কার্ডের গেরো

আজ মানুষ রাজ্য সরকারের রেশন কার্ড এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আধার কার্ড – দু’টি কার্ডের জন্য বিপন্ন৷ আধার কার্ডটি দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার তৈরি করেছিল গ্যাসের ভর্তুকির যাতে অপব্যবহার না হয় সে কথা বলে৷ কিন্তু এই কার্ড নিয়ে বিস্তর অভিযোগ৷ প্রথমে যাঁদের কার্ডগুলি এসেছিল তাতে ছিল শুধু ইয়ার অফ বার্থ বা জন্মবর্ষ৷ কিন্তু বর্তমানে সরকার চাইছে ডেট অফ বার্থ বা জন্ম তারিখ৷ শুধু সেটাই নয়, চাইছে মোবাইল নম্বর যা মানুষের নিতান্তই ব্যক্তিগত৷ মানুষ এই সমস্ত তথ্য প্রদানের জন্য দিশাহারা৷ প্রথমদিকে কিছু বেসরকারি সংস্থা অর্থের বিনিময়ে অনলাইনে সংশোধন করছিল নানা অসঙ্গতি৷ কিন্তু এখানে দেখা দিল আর এক বিপদ৷ একইব্যক্তির চার রকম নামে চারটে ভিন্ন নম্বরের আধার কার্ড৷ তারপর সেই সমস্ত কেন্দ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায়৷ বর্তমানে কোথায় কীভাবে এর সংশোধন হবে তা মানুষের জানা নেই৷ এখানে লাখ লাখ টাকা খরচ করে আধার কার্ড নিয়ে মোদিবাবুর বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়৷ কিন্তু সংশোধন কীভাবে হবে তার প্রচার হয় না৷ এই প্রক্রিয়াটি একটি বিশাল প্রক্রিয়া৷ রোজই কিছু মানুষ জন্মায় আবার কিছু মরে৷ তাই সুষ্ঠু ভাবে আধার কাজ পরিচালনার জন্য প্রত্যেক থানা এলাকায় সরকারের নিজস্ব একটি স্থায়ী অফিস থাকা অতি অবশ্যই প্রয়োজন৷

অন্যদিকে, রাজ্যের ডিজিটাল রেশন কার্ড যেন ভুলে ভরা পৃথিবী৷ ছেলের নাম রামানন্দ সেনগুপ্ত, বাবার নাম এ দে৷ আমাদের এখানে একজন প্রথিতযশা ডাক্তার পেয়েছেন অন্ত্যোদয় অন্নপূর্ণা যোজনার কার্ড৷ উনি তাঁর কার্ডগুলি নিয়ে নিকটস্থ আধিকারিকের কাছে যান এবং প্রশ্ন করেন ডাঃ কথাটি লিখলেন, আর দিলেন এএওয়াই কার্ড? অথচ আমার বাড়ির ঠিকে কাজ করা মহিলাটি পেয়েছেন আরকেএসওয়াই–২ (এপিএল) কার্ড৷ প্রচুর অসংগঠিত শ্রমিক, দিন মজুরের পরিবার আজও কার্ড পায়নি৷ সরকারি ভুলে তারা আজ খাদ্য সুরক্ষা আইনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত৷ প্রসঙ্গত বলি, এ বিষয়ে প্রথম মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছিল লোকাল মিউনিসিপ্যালিটি বা পঞ্চায়েত৷ পরে লোকাল রেশন অফিসে কার্ড তৈরি হয়েছে ডি সি জি বা প্রধান কার্যালয়ে৷ আর সেই সমস্ত কার্ড জনগণের হাতে আসে স্থানীয় জন প্রতিনিধির মাধ্যমে৷ আমার প্রশ্ন এই পদ্ধতি কি সঠিক? কার্ড না পাওয়া জনগণ কার মাধ্যমে তাদের কার্ড সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পাবে? 

অভিজিৎ মান্না,

বেলুড়, হাওড়া

(৭১ বর্ষ ৪ সংখ্যা ২৪ আগস্ট, ২০১৮)