কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা থেকে

‘‘যে বিপ্লবী হওয়ার জন্য সংগ্রাম করবে, নিজের রাজনৈতিক চেতনা বাড়ানো, নিজের চরিত্রকে সেই অনুযায়ী করে গড়ে তোলা এবং নিজের ওয়ার্কিং স্টাইল জনতার মধ্যে থেকে কন্টিনিউয়াসলি ইমপ্রুভ করার জন্য ক্রমাগত কাজ, রাজনৈতিক চর্চা, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে ইমপ্রুভ করবার চেষ্টা করবে, তাকে নেতৃত্ব দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে দল সাহায্য করতে পারে। কিন্তু দল গাইডেন্স দিক, পরামর্শ দিক, যা কিছু করুক, যে কর্মী কাজের মধ্যে নিজেকে একাত্ম করে বিপ্লবী সংগ্রাম এবং জনগণের মধ্যে নিবিষ্টভাবে ঢুকল না– পার্টি তাকে সাহায্য করলেও সে গড়ে উঠবে না। জনগণের সাথে থেকে লড়তে লড়তে কোনও কোনও কর্মী পার্টির সাথে একাত্ম হয়ে পড়ে। আবার অনেক সময় দেখা যায় কেউ জনগণকে নিয়ে লড়ছে, কিন্তু শেষপর্যন্ত পার্টির সাথে একাত্ম হতে পারছে না। এ রকম ক্ষেত্রে কিন্তু জনগণের সঙ্গে লড়েও কিছু লাভ হয় না, কিছু দিন লডে, তারপর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একে জনতার মধ্যে থাকা এবং জনগণের একজন হওয়া বা নেতা হওয়া বোঝায় না। যেমন, একজন প্রশ্ন করেছেন জনগণের নেতা হওয়া বলতে কী বোঝায়?

নেতা হওয়া বলতে বোঝায়, জনগণ আমাকে রাজনীতি, চরিত্র, কর্মক্ষমতা, পরিকল্পনা প্রভৃতি প্রশ্নে নেতার ভূমিকায় পাবে। তারা আমাকে ছাড়তে চাইলেও অ্যাভয়েড করতে চাইলেও আমি তাদের ছাড়ছি না। আমাদের দেশে যে প্রবাদ আছে, হিন্দুস্থানী প্রবাদ– কমলি নেহি ছোড়তা, আমি ছেড়ে দিতে চাইলেও কমলি ছাড়ে না, সে ধরে বসে থাকে। হোক তারা দশটা লোক, হোক তারা ছোট একটা কারখানার কয়েকজন মজুর, হোক তারা কোনও একটা গ্রামের কিছু চাষি, বা কোনও একটা এলাকার অল্প কিছু লোক অথবা কোনও একটা পাড়ার অল্প কিছু যুবক, কিছু পাবলিক, কিছু ওয়ার্কার যাদের সঙ্গে আমার শুধু বন্ধুত্ব নয়, এমন একটা ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট আছে, যাদের সমস্ত কাজে আমাকে দরকার এবং তারা আমাকে নিজেদের লোক বলে মনে করে। আবার একই সাথে তাদের চেয়ে সুপিরিয়র বলে মনে করে। কখনও প্রথম প্রথম সমালোচনাও করে, হয়তো বিদ্রুপও করে, আবার আমার প্রভাবটাকে অস্বীকারও করতে পারছে না, কারণ আমি অস্বীকার করতে দিচ্ছি না। যখন আমি তাদের যথার্থ নেতা হয়ে গেলাম, তখন তাদের কাছ থেকে ভালবাসা পেলাম, শ্রদ্ধা পেলাম। বাস্তবে তখন আর কিন্তু তারা বিদ্রুপও করে না, সমালোচনাও করে না। তারা তখন আমাকে মেনে চলে। এই যে সমালোচনা-বিদ্রুপের স্তরটি এটা হচ্ছে আমার নেতা হওয়ার সংগ্রামের স্তর। আমার নেতা হওয়ার সংগ্রামের পথটায় ট্রানজিশনাল ফেজ, অন্তর্বর্তী সময়। রেভলিউশনারি ক্যাডারদের মাস সম্বন্ধে এই দৃষ্টিভঙ্গি হবে। নেতৃত্ব বলতে আমি এটাকে বলছি।”

‘বিপ্লবী জীবনই সর্বাপেক্ষা মর্যাদাময়’ বই থেকে