ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে বড় কিছু দেখে এলাম

আগ্রহটা নিজের৷ ঘর থেকে ইচ্ছের ডালপালা দলের অফিসে পৌঁছে গেল৷ অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে অফিস থেকে ফোন! কলকাতায় এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) বছরব্যাপী নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ পালন করছে৷ ১৭ নভেম্বর সমাপনী সমাবেশে অংশ নিতে চাইলে যেতে পারি৷ আমি যদিও এখন কোনও অ্যাক্টিভিস্ট নই, কিন্তু বাম রাজনীতির গতি প্রবাহ আমাকে এখনও আলোড়িত করে৷ শুনেছি লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ ঘটবে কলকাতায়৷ মহাসমাবেশ দেখার আগ্রহটা ছিল স্বাভাবিক৷

দুনিয়ার দেশে দেশে সকলেই জানে গত শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে সৃজনশীল ঘটনার নাম নভেম্বর বিপ্লব৷ প্রায় প্রতিটি দেশে শতবর্ষ পালিত হচ্ছে৷ বাংলাদেশে জাতীয় কমিটি গঠন করে এই দিনটি ৭ নভেম্বর উদযাপন করেছিল৷

ভারতের মাটিতে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) পার্টির উদ্যোগে একটি বড় সমাবেশ প্রত্যক্ষ করার জন্য অন্যদের সাথে রওনা হলাম ১৫ নভেম্বর৷ ১৪ নভেম্বর ছিল খটখটে রোদ৷ ট্রেনে যাত্রা করতেই দু’এক ফোঁটা বৃষ্টি ঝরে পড়তে শুরু করল৷ ট্রেন যত এগিয়ে চলছে বৃষ্টির তীব্রতা ততই ট্রেনের গতির সাথে তাল মিলিয়ে জোরেশোরে বেড়ে চলেছে৷ মাঝে মাঝে বৃষ্টি থামছে আবার ঝির ঝির করে নামছে৷ বৃষ্টির আচরণ– যেন স্টেশনে বিরতি দিয়ে আবার ছুটে চলার মতো ব্যাপার৷

পৌঁছতেই, স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা গাড়িতে উঠতে গিয়ে খানিক ভিজে গেলাম৷ তখনও মনে হয়নি এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আরও দু’দিন চলবে৷ কলকাতার কমরেডরা জানালেন, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এই দুর্যোগ আরও দু’দিন প্রলম্বিত হবে৷ সমাবেশ স্থল কাদাজলে একাকার৷ সমাবেশের স্থান সম্ভবত পরিবর্তন করতে হবে৷ সভামঞ্চের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না৷ ভেতরে ভেতরে প্রকৃতির অনিশ্চয়তার ভাব–বেদনা আমাদের সাথে একটু শেয়ার করলেন৷ এই মৌসুমে এমন বৃষ্টি সত্যিই মন থেকে মেনে নেওয়া যায় না৷

বৃষ্টির মধ্যেই এক অভূতপূর্ব ঘটনার জন্ম দিলেন তাঁরা৷ রাতারাতি সভার স্থান পরিবর্তন করে মাঠের বদলে রাস্তায় সভামঞ্চ প্রস্তুত করা হল৷ সভাস্থলে ভারতের নানা ভাষা–ভাষী মানুষের ঢল নামতে শুরু করল৷ অসংখ্য মানুষের ভিড়ে রাস্তার প্রান্ত সীমা হারিয়ে গেছে৷ অনেকের হাতে ছাতা৷ যারা ছাতা নিয়ে আসেননি, কোনও রকমে পলিথিন অথবা গামছা দিয়ে বৃষ্টি সামলাচ্ছেন৷ বৃষ্টি উপেক্ষা করে, তরুণ–যুবা–বৃদ্ধ–নারী-পুরুষের দল প্রায় সমস্ত দিন গভীর মনোযোগে বক্তব্য শুনলেন৷

সে দিন আকাশে সূর্য ছিল না, কিন্তু হাজার হাজার মানুষের দীপ্তিময় মুখ রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে আলো ছড়াচ্ছিল৷ যেন তাঁরা সম্ভাবনার সূর্য হাতের মুঠোতে পুরলেন৷ এ এক অভাবনীয় দৃশ্য৷ আবহাওয়া বৈরী না হলে তাঁদের এ সঞ্জীবনী অমিত শক্তি আর সামর্থ্য হয়তো সাদা চোখে ধরা পড়ত না৷ অদম্য জনস্রোত সফল করে তুলল মহা সমাবেশ৷

পৃথিবীতে সর্বহারা শ্রেণির মুক্তি সংগ্রামে এই সমাবেশ আশা জাগাবে৷ নভেম্বর বিপ্লবের তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ুক দুনিয়া জুড়ে৷

শ্রমিক শ্রেণির জয় অনিবার্য৷

মাহমুদুল হক আরিফ, বাংলাদেশ