সেই সরকার যদি পশ্চিমবঙ্গবাসীর এই চরম সংকটে উপযুক্ত সাহায্য দানে অবহেলা করে এবং এই অবস্থাতেও কৌশলে নির্বাচনী রাজনীতির ফয়দা তোলার চেষ্টা করে, তাহলে সেটা একটা গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।