Breaking News

গণবিক্ষোভে উত্তাল হন্ডুরাস

প্রেসিডেন্ট জুয়ান ওর্লান্ডো হার্নান্ডেজ সরকারের জনস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল হন্ডুরাস, গত ৩০ ও ৩১ মে৷ মধ্য আমেরিকার এই ছোট দেশটি জুড়ে জাতীয় সড়কগুলি অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা৷ তাদের দাবি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার যে ছক কষছে হার্নান্ডেজ সরকার, তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে৷ এই দুই ক্ষেত্রের মোট ১৮টি সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন জোটবদ্ধ হয়ে তৈরি করেছে ‘প্ল্যাটফর্ম ফর দি ডিফেন্স অফ হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন’৷ সংগঠনের আহ্বানে মে মাসের শেষ দু’দিন বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে হন্ডুরাস৷ ভোটে ব্যাপক জুয়াচুরি করে ক্ষমতায় বসা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে ওঠা স্লোগানে মুখরিত হয় আকাশ৷

বিক্ষোভকারীদের উপর ব্যাপক পুলিশি হামলা চালায় সরকার৷ বহু জায়গাতেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালায় পুলিশ৷ প্রতিবাদরত এক শিক্ষক গুলিতে গুরুতর আহত হন৷ ৩০ মে হন্ডুরাসের রাজধানী শহর টেগুসিগাল্পাতে পেশাগত পোশাকে সজ্জিত হাজার হাজার ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, ছাত্র ও শিক্ষকদের সমবেত বিক্ষোভে গোটা শহর স্তব্ধ হয়ে যায়৷ বিক্ষোভকারীরা এয়ারপোর্টে ঢোকার রাস্তা পাথর ও বালি ফেলে অবরোধ করেন৷ পুলিশ রবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুঁড়লে বিক্ষোভকারীরা টিয়ার গ্যাসের শেল এয়ারপোর্টের দিকে তাক করে ছুঁড়তে থাকে৷ অপেক্ষারত যাত্রীদের ভিতরে নিয়ে যেতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ, ফলে বেশ কয়েকটি উড়ান বাতিল হয়৷

এমনিতেই হন্ডুরাসের সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার হাল খুব খারাপ৷ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও পরীক্ষা–নিরীক্ষা সংক্রান্ত পরিষেবার ব্যাপক অভাব৷ হাসপাতাল–বাড়িগুলি দেখভালের অভাবে জীর্ণ৷ সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা মিললেও ওষুধপত্র প্রায়শই বাইরে থেকে দাম দিয়ে কিনতে হয়৷ সরকারি শিক্ষাব্যবস্থারও বেহাল দশা৷ ২০০৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দক্ষিণপন্থী শাসকরা ক্ষমতায় বসার পর থেকে সরকারি ক্ষেত্রগুলির আরও অবনতি হয়েছে৷ ক্ষমতাসীন সরকারগুলি হন্ডুরাসের প্রাকৃতিক সম্পদ অবাধে লুটে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বেসরকারি মালিকদের৷

এসবের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন চলছে হন্ডুরাসে৷ গত এপ্রিলে সেখানকার সংসদ জাতীয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংক্রান্ত একটি আইন পাশ করে৷ আইনটিতে এই দুই ক্ষেত্র নিয়ে বেসরকারি মালিকদের ব্যবসা করার ঢালাও সুযোগ করে দেওয়া হয়৷ বহু পদ বিলোপের কথা বলা হয় আইনটিতে৷ এর বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রবল বিক্ষোভ হয়৷ স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসক সহ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ দেখান৷ শেষ পর্যন্ত আইনটি প্রত্যাহারে বাধ্য হয় হার্নান্ডেজ সরকার৷ যদিও এর পরে অন্য কৌশলে নতুন করে শিক্ষা–স্বাস্থ্যে বেসরকারিকরণ আনার চেষ্টা চালায় সরকার৷ এর বিরুদ্ধেই বর্তমানে আবার পথে নেমেছেন দেশের মানুষ৷ আন্দোলনকারীদের সংগঠন ‘প্ল্যাটফর্ম ফর দি ডিফেন্স অফ হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন’ দাবি তুলেছে, আইএমএফ–এর মতো সাম্রাজ্যবাদী আর্থিক সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তির শর্ত মেনে সরকারি ক্ষেত্রগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া চলবে না৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা)